রাশেদুল ইসলাম
কৃতজ্ঞতা প্রকাশ
প্রকাশ: ১০:০৮ পিএম, ১৯ জানুয়ারী,মঙ্গলবার,২০২১ | আপডেট: ০৮:২০ এএম, ২০ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
আমার জীবনটা একটু ব্যতিক্রম । যাদের কাছে কিছুই আশা করিনে, তাঁদের অনেকেই আমাকে প্রাণ দিয়ে ভালোবাসেন । যথাযথ মর্যাদা দিয়ে থাকেন । এ ধরণের একটি উদাহরণ শহিদ ভাই ।
শহিদ ভাই একজন শিল্পপতি । যে কোন বিচারে সমাজের সফল ব্যক্তিদের একজন তিনি । তিনি আমার লেখা খুব পছন্দ করেন । মনে করেন এ ধরণের লেখা আরও বেশী হলে ভালো হয় । এজন্য আমাকে বেশী দিন বেঁচে থাকা দরকার । তিনি নিজে করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর পথযাত্রী ছিলেন । মহান আল্লাহর একান্ত মেহেরবানীতে জীবন ফিরে পেয়েছেন । জীবনমৃত্যুর কঠিন মুহূর্তেও তাঁর মনে হয়েছে, আমার ক্ষেত্রে এমনটি যেন না হয় । বর্তমানে আমার স্ত্রী করোনা আক্রান্ত জেনে তিনি আরও শংকিত হন । আমার স্ত্রীর জন্য বিশেষ দোয়ার ব্যবস্থা করেন তিনি । পাশাপাশি আমি ও আমার মেয়েকে এক সাথে দুটি প্রতিষেধক টিকা নেওয়ার জন্য তিনি সবিশেষ অনুরোধ জানান । নিজে থেকেই সেই টিকা পাওয়ার ব্যবস্থা করেন তিনি । এককথায় তাঁর অনুরোধেই ড্রাইভারসহ আমরা তিনজন সেই টিকা নিয়েছি । তাঁর এ ধরণের আন্তরিকতা ও সহমর্মিতা প্রকাশের জন্য আমার পরিবারের পক্ষ থেকে তাঁর প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা ।
সংসারটা আসলে বড় মায়ার । এখানে একে অপরের ভালোবাসা নিয়েই আমরা বেঁচে থাকি । পরিবারে একজন অসুস্থ হলে গোটা পরিবারের শান্তি নষ্ট হয় । শুধু পরিবার নয়, শুভাকাংখী প্রায় সকলের অশান্তির কারণ হয় সেটা । আর আমার স্ত্রীর মত হলে তো কথা নেই । আমার স্ত্রী খুব সামাজিক মানুষ । তাঁর সামাজিক পরিচিতি সার্কেল অনেক বড় । নিজে শিক্ষকতা করেন । একটা বড় অংকের প্রিয় ছাত্রছাত্রী ও শুভাকাঙ্খী আছে তাঁর । তাই সামাজিক মাধ্যমে তাঁর একজন সহকর্মী অসুস্থতার কথা উল্লেখ করতেই, চারিদিক থেকে সমবেদনা প্রকাশ করা হচ্ছে । আমাকে অনেক প্রশ্নের জবাব দিতে হচ্ছে ।
পৃথিবীতে মরণব্যাধি এবং সংক্রামক রোগের সংখ্যা কম নয় । কিন্তু বিভিন্ন কারণে সংক্রামক মরণব্যাধি করোনা যে বিভীষিকার জন্ম দিয়েছে, তা ব্যতিক্রম । প্রথম দিকে যারা এ রোগের শিকার হয়েছেন, তাঁরা সত্যই দুর্ভাগা । মৃত্যুকালে নিজের বাবা মা বা আপনজনের ভালবাসার হাতের স্পর্শ তাঁরা পাননি । অনেক করুণ ও অবহেলার মৃত্যু হয়েছে তাঁদের । কিন্তু কয়েকমাসের ব্যবধানে এই চিত্র পাল্টে গেছে । এখন করোনাকে মানুষ ভয় পায় ঠিকই, কিন্তু করোনা রোগীকে সেই আগের মত আর অবহেলা করে না কেউ । করোনা রোগীর প্রতি আর অমানবিক আচরণ করা হয় না । অবশ্য এ ক্ষেত্রে বর্তমান সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ, বিশেষ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত দিক নির্দেশনা অনেক বড় ভূমিকা পালন করেছে । এ কারণে আমার পরিবারের পক্ষ থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি ।
