ছেলেদের চাইতে মেয়েরাই বৃদ্ধ পিতা-মাতার সেবাযত্ন বেশি করেন!
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১৮ জুলাই,রবিবার,২০২১ | আপডেট: ০৭:৫১ পিএম, ২১ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
সরকারি চাকুরে মতিন সাহেবের ৫ কন্যা। জ্যোতি, রতি, নীতি, মিতি আর ইতি। ছোট মেয়ের নাম ইতি রাখার কারণ হচ্ছে- তিনি চাচ্ছেন বিষয়টাতে ইতি টানার। চেষ্টা করে যাচ্ছেন একটা ছেলে সন্তানের জন্য। বয়স হচ্ছে। শেষ বয়সে দেখার মতো কেউ না থাকলে বিষয়টা খুবি মন্দ হবে। মেয়েরাতো চলে যাবে পরের বাড়ি। বৃদ্ধ বয়সে তাকে আর তার স্ত্রীকে দেখবে কে?
আমরা জানি, কেবল মতিন সাহেবই নন। মতিন সাহেবের মতো আরো অনেকে এই রকম চিন্তা মাথায় লালন করেন। চিন্তাটা শুধু লালন করার মধ্যেই যদি সীমাবদ্ধ রাখা হতো তবু ব্যাপারটা সহনীয় মাত্রায় হয়তো থাকতো। কিন্তু ব্যাপারটা আরো মন্দের দিকে যায় যখন পিতা-মাতা’র এই চিন্তা তাদের কন্যা সন্তানটির সাথে আচরণেও প্রভাব ফেলে। আর কন্যা শিশুটি বেড়ে ওঠে একটা অসাম্য পরিবেশের ভেতর দিয়ে মানসিক পীড়ন সহ্য করে।
যারা বিশ্বাস করেন, শুধু আপনার পুত্রধনই আপনাকে বৃদ্ধ বয়সে নিরাপত্তা দেবে, দেবে সেবা। তাদের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে, শ্রদ্ধেয়, আপনার ধারণাটিকে ভুল প্রমাণিত করেছে ‘আমেরিকান স্যোসিওলোজিক্যাল এসোসিয়েশন’। তারা মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য ও অবসর গবেষণা বিভাগের মাধ্যমে ৫০ উর্ধ্ব ২৬,০০০ লোকের উপর স্টাডি করে যে তথ্য পায়, তা হলো- একটা মেয়ে মাসে ১২.৩ ঘন্টা সময় দেয় তার বৃদ্ধ বাবা-মা’র পরিচর্চায় আর বিপরীতে একটা ছেলে দেয় ৫.৬ ঘন্টা।
প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক লেখিকা অ্যাঞ্জেলিনা গ্রিগোরিভা জানান, একটা মেয়ে তার ছেলে-মেয়ে, চাকরি এবং সংসারের হাজারটা সমস্যা সামলিয়ে কোন বোন, কাজের মেয়ে কিংবা অন্যকারো সাহায্য ছাড়াই বৃদ্ধ পিতা-মাতার সেবা যত্ন করে। তিনি ছেলেদের সেবাযত্নের বিষয়টা উল্লেখ করে আরো বলেন, ‘ছেলেরা যে সেবা-যত্ন তাদের বাবা-মাকে করে সেটাও অন্য কারো সহায়তা নিয়ে, সেটা ছোট বোন, স্ত্রী কিংবা কাজের লোকেরও হতে পারে।’
হ্যাঁ, এবার আপনি বলবেন হয়তো এটাতো আমেরিকার গবেষণা! বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এই গবেষণার মূল্য কী? এমন প্রশ্নও হয়তো তুলে ফেলবেন। একটু চোখ খুলে দেখুন চারপাশটা। বাংলাদেশে মেয়েদের স্বাধীনতা নেই বললেই চলে। তারা চলে স্বামীর নিয়ন্ত্রণে। তারপরও দেখেন মেয়েরা নিজের সংসারের হাজারটা সমস্যা সামলিয়ে ঠিকই বৃদ্ধ বাবা-মাকে সেবা-যত্ন করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। ততোটা কি করছে আপনার পুত্রধন? শুধু আপনার কথা বলছি না, বলছি চারপাশের কথা।
যুগের পর যুগ ভ্রান্ত একটা চিন্তা মাথায় রাখার চেয়ে ঝেড়ে ফেলুন ওটাকে। মেয়ে হোক, ছেলে হোক সন্তানকে লালন করুন সমান স্নেহ মমতায়।