করোনায় গর্ভবতীদের সুরক্ষা
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১৯ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২১ | আপডেট: ০৯:৩৬ এএম, ১৯ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় ওমিক্রন সংক্রমণের হার বেড়েছে। এমনকি আমাদের পাশের দেশ ভারতেও ওমিক্রন রোগী শনাক্ত হয়েছে। এতে আতঙ্কিত না হয়ে বরং সতর্কতা ও সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। বেশি সতর্ক ও সাবধান থাকতে হবে বয়স্ক মানুষ ও গর্ভবতীদের।
কভিড সংক্রমণ গর্ভবতীদের জন্য ভয়াবহ কেন?
কভিড সংক্রমণ থেকে রক্ষার একমাত্র উপায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি। গর্ভকালীন নারীদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে কমে যায়। যে কারণে অল্পতেই বিভিন্ন ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ কারণে গর্ভবতীরা কভিড সংক্রমণের ঝুঁকিতে থাকে বেশি। বেশ কিছু কভিড আক্রান্ত গর্ভবতীর ক্ষেত্রে দেখা গেছে অল্প লক্ষণ থেকে শুরু করে ধীরে ধীরে তীব্র লক্ষণ ও শ্বাসকষ্টে ভুগেছে। এমনকি অনেক কভিড আক্রান্ত গর্ভবতীর মৃত্যুও হয়েছে।
কী কী সমস্যা হতে পারে
বিভিন্ন সময়ে কভিড আক্রান্ত গর্ভবতীদের বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে।
♦ প্রথম তিন মাসের ভেতরে যদি কভিড সংক্রমণ হয় সে ক্ষেত্রে মায়েদের গর্ভপাত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
♦ প্রথম তিন মাসের ভেতরে মায়েদের কভিড সংক্রমণ হলে তীব্র লক্ষণ বা শ্বাসকষ্ট দেখা দেওয়ার আশঙ্কা প্রবল।
♦ গর্ভকালীন দ্বিতীয় তিন মাসের ক্ষেত্রে গর্ভের সন্তান মারা যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটতে পারে।
♦ গর্ভকালীন দ্বিতীয় তিন মাসের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণজনিত কারণে গর্ভবতী মায়েদের মৃত্যু হতে পারে। এ সময় তাদের তীব্র লক্ষণ প্রকাশ পেলে শ্বাসকষ্ট ও রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা ভীষণভাবেই কমে যেতে পারে।
♦ যারা আগে থেকেই শ্বাসকষ্টের সমস্যায় ভুগছে তাদের ক্ষেত্রে কভিড আক্রান্ত হলে শ্বাসকষ্ট আরো বেড়ে যেতে পারে।
♦ আগে থেকেই যাদের হৃদরোগ রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে কভিড আক্রান্ত হলে হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা বেড়ে যায়।
♦ গর্ভবতী মায়েদের শেষ তিন মাসে বা গর্ভকালীন সময়ের শেষ দিকে কভিড আক্রান্ত হলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতে পারে। এসবের মধ্যে অন্যতম শ্বাসকষ্ট, জ্বর, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ ও খিঁচুনি। রক্তক্ষরণজনিত কারণে গর্ভের সন্তান মারা যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটতে পারে।
♦ কভিড আক্রান্ত গর্ভবতী মায়েদের যদি সিজারিয়ান অপারেশনের দরকার হয় সে ক্ষেত্রে অপারেশন-পরবর্তী বেশ কিছু জটিলতা দেখা দিতে পারে। তাদের মধ্যে অন্যতম এম্বোলিজম সমস্যা। এই সমস্যায় শরীরের বিভিন্ন অংশে রক্ত জমাট বাঁধার মতো ঘটনা ঘটে এবং পরবর্তী সময়ে এ ধরনের রোগী বাঁচানো খুবই কঠিন হয়ে পড়ে। কভিড আক্রান্ত গর্ভবতী মায়েদের সিজারিয়ান অপারেশনের সময় বেশি পরিমাণ রক্তক্ষরণ হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
♦ কভিড সংক্রমিত গর্ভবতী মায়েদের ক্ষেত্রে এমনও দেখা গেছে যে খুব কম লক্ষণ প্রকাশ পাচ্ছে, অথচ ফুসফুসের সিটি স্ক্যান করার পরে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশেরও বেশি ইনফেকশন বা সংক্রমণ পাওয়া গেছে। এ ধরনের রোগীর সাময়িক উন্নতি হলেও পরবর্তী সময়ে তারা প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট ও অক্সিজেন স্বল্পতায় ভুগতে পারে।
এ সময়ে গর্ভবতীদের করণীয়
