avertisements 2

বিবাহবিচ্ছেদ কেন বেড়ে চলেছে!

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১ জানুয়ারী,সোমবার,২০২৪ | আপডেট: ০৭:৩৪ এএম, ২০ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২৪

Text

অস্কারজয়ী ইরানি চলচ্চিত্র ‘আ সেপারেশন’-এর শেষ দৃশ্যটি স্মরণ করা যাক। মা-বাবার বিচ্ছেদ মামলা পারিবারিক আদালতে গড়িয়েছে। শুনানি শেষ। দম্পতির কিশোরী কন্যাকে ডাকলেন বিচারক। বাইরে অপেক্ষমান বিচ্ছেদের রায়-প্রত্যাশী দম্পতির প্রতীক্ষার মুহূর্তগুলো যেন আর কাটে না। ভেতরে বিচারক কন্যাটিকে জিজ্ঞেস করলেন, তার কিছু বলার আছে কি না। কন্যাটির উত্তর - ‘আমাকে কি বলতেই হবে?’ ছবিটির এখানেই সমাপ্তি। কিন্তু দর্শকের কানে সিনেমার শেষ মুহূর্তটির শেষ সংলাপ ‘আমাকে কি বলতেই হবে?’ একটি দম আটকে দেওয়া অনুভুতির জন্ম দিতে পারে।

কারণ, কিশোরীটির একটি উত্তরের পেছনে অসংখ্য উত্তর আছে। ‘হ্যাঁ’, ‘না’, ‘জানি না’, ‘আমার কিছু আসে যায় না’, ‘তাদের সম্পর্ক তারাই বুঝবে’, ‘আমি কী করতে পারি? আমার দায় কেন হবে, ‘আমার কারণেই তাঁরা অসুস্থ সম্পর্ক টিকিয়ে রেখেছেন, এ রকম খোঁটা এবং দায় আমি নিতে যাব কেন’, ‘তাঁরা নিজেদের সম্পর্কের দেখভালেই ব্যর্থ, আমার দেখভালে সফল কীভাবে হবেন?’—এ রকম অসংখ্য সম্ভাব্য উত্তরও হতে পারে। পিতা–মাতার বিচ্ছেদ সন্তানদের অবশ্যই বিপর্যয়কর। প্রাচ্যে বেশি বিপর্যয়কর।

প্রথাগত সমাজবিজ্ঞানে মাদক, যৌতুক, কিশোর অপরাধ ইত্যাদি অনেক কিছুর পাশাপাশি ‘বিবাহবিচ্ছেদ’ও ‘সমস্যা’ হিসেবে তালিকাভুক্ত থাকে। বিষয়টি ছেলেমানুষিপূর্ণ। তার প্রকাশ দেখা যায় বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের উচ্চতর শ্রেণির ছাত্রদের পরীক্ষার খাতাগুলোতেও। তারাও বিবাহবিচ্ছেদের কারণ লেখে ‘মূল্যবোধের অবক্ষয়’, ‘বিদেশি সংস্কৃতির প্রভাব’ ইত্যাদি। বাংলাদেশে বিবাহবিচ্ছেদের কারণ জানার পদ্ধতিটিও ত্রুটিপূর্ণ। বিচ্ছেদের আবেদনপত্রে মান্ধাতা আমলের ‘বনিবনা না হওয়া’, ‘মতের অমিল’, শারীরিক নির্যাতন’, ‘যৌতুক’, ‘শারীরিক অক্ষমতা’, ‘অসুস্থতা’, ‘বিবাহবহির্ভূত অবৈধ সম্পর্ক’ ইত্যাদি গৎবাঁধা কারণ ছাপা থাকে।

কারণ, প্রাচ্যে পরিবারকে ধর্মীয় আদর্শ ও সামাজিক মূল্যবোধের চোখে দেখা হয়। বিভিন্ন পত্রিকায় কয়েকজন সমাজবিজ্ঞানের শিক্ষককে উদ্ধৃত করা হয়েছে, যাঁরা বিবাহবিচ্ছেদের কারণ হিসেবে ‘নৈতিকতার পতন’, ‘মূল্যবোধের অবক্ষয়’, ‘নারী-পুরুষের মনস্তাত্ত্বিক চাপ’ ইত্যাদি নানা রকম মূল্যবোধতাড়িত মতামত দিয়েছেন। বাংলাদেশে সমাজবিজ্ঞানের পাঠক্রমে ‘সামাজিক সমস্যা’ শিরোনামের একটি অধ্যায় এই মূল্যবোধ তাড়নার জন্য কিছুটা হলেও দায়ী।

আবেদনকারী শুধু টিক চিহ্ন দিয়ে যান। বাংলাদেশে বিবাহবিচ্ছেদ বাড়ছে। বিবাহবিচ্ছেদের ৭০ ভাগ আবেদনই এসেছে নারীদের পক্ষ থেকে। করোনাকালে বিচ্ছেদের ঘটনা বেশি ঘটছে। একই প্রতিবেদনে এ কথাও এসেছে যে আসলে করোনার আগেই অর্থাৎ ২০১৯ সালেও প্রতি মাসে গড়ে ৯২০টি তালাকের ঘটনা ঘটেছে। অর্থাৎ করোনার কারণেই যে বেড়েছে, সে রকম দাবি করার সুযোগ কম। নারীরা উদ্যোগী হয়ে বেশি তালাক দিচ্ছেন তথ্যটি কৌতুহলোদ্দীপক, তবে চমকে দেওয়ার মতো নয়। নারীর ক্ষমতায়ন বেড়েছে। আত্মনিয়ন্ত্রণের ও স্বাধীন সিদ্ধান্ত গ্রহণের সক্ষমতা বেড়েছে।

এ কারণে পুরোনো পুরুষতান্ত্রিক পারিবারিক মূল্যবোধের বজ্র-আঁটুনি কাটাতে সাহস করে তাঁরা দুই কদম বেশি স্বপ্রণোদিত হয়েছেন বলে অনুমান করা যায়। বাস্তবতা এই যে বিশ্বায়নের প্রভাবে বাংলাদেশে দাম্পত্য সম্পর্কে জটিলতা বাড়বে, বিবাহবিচ্ছেদও বাড়বে। এই বাস্তবতা অস্বীকার না করে বিবাহবিচ্ছেদের কারণে উদ্ভুত সমস্যাগুলো কীভাবে সমাধান করা যায়, তা নিয়ে ভাবা উচিত। পৃথিবীর অনেক অর্ধশতক আগে থেকেই পরিবার ও শিশুকল্যাণ কর্মসূচি চালু রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে এই এখনো সেভাবে শুরু হয়নি। বিবাহবিচ্ছেদ ‘মহামারির মতো’ বেড়ে যাচ্ছে ভেবে উদ্বিগ্ন না হয়ে বরং পরিবার ও শিশু কল্যাণ কর্মসূচিকে জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গে পরিণত করা দরকার।

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2