সংসারে মা এবং স্ত্রী হিসাবে একজন নারী অনেক বড় ভূমিকা পালন করেন । অনেক ক্ষেত্রে জীবন বাজী রেখে তিল তিল করে মনের মত করে সংসার সাজান তিনি । কিন্তু কোন এক সময় সেই ‘তিনি’ যখন কোন মরণব্যাধিতে আক্রান্ত হন, আর সংসারের সবাই যদি তখন তাঁকে বোঝা মনে করে, এটা তাঁর মৃত্যুর সামিল হয়ে পড়ে । প্রকৃতপক্ষে করোনার মত কোন মরণব্যাধি নয়; তাঁর বাস্তব মৃত্যুর কারণ হয় সংসারের আপনজনদের সেই অবহেলা । দুঃখজনক হলেও সত্য এই করোনা কালে অনেক সংসারের অনেক সোনার মানুষের করুণ মৃত্যুর কারণ হয়েছে এই করোনা ।
আমার স্ত্রী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন । বর্তমানে তিনি হাসপাতালে আছেন । আমি এবং আমার মেয়ে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে পালাকরে তাঁর সাথে থাকি । হাসপাতালের ডাক্তার নার্সসহ সংশ্লিষ্ট সকলে খুবই আন্তরিক । স্বাভাবিক কারণেই হাসপাতাল দর্শনার্থী শূন্য । চারিদিক সুনসান নীরবতা । অনেক কড়া পাহারাদার বসিয়ে হাসপাতালগুলো বহিরাগতদের ভিড় কমাতে পারে না । কিন্তু মজার ব্যাপার, করোনা রোগীদের হাসপাতাল একদম ফাঁকা । এখানে বহিরাগতদের কোন ভিড় নেই । খালি চোখে দেখা যায় না এ রকম অদৃশ্য একটি ভাইরাসের কি ক্ষমতা ! কিন্তু হাসপাতালের ভিতরে যারা কাজ করেন তাঁদের চিত্র ভিন্ন । আমি হাসপাতালের ক্যাফেটেরিয়ার একজন বেয়ারাকে প্রশ্ন করি,
‘তোমাদের এখানে কাজ করতে ভয় করে না’ ?
সে জানায়, তাদের কারো কখনও করোনা হয়নি । ভবিষ্যতেও হবে না ।
আমি বলি ‘কেন’ ?
সে জানায় রোগীদের দোয়া আছে ।
আসলে জগত ও জীবন বিষয়ে এক এক জনের ব্যাখ্যা এক এক রকম । আমি নিজে আমার জীবনকে মূল্যবান মনে করি, সত্য । তবে, কোন অবস্থাতেই তা অন্য কারো জীবনের চেয়ে বেশী মূল্যবান নয় । আমার নিজের জীবনের যতটা আয়ু আছে, তার একদিনও বেশী বাঁচতে চাইনে আমি । নিজের যেটা দায়িত্ব মনে করি, তাতে কোন বিপদ আছে কিনা, সেটা চিন্তা করে সময় নষ্ট করতে চাইনে । অন্যের কাছে নয়; সব সময় নিজের বিবেকের কাছে স্বচ্ছ থাকতে চেষ্টা করি আমি ।
যারা আমার স্ত্রীর জন্য দোয়া করছেন, আমার পরিবারের জন্য দোয়া করছেন - তাঁদের সকলের প্রতি আমাদের আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ।
মহান আলাহ আমাদের সকলের সহায় হউন ।
ইস্কাটন, ঢাকা । ১৬ জানুয়ারি। ২০২১ ।