♦ ওমিক্রন যেহেতু করোনাভাইরাসের নতুন ভেরিয়েন্ট এবং এ সম্পর্কে প্রাপ্ত তথ্য পর্যাপ্ত নয়, ভ্যাকসিন কতটা কার্যকর হবে তা এখনো নিশ্চিত নয়। তাই গর্ভবতী মায়েদের এ ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে। ভ্যাকসিন নেওয়ার পাশাপাশি একে প্রতিরোধ করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে।
♦ গর্ভকালীন যেকোনো সময়ের মধ্যে ভ্যাকসিন নেওয়া যাবে। তবে গর্ভকালীন শেষ এক মাসের মধ্যে যেহেতু দুটি ভ্যাকসিন সম্পন্ন করা সম্ভব নয়, সেহেতু শেষ এক মাসে ভ্যাকসিন নেওয়া বন্ধ রাখা যেতে পারে। এ ছাড়া অন্য যেকোনো সময় ভ্যাকসিন নিয়ে নিতে পারবে।
♦ গর্ভবতী মায়েদের গর্ভকালীন যেকোনো সময়ে কভিড সংক্রমণ শনাক্ত হলে যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। যদি বিশেষ কোনো লক্ষণ প্রকাশ নাও বা পায় তার পরও কভিড চিকিৎসা করছেন এ রকম কোনো চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থেকে বাসায় চিকিৎসা নেওয়া যেতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে, ন্যূনতম লক্ষণ প্রকাশ পেলেই যেন হাসপাতালে ভর্তি হওয়া সম্ভব হয়। ন্যূনতম লক্ষণগুলোর মধ্যে হচ্ছে জ্বর, শ্বাসকষ্ট, কাশি, দম বন্ধ হয়ে যাওয়া, বুক ফুলিয়ে শ্বাস নিতে না পারা ও বুকে ব্যথা।
♦ গর্ভবতী মায়েদের গর্ভকালীন কভিড সংক্রমণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গর্ভের সন্তানটি আলট্রাসনোগ্রামের মাধ্যমে ফলোআপ করতে হবে। অন্তত প্রথম দুই সপ্তাহে দুবার আলট্রাসনোগ্রাম করে গর্ভের সন্তানের অবস্থা পরীক্ষা করে নিতে হবে।
♦ করোনাভাইরাস আমাদের শরীরের রক্তের জমাট বাঁধার প্রবণতা বাড়িয়ে দেয়। এ কারণে গর্ভবতী মায়েদের শরীরে ওমিক্রন বা করোনাভাইরাসের যেকোনো স্ট্রেইন শনাক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কভিড বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে রক্ত তরল হওয়ার ওষুধ যথাসম্ভব শুরু করতে হবে।
♦ বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যায় ভোগা গর্ভবতীদের ক্ষেত্রে নিয়মিত প্রয়োজনীয় ওষুধ সেবনের মাধ্যমে তাদের অন্য সমস্যাগুলো বিশেষ করে আ্য্যজমা বা শ্বাসকষ্ট, থাইরয়েড, ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপজনিত সমস্যাগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
♦ অনেক সময় কভিড সংক্রমণের পর আমরা ভীত হয়ে বিভিন্ন রকমের ওষুধ খাওয়া শুরু করে দিই, যা গর্ভবতী মায়েদের ক্ষেত্রে গর্ভের সন্তান নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই এ ক্ষেত্রে কভিড চিকিৎসায় অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা নিতে হবে।
♦ গর্ভবতী মায়েদের সিজারিয়ান অপারেশন দরকার হলে অবশ্যই কভিড চিকিৎসা দিচ্ছে এমন কোনো হাসপাতালের সঙ্গে সংযুক্ত থেকে অপারেশনের ব্যবস্থা করতে হবে। কারণ এসব হাসপাতালে অপারেশনকালীন এবং অপারেশন-পরবর্তী জটিলতা সঠিকভাবে মোকাবেলা করার প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি থাকে।
♦ ওমিক্রন সংক্রমণ চিকিৎসার মাধ্যমে মোকাবেলা করার চেয়ে প্রতিরোধ করার দিকেই সবচেয়ে বেশি জোর দিতে হবে। এ কারণে গর্ভবতী মায়েদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করাই একমাত্র পন্থা। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য সুষম খাবার খেতে হবে। এ ছাড়া যে পদ্ধতিগুলো অবলম্বন করা যেতে পারে সেগুলো হলো—যথাসম্ভব লোকসমাগম এড়িয়ে চলা, বাইরে বের হলে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, মুখে মাস্ক ব্যবহার করা এবং বাইরে থেকে বাসায় ফিরলে পোশাক এবং হাত-মুখ সাবান দিয়ে সঠিক ধুয়ে নেওয়া। গর্ভবতী মায়েদের জীবনসঙ্গীরা যদি বাইরে কাজ করে সে ক্ষেত্রে তাদের স্বাস্থ্য সর্তকতাও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাদেরও বাইরে যাওয়া এবং বাইরে থেকে বাড়ি ফিরে আসার পরে একই ধরনের সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।