রাশেদুল ইসলাম
বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১৪ এপ্রিল,বৃহস্পতিবার,২০২২ | আপডেট: ১০:১৭ এএম, ১৯ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
আজ বাংলা ১৪২৯ সনের প্রথম দিন । ১লা বৈশাখ ।
বরাবরের মত বাংলা নববর্ষ উদযাপন বিষয়ে আমার ফেসবুক বন্ধুরা দুটি শক্ত বিপরীত অবস্থানে থেকে তাঁদের দৃঢ় মতামত প্রকাশ করছেন ।
আমার এক ধার্মিক বন্ধু দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে ফেসবুকে নিম্নরূপ পোস্ট দিয়েছেন -
“হায়রে চেতনাবোধ ! যা শুরু হয়েছে তাতে আজ শংকিত। কাদেরকে অনুসরণ করছি, তা ভাবতে ভাবতে হতবাক হয়ে যাই। আসলে বাঙ্গালীত্ব বড় নাকি মুসলমানিত্ব, এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে যেয়ে দিশেহারা। রমজানের পবিত্রতা সঠিক ভাবে রক্ষা পাক এটাই একমাত্র কাম্য”।
তাঁর লেখা পড়ে মনে হচ্ছে, বাঙালিদের নববর্ষ উদযাপনের কারণে এদেশে ইসলাম ধর্মের গেলো গেলো অবস্থা !
বাংলাদেশ কৃষি নির্ভর দেশ । কৃষি সম্পদ আমাদের জন্য আল্লাহর নিয়ামত এবং আশীর্বাদ স্বরূপ । বিগত ২ বছর করোনা মহামারিতে গোটা পৃথিবীর উৎপাদন ব্যবস্থা থেমে যায় । করোনার অভিঘাতে আমাদের প্রতিবেশী একটি দেশ শ্রীলঙ্কা দেউলিয়া হয়ে গেছে । বলা যায়, শুধুমাত্র কৃষিতে বাম্পার ফলনের কারণেই বাংলাদেশ আল্লাহর অশেষ রহমতে এখনও বহাল তবিয়তে আছে । কৃষি সম্পদ উৎপাদনের ভিত্তি মাস এই বৈশাখ । বাঙালি জাতিসত্ত্বার নাড়ির যোগাযোগের মাস এই বৈশাখ । সেই ১লা বৈশাখ উদযাপনে ধর্মের নিষেধ আছে, এটা কি যৌক্তিক হতে পারে ?
পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে,
‘তাঁর (আল্লাহর) মহিমার নিদর্শন হচ্ছে মহাকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্র । এখানে অবশ্যই জ্ঞানীদের জন্য শিক্ষনীয় নিদর্শন রয়েছে’ (সূরা রুম, আয়াত ২২) ।
কোরআনের এই আয়াতের মর্ম অনুযায়ী, আমরা যে বাংলা নামের একটি ভিন্ন ভাষা ধারণ করে বাঙালি জাতি হয়েছি, এটা আল্লাহর মহিমার একটি নিদর্শন । মহান আল্লাহর মহিমার সেই নিদর্শনকে হাইলাইট করা বা উদাযপন করা কি ধর্ম বিরোধী ? এখানে জ্ঞানীদের জন্য শিক্ষনীয় বিষয় কি ?
কোরআনে বলা হয়েছে,
“নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে সবচেয়ে নিকৃষ্টতম জীব হচ্ছে সেই মূক ও বধিররা, যারা তাদেরকে প্রদত্ত বিচারবুদ্ধি ব্যবহার করে না” -
(আয়াত ২২, সূরা আনফাল)।
কোরআনে বলা হয়েছে,
‘কঠিন শাস্তি অপেক্ষা করছে তাদের জন্য, যারা মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে সরাতে চেষ্টা করে, আর আল্লাহর সরল পথকে জটিলরুপে উপস্থাপিত করে’ (আয়াত ৩, সূরা ইব্রাহীম) ।
মহান আল্লাহ্ পবিত্র কোরআনে বার বার বলেছেন,
আমি কোরআনকে খুব সহজ করে দিয়েছি, যাতে তোমরা এর শিক্ষা মনে রাখতে পারো” (সূরা কামার, আয়াত ১৭, ২২, ৩২, ৪০) ।
কোরআনকে সহজ করা মানে ইসলাম ধর্মকে সহজ করা । কিন্তু আমাদের সমস্যা হচ্ছে আমরা ধর্মকে জটিল রুপে উপস্থাপন করি, যা কোরআনে নিষিদ্ধ ও কঠিন শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে উল্লেখ করা হয়েছে ।
আমরা সকলেই জানি মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সঃ) নিজে যা করেছেন, করতে বলেছেন বা অনুমোদন করেছেন তাকে হাদিস বলে ।
মহানবী স্বয়ং নিজে যা করেছেন, তাকে হাদিসে ফেলি বলে । এই হাদিসে ফেলির একটি উদাহরণ নিম্নরূপ-
‘হযরত মোহাম্মদ (সঃ) তাঁর মাতৃভাষায় শুদ্ধ উচ্চারণে কথা বলতেন । সকলে তাঁর কথা মন্ত্রমুগ্ধের মত শুনতেন’ ।
এই হাদিসের মর্ম অনুযায়ী নিজের মাতৃভাষায় শুদ্ধ উচ্চারণে কথা বলা একটি সুন্নত ।
তাহলে আজকের এই পহেলা বৈশাখে একজন বাঙালি তরুণ/ তরুণী যদি মাতৃভাষা বাংলায় শুদ্ধ উচ্চারণে একটি কবিতা পড়ে,
তা কি সুন্নত নয় ?
সকলকে নববর্ষের শুভেচ্ছা ।
১৪ এপ্রিল, ২০২২ । ইস্কাটন, ঢাকা ।