রাশেদুল ইসলাম
(শেষাংশ )
আমিই পারি
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৫ জুলাই,সোমবার,২০২১ | আপডেট: ১১:১৩ এএম, ২১ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
আমার আগের লেখা দুটি অনেকে পড়েছেন । অনেক বন্ধু তাঁদের মূল্যবান মতামত দিয়েছেন । আসলে দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত আমাদের শেখার সুযোগ রয়েছে । কিন্তু আমরা ভুল করি । আমরা মনে করি,
‘আমি সব জানি;
আমার জ্ঞান নেওয়ার কিছু নেই’।
বাস্তব কারণেই এই ধারণা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসা জরুরী ।
আমি সাধারণত ‘প্রথম পুরুষ’ এ লিখি । এজন্য আমার সব লেখার মধ্যেই ‘আমি’ থেকে যাই । অনেকে হয়ত মনে করেন, আমি নিজেকে জাহির করার জন্যই এটা করি । তা কিন্তু নয় । এ বিষয়ে আমার নিজের ব্যাখ্যা নিম্নরূপঃ
আমি নিজেকে সাধারণ মানুষের একজন মনে করি । একজন সাধারণ মানুষের যত দোষত্রুটি আছে, তার সবগুলোই কমবেশি আমার মধ্যে আছে । এ কারণে আমার নিজের আয়নায় সমাজে ঘটে যাওয়া বা চলমান কোন ঘটনার ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করি আমি - যেন তা সাধারণ মানুষের জীবন ঘনিষ্ঠ হয় ।
আমার লেখা থেকে অনেকে মনে করেছেন, আমি আমার ব্যক্তিগত শত্রুতা বা অবসর জীবনের বেকারত্ব নিয়ে চিন্তিত । কিন্তু বিষয়টি তা নয় । আমার লেখা যারা নিয়মিত পড়েন, তাঁরা জানেন আমার ৬০ বছর বয়স শুরু হলে, আমি আমার নিজের সংসারের জন্য কিছু করব না । আমার মোট আয়ু ধরা হয়েছে ৭০ বছর । তারমানে মহান আল্লাহ যদি কবুল করেন, তাহলে আগামী ১০ বছর আমি সংসারের জন্য নয় - সমাজের জন্য কিছু কাজ করতে চাই । কিন্তু কি কাজ করব আমি ?
আমি কি কাজ করব তা বলার আগে, আমি কি কাজ করব না, সেটা বলাই ভালো ।
১। আমি রাজনীতি করব না-
আমি রাজনীতি পছন্দ করিনে, তা নয় । মানুষের জন্য কাজ করার একটা ভালো মাধ্যম রাজনীতি। কিন্তু আমি রাজনীতি করতে চাইনে ভিন্ন কারণে । আমার লেখা যারা খেয়াল করেন, দেখতে পারেন যে, আমি কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর জন্য লিখিনে। আমার লেখা গোটা সমাজের জন্য। দেশের জন্য। কিন্তু রাজনীতি প্রধানত এলাকা ভিত্তিক । আমি আমার কর্মপরিধি শধু একটা এলাকার মধ্যে সীমিত রাখতে চাই নে । আমি সরকারের যে কোন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে কার্যকরী সহায়ক ভূমিকা পালন করতে চাই- তবে তা রাজনীতির মাধ্যমে নয় ।
২। কবি সাহিত্যিক হতে চাইনে-
আমার লেখা দেখে অনেকে এটা কবি সাহিত্যিক হওয়ার প্রচেষ্টা ভাবতে পারেন । কিন্তু আমি খুব সচেতন ভাবেই গতানুগতিক গল্প কবিতা লিখিনে । এ কথা সত্য যে, সাহিত্যের প্লাটফরম আমি ব্যবহার করি । কারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার এটি একটি ভালো মাধ্যম । আমার লেখা কর্মপরিকল্পনা বা উদ্বুদ্ধকরণের এসব বার্তা যদি কখনও সাহিত্যের মর্যাদা পেয়ে যায়, সেটা ভিন্ন কথা । সেক্ষেত্রে অর্পণ- দর্পণ স্মৃতি ফাউনডেশণ হয়ত একটু বেশী আর্থিক সুবিধা পেতে পারে । তবে কবি সাহিত্যিকগণ মোটেও আমার প্রতিদ্বন্দ্বী নন ।
আমার আগের দুটি লেখা এবং ফেসবুক বন্ধুদের মতামত থেকে সমাজের যে চিত্র পাওয়া গেল, তা মোটামুটি নিম্নরূপঃ
