গাছের সঙ্গে বাঁধা সাত শিশু কাওছারের জীবন!
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১৫ এপ্রিল,শুক্রবার,২০২২ | আপডেট: ০৫:২৬ এএম, ২৬ জুলাই,শুক্রবার,২০২৪
![Text](/assets/images/bangla katha .com bd_1649997899.jpg)
সাত বছরের শিশু কাওছার। মায়াবী চেহারা, আর ফুটফুটে হাসি মুখে লেগে থাকলেও ৩ বছর ধরে গাছের সঙ্গে বাঁধা পড়েছে তার জীবন! কাওছার যতক্ষণ জেগে থাকে ততক্ষণই তার মা দঁড়ি দিয়ে গাছের সঙ্গে পা দুইটি বেঁধে রাখেন। বাঁধ খুলে রাখলে সে অন্য কোথায়ও চলে যায়, কিংবা ঘরের আসবাবপত্র ভেঙে ফেলে। এমনকি তাকে জামা-প্যান্ট পরালে সেগুলো ছিঁড়ে ফেলে দেয়।
কাওছার ভোলার চরফ্যাশন উপজেলা আমিনাবাদ ইউনিয়ন ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কুলসুম বাগ গ্রামের দরিদ্র কৃষক মো. আব্দুল আজিজ ও স্ত্রী খাদিজা দম্পতির তৃতীয় ছেলে। এই দম্পতি জানান, তাদের তিন ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে কাওছার তৃতীয়। আব্দুল আজিজ কৃষি কাজ করে সংসার চালান। সংসারে অভাব থাকলেও শান্তিতে ছিলেন তারা। কিন্তু গত ৭ বছর আগে জন্মগ্রহণ করেন কাওছার। সুন্দর চেহারা, সঙ্গে ফুটফুটে হাসি মুখে লেগে থাকতো শিশুটির। তিন বছর বয়সেই কথা বলতো সে। তখন শিশুটি উঠানে খেলতে গেলে মধু পোকা কামড় দেয় তার মাথায়। পরে স্থানীয়ভাবে প্রাথমিক চিকিৎসা দিলেও অবস্থার উন্নতি হয়নি। চট্টগ্রাম ও ঢাকার বিভিন্ন চিকিৎসকের কাছে গিয়ে চিকিৎসা করান। কিন্তু ভালো কিছু হয়নি।
শিশুটির চিকিৎসায় তারা প্রায় দেড় লাখ টাকার মতো খরচ করেন। অনেক কষ্টে বিভিন্ন মানুষ ও আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে ধারদেনা করে ছেলের চিকিৎসা খরচ জোগান তারা। কিন্তু তারপরও শিশুটি সুস্থ হয়ে ওঠেনি। তারা আরো জানান, ছেলে কথা বলে না। ঘরে ছেড়ে দিলে মালামাল সব ভেঙে ফেলে, বের হয়ে অনেক দূরে চলে যায়। জামা পরালে ছিঁড়ে ফেলে।
মো. আব্দুল আজিজ বলেন, ‘গত তিন বছর ধইরা ছেলেডারে দঁড়ি দিয়ে বাইন্ধা রাখি। যত সময় সজাগ থাকে তত সময়ই দঁড়ি দিয়া বাইন্ধা রাখি। এত ছোট পোলাডারে বাইন্ধা রাখতে অনেক কষ্ট হয়। তারপরও কি করমু। টাকার লইগা চিকিৎসা করাতে পারি না। ছেলেডার প্রতি মাসে ৬ হাজার টাকার ওষুধ লাগে। কিন্তু টাকার অভাবে দুই মাস ওষুধ খাওয়াইতে পারি নাই। চট্টগ্রামের এক ডাক্তার কইছে কাওছারের ভালো চিকিৎসা করালে আবারও সুস্থ হইবো। এতে দুই লাখ টাকার খরচ হইবো। এতো টাকা কই পামু। কেউ যদি আমাগো গরীবের সাহায্য করে তাইলে ছেলেডার চিকিৎসা করাইয়া সুস্থ করে তুলতে পারতাম। ’ এ জন্য তিনি সমাজের সকল মানুষের কাছে সহযোগিতা চেয়েছেন।
চরফ্যাশন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আল নোমান জানান, বিষয়টি কেউই তাদেরকে অবগত করেননি। এমনকি ছেলেটির বাবা-মাও কখন তার কাছে যাননি। খোঁজ নিয়ে শিশুটির চিকিৎসার জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতার চেষ্টা করা হবে বলে জানান তিনি।