নারীদের বুদ্ধিমত্তা পুরুষদের চাইতে কম বা অর্ধেক! আসলেই কি তাই?
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১৮ সেপ্টেম্বর,শনিবার,২০২১ | আপডেট: ০৯:৩৭ এএম, ১৯ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
অনেকেই ভুল ধারনা করে যে নারীদের বুদ্ধিমত্তা পুরুষদের চাইতে কম বা অর্ধেক। প্রমাণ হিসেবে তারা কুরআনের সেই আয়াতের কথা বলেন যেখানে একজন পুরুষের স্থলে দু’জন নারীর সাক্ষীর কথা বলা আছে।
আসলে এটা খুব বড় একটা মিসআন্ডারস্ট্যান্ডিং। এর উত্তর খুব সহজেই দেয়া যায় শিক্ষাদান এর উদাহরণ দিয়ে। ইতিহাসের কেউ কখনোই বলেনি যে একজন নারীর শিক্ষাদান একজন পুরুষের অর্ধেক। ইতিহাসে কেউ কখনোই কোনকিছু শিখতে হলে একজন পুরুষ শিক্ষকের বদলে দু’জন নারী শিক্ষিকার যায়নি। হাদিসের বর্ননায় নারী কিংবা পুরুষ রাবির মধ্যেও কোনই পার্থক্য নেই। একজন পুরুষ রাবীর বিপরীতে দু’জন মহিলা রাবির প্রয়োজন হয়নি।
একজন মহিলা আলিমের কাছে কুরআন বা হাদিস শেখা ততোটুকুই ভ্যালিড যতটুকু একজন পুরুষ থেকে। এমনকি কখনো কখনো তো পুরুষের চাইতে একজন মহিলার বর্ননাকে বেশী গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। যেমন যোহর নামাযে ফরজের আগে চার রাকাত সুন্নতের বর্ননা শুধু নারী করেছে। আর পুরুষদের বর্ননায় পাওয়া যায় দু’রাকাত সুন্নতের কথা। কিন্তু ইমাম আবু হানিফার মতে এখানে হাদিসের ক্ষেত্রে নারী বর্ননাকারী রাসুলের (সঃ) স্ত্রী উম্মে হাবিবা (রাঃ)-কে পুরুষ বর্ননাকারীদের থেকে প্রাধান্য দেয়া হবে। কারণ রাসুল (সঃ) ঘরে কয় রাকাত সুন্নত পড়তেন তা তাঁর স্ত্রী ছাড়া আর কেউ ভালো বলতে পারবে না।
এভাবে শতশত হাদিস আছে যার বর্ননাকারী নারী। কেউ কখনোই বলেনি এসব হাদিসের জন্য সাপোর্ট প্রয়োজন। ইসলামের দৃষ্টিতে একজন নারীর বুদ্ধি পুরুষের চাইতে কম নয়, নারী চিন্তাবিদ পুরুষ চিন্তাবিদের অনুরুপ, নারী ঠিক সেভাবেই ফতোয়া দিতে পারবে যেভাবে একজন পুরুষ দিতে পারবে। তাহলে প্রশ্ন হলো, কুরআনের এই আয়াতের অর্থ কী?
“…চুক্তির সময় তোমাদের মধ্যে থেকে দু’জন পুরুষকে সাক্ষী রাখবে। দু’জন পুরুষ পাওয়া না-গেলে তোমাদের সম্মতিতে সাক্ষীদের মধ্যে একজন পুরুষ ও দু’জন নারীকে সাক্ষী রাখতে পারো; যাতে একজন নারী ভুল করলে অন্যজন মনে করিয়ে দিতে পারে।…” (সুরা বাকারা, আয়াত ২৮২)
এখানে নারীর বুদ্ধি কোথাও পুরুষের চাইতে কম বলা হয়নি। আয়াতটির পরবর্তি অংশ পড়লে বোঝা যায় এরকম অবস্থায় একজন একা নারী অন্যদের দ্বারা ইনফ্লুয়েন্সড হতে পারা অসম্ভব নয়, বরং সেটা হওয়াই স্বাভাবিক। নারীদেরকে কোমল, মায়া-মমতা, আর বেশী দয়া দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে। এসব কারণে সাক্ষী প্রদানের সময় তাদের অন্তরে একজনের প্রতি মায়া জন্মাতে পারে।
তাছাড়া অনেক সময় এমন হয় যার বিরুদ্ধে সাক্ষী দেয়া হবে সে কোনভাবে সেই নারীকে ইমোশনালি কিংবা ভয় দেখানোর মাধ্যমে ইনফ্লুয়েন্স করার চেষ্টা করতে পারে। তখন একজন নারীর সাথে আরেকজন থাকলে একজন আরেকজনকে সাপোর্ট দিতে পারবে। একজনের মনে একটু দয়া জাগলে অন্যজন তাকে শুধরাতে পারবে।
আরেকটা বিষয় লক্ষনীয়, তা হলো একজন পুরুষের বিপরীতে দু’জন নারীর সাক্ষ্যর ব্যাপারটা শুধুমাত্র অর্থনৈতিক চুক্তির সাথে সম্পর্কিত। অন্য কোন ক্ষেত্রে দু’জন নারীর সাক্ষ্যর কথা কুরআনে বলা হয়নি।