আমরা –
১। অন্যের ভালো সহ্য করতে পারিনে
২। কারো উন্নতি দেখলে মনে কষ্ট পাই
৩। কেউ ভালো আছে জানলেও কষ্ট পাই
৪। কেউ যেন ভালো থাকতে না পারে, তার চেষ্টা করি
৫। অন্যের দোষ খুঁজে মজা পাই
৬। অন্যের দোষ ঘটা করে বলে মজা পাই
৭। যে কথা শুনলে কেউ কষ্ট পায়, সেই কথা বলতে বেশী মজা পাই
৮। নিজের দোষ দেখিনে
৯। নিজে কারো উপকার করতে চাই নে;
১০। অন্যে কেউ যেন কারো উপকার না করে, সে ব্যবস্থা করতে চাই।
১১। মানুষের মধ্যে বিবাদ লাগিয়ে মজা পাই
১২। নিজের ভালো ঠিকই বুঝি, অন্যের ভালো বুঝিনে ।
১৩। কথা ও কাজে অন্যের ক্ষতি করতে চাই , ইত্যাদি ইত্যাদি ।
এ সবগুলো দোষ কমবেশি আমাদের আছে ।
অথচ ধর্ম ও নৈতিকতার দিক থেকে সবগুলোই অপরাধ ।
ব্যক্তি ও পরিবারের সমষ্টি সমাজ । একজন ব্যক্তির উন্নতি প্রকারন্তরে সমাজের উন্নতি; দেশের উন্নতি । আমরা যদি আমাদের কথা ও কাজে সেই ব্যক্তির উন্নতি না চাই, তাঁকে ভালো থাকতে না দিই, তাহলে সমাজ ও দেশের উন্নতি হবে কিভাবে ? আমার নিজের উন্নতিই বা কিভাবে হবে ? এসব কাজ দ্বারা আমরা নিজেরাই নিজেদের অজান্তে সমাজ ও দেশের উন্নতির পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়াই ।
অথচ, এ ধরণের অপরাধ করার জন্য আমাদের কারোরই ব্যক্তিগত বা দলগত কোন লাভ হয় না । আমরা এমনি এমনিই অহরহ এই কাজগুলো করি । আমরা যদি আমাদের নিজেদের সহজাত বিচারবুদ্ধি প্রয়োগ করা শুরু করি, তাহলে আমরা নিজেরাই এই বদঅভ্যাসগুলো থেকে মুক্তি পেতে পারি । এতে একদিকে যেমন আমরা এসব অপরাধমূলক কাজ থেকে মুক্তি পেতে পারি; অন্যদিকে এসব অপরাধের কারণে সমাজে চলমান একে অপরের প্রতি আস্থাহীনতা ও হানাহানি দূর করতে পারি ।
উপরে বর্ণিত ধারণা থেকে অর্পণ- দর্পণ স্মৃতি ফাউনডেশন ‘আমিই পারি’ নামে একটি কর্মসূচি হাতে নিতে যাচ্ছে । এটা সুস্পষ্ট যে, সমাজে চলমান যে অপরাধ বা অসংগতি, তা মূলত ব্যক্তি নির্ভর । একজন ব্যক্তি নিজে ইচ্ছে করলে বা আন্তরিক হলে তাঁর নিজের এই বদ অভ্যাসগুলো ছাড়তে পারেন । আমাদের প্রচেষ্টা থাকবে প্রত্যেক ব্যক্তিকে তাঁর বদ অভ্যাসগুলো ছাড়তে উদ্বুদ্ধ করা এবং তাঁকে বোঝান যে, এটা তিনিই পারেন ।
ইতোমধ্যে ‘আমিই পারি’ কর্মসূচির আওতায় ‘এগিয়ে যাওয়ার জন্য বই পড়ি’ প্রতিযোগিতা পরীক্ষামুলকভাবে শুরু হয়েছে । এটা স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ছাত্রছাত্রীদের জন্য । এ ছাড়া বয়স, শ্রেণি, পেশা ও লিঙ্গভেদে গৃহীত সকল পাইলট প্রোগ্রাম এ বছর ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হবে আশা করি ।
২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে অর্পণ- দর্পণ স্মৃতি ফাউনডেশন এর ‘আমিই পারি’ কর্মসূচি দেশব্যাপী আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে ইনশাল্লাহ । উল্লেখ্য, ফাউনডেশনের অঙ্গসংগঠন ‘অর্পণ- দর্পণ স্মৃতি পাঠাগার’ ২০১০ সাল থেকে এলাকাভিত্তিক জনকল্যাণমূলক কাজ করে আসছে ।
অর্পণ- দর্পণ স্মৃতি ফাউনডেশন এর কর্মসূচি গ্রহন ও বাস্তবায়নে সকলের পরামর্শ ও সহযোগিতা আমাদের একান্ত কাম্য ।
মহান আল্লাহ আমাদের করোনার অভিশাপ থেকে মুক্তি দিন ।
শুভ কামনা সকলের জন্য ।
২১ জুন, ২০২১ । ইস্কাটন, ঢাকা ।