মোঃ শফিকুল আলম
মিয়ানমারের সেনা অভ্যুত্থান
প্রকাশ: ০৯:৪৩ পিএম, ৬ ফেব্রুয়ারী,শনিবার,২০২১ | আপডেট: ০৬:১৭ পিএম, ১৪ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
মিয়ানমারের আর্মি বলেছে তারা আগামী এক বছরের জন্য দেশের ক্ষমতা গ্রহন করেছে এবং তারা নেতৃস্থানীয় গুরুত্বপূর্ণ রাজনীতিকদের আটকাদেশ দিয়েছেন। মিলিটারী নিয়ন্ত্রিত টিভি জরুরী অবস্থা জারী করার কথা প্রচার করছে। টিভি নিউজ আরও বলছে যে সামরিক বাহিনী প্রধান Min Aung Halong কে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হয়েছে এবং দেশে জরুরী অবস্থা ঘোষনা করা হয়েছে। আটককৃত রাজনীতিকদের মধ্যে অং সান সু কি রয়েছেন। সু কি’র পার্টি তাঁকে আটকের সত্যতা নিশ্চিত করেছে। ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসী’র মুখপাত্র রয়টারকে জানিয়েছে যে আজ সোমবার প্রথম প্রহরে প্রেসিডেন্ট Win Myint এবং পার্টির অন্যান্য নেতৃবৃন্দকে আর্মির লোকজন তুলে নিয়ে যায়।
Myo Nyunt, ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসীর মুখপাত্র দেশটির জনগনকে দ্রুত প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত না করার জন্য বলেছেন এবং সবকিছু আইনের মধ্যে থেকে করার অনুরোধ জানিয়েছেন। তিনি মনে করছেন তাকেও আটক করা হতে পারে। গত নভেম্বরের নির্বাচনের পর থেকেই সিভিল গভর্নমেন্ট এবং মিলিটারীর মধ্যে বিরোধ এবং অস্থিরতা শুরু হয়। নির্বাচনে সু কি’র পার্টি ৪৭৬টি আসনের মধ্যে ৩৯৬টি আসন পায়। আর্মিরা নির্বাচনে জালিয়াতি হয়েছে বলে দাবী করে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন এই দাবী প্রত্যাখ্যান করে। গত সপ্তাহে অবশ্য মিলিটারী ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসী দলীয় সরকার উৎখাতের ব্যাপারে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলো। কারন, মিলিটারী জান্তা হয়তো চায়নি গনতান্ত্রিক দেশসমূহ তাদের দেশটি পূনরায় সামকিকরনে বাঁধ সাঝে এবং তারা যাতে দেশটির গনতন্ত্রে উত্তরনে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে না পারে। বার্মার পক্ষে যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত ক্যাম্পেইন ডিরেক্টর মার্ক ফারমানার স্কাই নিউজকে জানায় যে বার্মার রাস্তায় রাস্তায় সেনা টহল রয়েছে। কিন্তু যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছেনা। কারন ইন্টারনেট এবং ফোন নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন রয়েছে। দেশে রাষ্ট্রীয় টিভির প্রচারও টেকনিকাল সমস্যার কথা বলে প্রচার বন্ধ রেখেছে। মি: ফারমানার বলেন সাম্প্রতিক সময়ে সু কি’র সিভিলিয়ান গভর্নমেন্ট দেশ চালালেও গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রনালয়গুলোতে মিলিটারী নিয়ন্ত্রন ছিলো।
ফারমানারের মতে মিলিটারী কু মূলত: কোনো অর্থ বহন করেনা। কারন মিলিটারী তো কু না করেই আসল ক্ষমতা ভোগ করছিলো। সু কি নামমাত্র সরকারে ছিলো। তাঁর মতে সরাসরি সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা দখলের পরে নানা দেশ থেকে বার্মার ওপর অর্থনৈতিক অবরোধ দেয়া হবে। দশকের পর দশক মাইয়ানমার নৃশংস সামরিক বাহিনীর রাজত্বে ছিলো এবং অনেকেরই ধারনা দেশটি আবার পূর্বাবস্থায় ফিরে যাবে। বিগত বছরগুলোতে বার্মার জনগন নিষ্পেষিত ছিলো। পুরনো দিনের কথা মনে করে বার্মার জনগন হয়তো শিহরিত হচ্ছে। অসংখ্য রাজনীতিককে কারারুদ্ধ থাকতে হয়েছে বছরের পর বছর। এটা অনুমান করা যাচ্ছে তারা পূনরায় একই পরিনাম ভোগ করতে যাচ্ছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া এ্যাডভোকেসি’র ডিরেক্টর জন সিফটন বলেন মাইয়ানমার মিলিটারী কখনোই সিভিলিয়ান রুল প্রয়োগ করে শাসন করেনি। মিলিটারী শাসন সব সময়ই বরং অর্থনৈতিক অবরোধ ডেকে নিয়ে এসেছে।
হোয়াইট হাউজ মুখপাত্র Jen Psaki বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র বার্মায় নির্বাচনের ফলাফলকে উল্টে দেয়ার সমর্থন করবেনা বা গনতন্ত্রে উত্তরনে বাঁধাদানকে মানবেনা; বরং দায়ীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করবে। আইন বহির্ভূতভাবে রাজনীতিকদের আটক করায় অস্ট্রেলিয়ান সরকার গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং আটক রাজনীতিকদের মুক্তিদানের দাবী করেছে। জাপান পরিস্থিতি অবলোকন করছে বলে জানায় এবং মাইয়ানমার থেকে তাদের নাগরিকদের এই মুহূর্তে সরিয়ে নেয়ার ব্যাপারেও ভাবছেনা।