মোঃ শফিকুল আলম
রাজনৈতিক নেতাদের কিছু ব্লাইন্ড স্পটস
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৩১ আগস্ট,মঙ্গলবার,২০২১ | আপডেট: ১১:০১ এএম, ১৯ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
পৃথিবীর সকল রাজনৈতিক নেতার কিছু ব্লাইন্ড স্পটস থাকে এবং এই ব্লাইন্ড স্পটস তাঁদের দুর্বলতার ক্ষেত্র তৈরী করে যা’ তোষামোদকারীরা তাদের স্বার্থে ব্যবহার করে।
রাজনৈতিক নেতৃত্বের কিছু দিক যেমন তাদের গর্ব এবং ইগো তাঁদের নিজেদের জন্য ঝুঁকি তৈরী করে। রাজনৈতিক নেতৃত্বের ইগোতে আঘাত লাগলে তাঁদের মধ্যে ধারাবাহিকভাবে প্রত্যাঘাতের যে মানসিকতা তৈরী হয় তা’ থেকে ধারাবাহিক দুর্বলতার সুযোগ গ্রহন করে তোষামোদকারীগন রাজনৈতিক নেতৃত্বকে manipulation করতে থাকে।
এই manipulation অনেকটা প্যাকেজাকারে হয়ে থাকে এবং এটা তখন জঘন্য এবং মারাত্মকাকার ধারন করে। তোষামোদকারীদের অনেক হিডেন এজেন্ডা থাকে। তোষামোদকারীদের হিডেন এজেন্ডা তখনই বাস্তবায়ন ঘটে যখন রাজনৈতিক নেতৃত্ব তোষামোদ পছন্দ করেন বা তোষামোদিত হতে তৃষ্নার্ত থাকেন। আর তখনই রাজনৈতিক নেতৃত্ব যাদের ওপর ভরসা করেন তারা তাঁর দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করেন।
তোষামোদী চেপে রাখা ক্ষোভের থেকেও ভয়াবহ।
মনে রাখতে হবে নেতৃত্বের প্রশংসা করা এবং তোষামোদী করা এক নয়।
তোষামোদ সম্বন্ধীয় মার্টিন লুথার কিং এর নিম্নলিখিত কোটটি এখনও সমভাবে প্রনিধানযোগ্য
“The ears of our generation have been made so delicate by the senseless multitude of flatterers that, as soon as we perceive anything of ours in not approved of, we cry out that we are being bitterly assailed; and when we can repel the truth by no other pretense, we escape by attributing bitterness, impatience, intemperance, to our adversaries.”
আমি এখন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী’র গত দু’য়েকদিন আগে চন্দ্রিমা উদ্যানে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরে জিয়ার লাশ সমাহিত করা হয়েছিলো না-কি হয়নি এবং জনাব জিয়া মুক্তিযাদ্ধা ছিলেন কি-না ইত্যাদি নিয়ে মন্তব্য করার পর থেকে বিভিন্ন গনমাধ্যমে অপরাপর তথাকথিত রাজনৈতিক তোষামেদকারী নেতা, তোষামোদকারী বুদ্ধিজীবি, সাবেক তোষামোদকারী সামরিক/বেসামরিক আমলা, তোষামোদকারী সাংবাদিক, তোষামোদকারী শিক্ষক, বুদ্ধিজীবি যেভাবে প্রধানমন্ত্রীর ব্লাইন্ড স্পটস (জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর খুনের পরিকল্পনায় ছিলেন) থেকে তৈরী হওয়া দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তোষামোদী মতামত ব্যক্ত করে যাচ্ছেন তা’ নিয়ে কিছু বলতে চাই।
প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য পেষের সাথে সাথেই আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক জনাব ওবায়দুল কাদের চ্যালেন্জ করে বলেছেন ঐ কবরে জিয়াউর রহমানের লাশ নেই। জনাব কাদের আপনি আমৃত্যু পার্টির সাধারন সম্পাদক থাকতে চান তাতে আর কোনো সন্দেহ নেই। সাথে সাথে প্রেসিডিয়াম সদস্য জনাব জাহাঙ্গীর কবির নানকসহ ছোটো-বড় অনেক নেতাই একই ধরনের চ্যালেন্জ করেছেন। জনাব নানক এমপিও নেই, মন্ত্রীও নেই। বড়ই কষ্টের! আপনার মন্ত্রীত্বও কনফার্মড!
আপনাদের সবার কথাই সত্য। ৪০ বছর পর ওখানে কারও লাশ নেই। ঐ কবরে জিয়াউর রহমানকে সমাহিত করা হয়নি সেটি প্রমান করা এখন নিশ্চয়ই বিএনপির দায়িত্ব নয়? প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন আপনারা। প্রমান করার দায়িত্বতো আপনাদের। কাকে চ্যালেন্জ করছেন? বরং ডিএনএ টেস্ট করে তারপর কথাটি উত্থাপন করতেন। সবকিছুতো আপনাদেরই হাতে। ডিএনএ টেস্টের রেজাল্ট কি আপনাদের চাওয়ার বাইরে হবে?
