রাশেদুল ইসলাম
ইসলামের মৌলিক বিষয় (তিন)
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১৮ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২১ | আপডেট: ০৯:৫৩ এএম, ১৯ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
হযরত মোহাম্মদ (সঃ) হেরা পর্বতের গুহায় নির্জনে যে ধ্যান করতেন, তা আরবের অন্ধকার যুগের কোরাইশ বংশের রীতি অনুযায়ী । এটাকে তাহান্নুছ বলা হত । বছরে এক মাস এটা করার নিয়ম ছিল । তাহান্নুছ মানে নির্জনে ধর্মীয় ধ্যানমগ্নতা । মহানবী (সঃ) এঁর বয়স যখন ৪০ বছর তখন রমজান মাসের এ রকম এক নির্জনবাস সময়ে তাঁর উপর আল্লাহর ওহী নাজিল হয় । তিনি জানতে পারেন এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টিকর্তার নাম আল্লাহ এবং এই মহাপরাক্রমশালী আল্লাহর বাণী প্রচারের জন্য তাঁকে রসুল মনোনীত করা হয়েছে । এরপর থেকেই ফেরেশতা জিব্রাইল (আঃ) এঁর মাধ্যমে তাঁর উপর আল্লাহর ওহী নাজিল হতে থাকে (সূত্রঃ পৃষ্ঠা ১৩১-১৩৭, সিরাতে রাসুল্লুলাহ (সঃ)।
আমি আবারও বিনয়ের সাথে স্বীকার করি যে, ধর্মীয় বিষয়ে আমার কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই । তবে পবিত্র কোরআনে বলে হয়েছে,
‘আল্লাহ যাকে ইচ্ছা হিকমা বা প্রজ্ঞা দান করেন’ (আয়াত ২৬৯, সূরা বাকারা)।
তারমানে আমার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা থাকলেই যে, আমি কোরআন বুঝতে পারতাম, তাও ঠিক নয় । তবে আশার কথা মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘আমি কোরআনকে খুব সহজ করে দিয়েছি, যাতে করে তোমরা এর শিক্ষা মনে রাখতে পারো (আয়াত ১৭, ২২, ৩২, ৪০, সূরা কামার )। বলে হয়েছে, যারা সহজাত বিচারবুদ্ধি দিয়ে পড়বে, তারা কোরআন বুঝবে ।
আমি এটাও স্বীকার করি যে, পবিত্র কোরআন ও হাদিসের তফসির বিষয়ে আমার কোন পড়াশুনা নেই । মহানবী (সঃ) তাঁর বিদায় হজ্বের ভাষণে বলেন,
‘হে মানুষ !
আমি তোমাদের কাছে দুটো আলোকবর্তিকা রেখে যাচ্ছি ।
যতদিন তোমরা এ দুটোকে অনুসরণ করবে, ততদিন তোমরা সত্যের পথে থাকবে ।
এর একটি হোল আল্লাহর কিতাব। দ্বিতীয়টি আমার জীবন দৃষ্টান্ত’ ।
আমি পবিত্র কোরআন এবং হাদিসের একজন অতিসাধারণ পাঠক মাত্র । আমার নিজের সহজাত বিচারবুদ্ধি দিয়ে এখানে কোরআন হাদিসের একটা ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করেছি মাত্র । এ বিষয়ে কারো ভিন্নরূপ ব্যাখ্যা থাকলে অনুগ্রহ করে জানাবেন – তা দিয়ে আমি আমার নিজেকে সমৃদ্ধ করব ইনশাল্লাহ ।
নবুয়ত প্রাপ্তির পর মহানবী (সঃ) কে ইসলাম ধর্ম প্রচারের জন্য বলা হয় । কিন্তু এই নতুন ধর্ম প্রচার দুটি কারণে অসম্ভব বিপদজনক ছিল-