কবরটি মূল নকশার বাইরে হয়েছে। স্বাধীনতাবিরোধী সবুরখান, শাহ আজিজের কবর কি নকশার মধ্যে হয়েছে? কবর না থাকার বিষয়ে তাদের প্রশ্ন প্রথমে না এসে সর্বশেষ কবরটি প্রথমে আসলো কেনো? প্রধানমন্ত্রী বলেছেন জিয়াউর রহমান মুক্তিযোদ্ধা ছিলেননা। আপনারা তোষামোদকারীগন এক ধাপ এগিয়ে বলছেন জিয়াউর রহমান পাকিস্তানের এজেন্ট ছিলেন। কিন্তু জিয়াউর রহমান নিজেতো নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা বলেননি। তাঁকে যুদ্ধকালীন আওয়ামীলীগ সরকার সেক্টর কমান্ডার হিসেবে ভাতা দিয়েছিলেন। স্বাধীনতা পরবর্তী বঙ্গবন্ধু সরকার মুক্তিযুদ্ধে অবদানের সর্বোচ্চ স্বীকৃতি বিরোত্তম উপাধি দিয়েছিলেন। একজন পাকিস্তানি চরকে সেক্টর কমান্ডার এবং সর্বোচ্চ খেতাব দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা বলার জন্য আপনারা কাকে দায়ী করবেন?
আপনারা বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করে জাতিকে কলংকমুক্ত করেছেন। জাতিকে ঋণমুক্ত করেছেন। আপনারা সকল হত্যাকারীরকে বিচারের আওতায় আনায়ন করতে চান। আবার বলছেন খালেদা জিয়া তার স্বামী হত্যার বিচার করেননি। ঠিক আছে খালেদা জিয়া হয়তো জিয়ার হত্যকারীদের সাথে ছিলেন তাই বিচার করেননি। আপনারা করলেননা কেনো? সরকারে থাকলে হত্যাকারীর বিচারের দায়িত্ব কি আপনাদের ওপর বর্তায়না? জিয়া হত্যার দায়ে না হয় খালেদা জিয়াকেই ফাঁসি দিতেন। যেহেতু খালেদা জিয়া তাঁর স্বামী হত্যার বিচার করেননি। আপনারা সব সময় কথাটি বলে থাকেন। আপনারা যখন সংক্ষুব্ধ তখন একাজটি করতে পারতেন। তাছাড়া হত্যাকান্ডের বিচার করাতো একটি সরকারে দায়িত্বের মধ্যেই পরে।
এবারে আসুন জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর খুনের সাথে জড়িত। কি করে প্রমান করলেন? বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের বিচারকার্যের কোথাও কি বিচারক উল্লেখ করেছেন? না, করেননি। হত্যাকান্ডের পেছনের ক্রীড়ানকদের খুঁজে বের করতে কমিশন গঠন না করে প্রতিদিন এসব কেনো বলছেন? কারন পেছনের কুশীলবদের মধ্যে যদি জিয়াউর রহমান থেকেও থাকেন তবে তিনি হবেন লাইনের শেষের জন। তার আগে আসবেন খন্দকার মোস্তাক এবং বঙ্গবন্ধু হত্যাপরবর্তী আওয়ামীলীগ সরকারের মন্ত্রপরিষদ, তৎকালীন সেনাপ্রধান সফিউল্লাহ, প্রধানমন্ত্রীর ভাষায় আওয়ামীলীগ নেতা আব্দুর রাজ্জাক, তোফায়েল আহাম্মদ প্রমুখ।
এটিতো সত্য জনাব দিয়া যদি পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি না হতেন তা’হলে এসব ব্যাপারে কখনোই তাঁর নামোল্লেখ হতোনা। অথবা যদি খালেদ মোশাররফ টিকে যেতেন তাহলে আজকে তিনিই হতেন বঙ্গবন্ধুর খুনি।
কোভিড প্যানডেমিকের মধ্যে মাত্র ৪% লোককে (পূর্ণ) ভ্যাকসিনেটেড করেছেন। স্বাস্থ্য বিভাগে প্রতিদিন সীমাহীন দুর্নীতির খবর। সীমীত ভ্যাকসিন সরবরাহের মধ্যে আবার ভ্যাকসিন বাইরে কালোবাজারীদের হাতে চলে যায়। অদক্ষ প্রশাসনের সাথে অদক্ষ, অশিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত আত্মীয়স্বজন রাজনীতিকদের দ্বন্দ্ব যখন চরমে তখন এসব হাস্যকর আলাপ আলোচনা আপনাদের কতোখানি সুবিধা দিবে বলে আপনারা মনে করেন? ক্রমশই আপনারা অন্ধকারের চোরাগলিতে এগোচ্ছেন। ওটি আলোর পথ নয়। অন্ধকারের পথ পরিহার করে আলোর পথে হাঁটুন। প্রধানমন্ত্রী কোনো কথা বললেই সেটা বেদবাক্য নয়। ভুল লললে সঠিকটি বলে সঠিক পথে চলতে সাহায্য করুন। দেশটিকে স্বাভাবিক রাজনীতি চর্চায় ফিরিয়ে আনুন। সময় আপনাদের জন্য অপেক্ষা করবেনা। গনতন্ত্র এবং গনতন্ত্রই একমাত্র মুক্তির পথ।
তোষামোদকারীদের নিপাত ঘটুক।
জয়বাংলা
জয় বঙ্গবন্ধু।