প্রথমতঃ সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ নিরাকার এবং তিনি একমাত্র উপাস্য – যা প্রচলিত মূর্তিপূজা বিশ্বাসের সম্পূর্ণ বিপরীত । এ ধর্ম প্রচার আরবে আবহমান কাল থেকে চলে আসা ধর্মবিশ্বাসে কুঠারাঘাতের শামিল ।
দ্বিতীয়তঃ নতুন ধর্মে বলা হয় সব মানুষ সমান । তখন দাস প্রথার যুগ । মক্কার অভিজাত সকল শ্রেণির মানুষের কেনা প্রচুর দাসদাসী ছিল । দাসদাসীদের পরিশ্রমই তাদের আয়ের উৎস ছিল । ইসলামে সব মানুষ সমান বলাতে ক্রীত দাসদাসী সকলেই মুসলমান হতে চাইলে মক্কার অর্থনৈতিক অবস্থা ধ্বসে পড়ার কথা । এছাড়া যাদের মূর্তি কেনাবেচার ব্যবসা ছিল – মূর্তিপূজা ছেড়ে দিলে তাদের ব্যবসা লাটে উঠার আশংকা ছিল ।
এ ধরনের সম্যক বিপদজনক অবস্থা জেনেও মহানবী (সঃ) মহান আল্লাহর নির্দেশ মতে মক্কায় ইসলাম ধর্ম প্রচার শুরু করেন । মহান আল্লাহ এবং তাঁর রসুলের উপর প্রথম বিশ্বাস স্থাপনকারি মুসলমান হলেন তাঁর নিজের স্ত্রী বিবি খাদিজা (রাঃ) । পুরুষদের মধ্যে প্রথম মুসলমান হযরত আলী (রাঃ) (সূত্রঃ সিরাতে রাসুল্লুলাহ (সঃ)।
আমি এই সুযোগে ইসলামের প্রথম দু’জন মুসলিম নরনারীর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি । মহান আল্লাহ তাঁদের বেহেশতে সুউচ্চ মর্যাদায় আসীন করুন । আমিন ।
তবে মক্কায় ইসলাম ধর্ম প্রচার অভিজাত শ্রেণি সহজভাবে নেয়নি । এর কারণ আগেই উল্লেখ করা হয়েছে । যারা ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেন, দিনে দিনে তাঁদের প্রতি নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যায় । এরপরও ইসলাম ধর্ম প্রচার অব্যাহত থাকলে হযরত মোহাম্মদ (সঃ) কে এক পর্যায়ে হত্যার নির্দেশ দেওয়া হয় । শেষ পর্যন্ত নবী করিম (সঃ) হযরত আবুবকর (রাঃ) কে সাথে নিয়ে গোপনে মদিনায় হিজরত করতে বাধ্য হন ।
হযরত মোহাম্মদ (সঃ) এঁর নবুয়ত প্রাপ্তির পরবর্তী ২৩ বছরে পবিত্র কোরআনের সর্বমোট ১১৪ টি সূরা তাঁর উপর নাজিল হয় । জিব্রাইলের (আঃ) এঁর মাধ্যমে তাঁকে জানান হয়,
‘আমি (আল্লাহ) সব সময় প্রত্যেক রসুলের নিকট তাঁর নিজ নিজ সম্প্রদায়ের ভাষায় আমার কালাম নাজিল করেছি, যেন সে সত্যকে স্পষ্ট করে তাদের কাছে তুলে ধরতে পারে (আয়াত ৪, সূরা ইব্রাহীম)। যেহেতু হযরত (সঃ) এবং তাঁর সম্প্রদায়ের ভাষা আরবী, এ কারণে আরবী ভাষায় কোরআন অবতীর্ণ হয় ।
তবে অন্যান্য রসুলগণের সাথে মহানবী (সঃ) এঁর পার্থক্য এই যে, অন্যান্য নবীগণকে শুধুমাত্র তাঁদের নিজেদের সম্প্রদায়কে হেদায়েতের জন্য পাঠানো হয় । কিন্তু হযরত মোহাম্মদ (সঃ) ছিলেন ব্যতিক্রম । তাঁকে বলা হয়,
‘এই কিতাব (আল কোরআন) আমি তোমার উপর নাজিল করেছি, যাতে তুমি সমগ্র মানবজাতিকে তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে অন্ধকার থেকে আলোর পথে আনতে পারো (আয়াত ১, সূরা ইব্রাহীম)।
(চলমান)