মোঃ শফিকুল আলম
শীঘ্রই, বিস্ময়করভাবে, অস্বস্তিকর ট্রাম্প বিশ্বের রাজনৈতিক দৃশ্যপট থেকে উধাও হবেন।
প্রকাশ: ১২:৫৩ পিএম, ১০ জানুয়ারী,রবিবার,২০২১ | আপডেট: ০৭:০৩ পিএম, ১৫ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
শিরোনামের কথাগুলো ট্রাম্পের পেছনের একটি স্টেটমেন্টের অনুকরন মাত্র। মার্চ ২০২০ এর শুরু থেকে নানান সময়ে কমপক্ষে ৪০ বার বলেছিলেন কোভিড-১৯ যেকোনো সময়ে উধাও হয়ে যাবে। যদিও তা’ হয়নি; বরং চেপে বসেছে। করোনা মহামারী মহাদেশীয় যুক্তরাষ্ট্রকে গ্রাস করতে বসেছে। সুতরাং কোভিড-১৯ সহজে আমেরিকা থেকে উধাও না হলেও ট্রাম্প হচ্ছেন এটি এখন সত্য।
গত বুধবার যখন জর্জিয়ায় সিনেটের দু’টি আসনের ভোট গননা শেষে জানা গেলো ডেমোক্র্যাট প্রার্থী ওয়ারনক রাফায়েল পরিষ্কারভাবে রিপাবলিকান প্রার্থী কেলী লোয়েফলারকে পরাজিত করে বিজয়ী হয়েছেন এবং যখন অপর আসনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জন ওসফ পরাজিত করেছেন রিপাবলিকান ডেভিড পারডিউকে তখনই বাতাসে কান দিয়ে শন্ শন্ শব্দে শোনা যাচ্ছিলো ট্রাম্পের রাজনীতির মৃত্যু ঘটছে।
মুমূর্ষ ট্রাম্পকে স্পর্শ করে মৃত্যু নিশ্চিত করা নিশ্চয়ই ডেমোক্র্যাটদের কাজ হবেনা। পেলোসির ২৫ তম সংশোধনী বা ট্রাম্পকে ইমপিচ করার প্রস্তাব আমেরিকার রাজনীতিতে এই মুহূর্তে বিশেষ কোনো ভূমিকা রাখবেনা। দু’সপ্তাহেরও কম সময়ে জো বাইডেন ২০ জানুয়ারী ২০২১ আমেরিকার ৪৬ তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিচ্ছেন। এ সময় পর্যন্ত মূলত: ট্রাম্প খোঁড়া হংস হিসেবেই নয় একটা জীবন্ত লাশ হিসেবে থাকবেন।
এতোদিন পরে নিজের অহংকার চূর্ণ করে, প্রমান বিহীন নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ পাশে ঠেলে রেখে হোয়াইট হাউজের একজন স্টাফারের মাধ্যমে কনসেশন (আমেরিকার নির্বাচনে পরাজয় মেনে নিয়ে নির্বাচন শেষে পরাজিত প্রেসিডেন্ট যে বক্তৃতা দিয়ে থাকেন) স্পিচ ইস্যু করেন। তাঁর প্রাণপ্রিয় ট্যুইটার অ্যাকাউন্ট অনির্দিষ্টকালের জন্য ব্যান করা হয়েছে। তাঁর এই মেগাফোন এখন পৃথিবীব্যাপী বন্ধ রয়েছে।
ওয়াশিংটন ডিসিতে MAGA (Make America Great Again) protest Rally তে ট্রাম্প কর্তৃক তাঁর উগ্র সমর্থকদের উত্তেজিত করত: বক্তৃতা প্রদান এবং Capitol Hill (Home of Congress) এ আক্রমন মুহূর্তের মধ্যে ট্রাম্পকে নি:সঙ্গ করে দিয়েয়েছে। ভাইস প্রেসিডেন্ট পেন্সসহ সবাই তাঁর থেকে দূরত্বে রয়েছেন। হোয়াইট হাউজে গন পদত্যাগের কথা শোনা যাচ্ছে। অনেকে পদত্যাগ করেছেন এবং অন্যেরা ক্যালেন্ডারে দিন গুনছেন। ট্রাম্প প্রশাসনের সবচাইতে সুবিধাভোগী এবং অনুগামী মাইক পেন্সের ভূমিকা ট্রাম্প তাঁর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে নিয়েছেন। তাইতো পেন্সের পরিবারকে ট্রাম্প সমর্থকরা ডেথ থ্রেট দিয়েছে।
তবে নির্বাচন ২০২০ এর লক্ষনীয় দিক হলো আমেরিকার ইতিহাসে সর্বোচ্চ সংখ্যক ভোটারের ভোটকেন্দ্রে উপস্থিতি। ট্রাম্প আমেরিকাকে দু’টি মেরুতে বিভক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন। সে কারনেই তিনি তাঁর সমর্থকদের ব্যাপক হারে ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হতে অনুপ্রাণিত করতে সক্ষম হয়েছেন; যখন অন্য পক্ষও একই কারনে ভোট দিয়েছে। এই দু’পক্ষ যেমন বাইডেন-কামালা-কে অনুমোদনের জন্য বা ট্রাম্পকে বিজয়ী করতেই ভোট প্রদান করেছে তা’ নয়। তারা মূলত: এক পক্ষ অন্য পক্ষকে হারানোর জন্যই ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হয়েছিলো।
২০১৬ সালের নির্বাচনে ট্রাম্পের বিজয় ছিলো অনেকটা ভূমিধস বিজয়। রিপাবলিকানরা কংগ্রেস এবং সিনেট উভয় হাউজের নিয়ন্ত্রন পেলো। উত্তেজিত প্রেসিডেন্ট-ইলেক্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর সমর্থকদের উদ্দেশ্যে বললেন, “আমরা শুধুই জিততে থাকবো। এক সময়ে আপনারা বলবেন, প্লিজ প্লিজ প্রেসিডেন্ট, stop winning। We are going to be sick and tired of winning. তখন হয়তো আপনারা আরও বলবেন যে let us have at least one loss। এবং তখন আমি (ট্রাম্প) বলবো no way, we’re going to keep winning and I (Trump) don’t care if you like it or not।
কিন্তু ২০১৮ সালেই কংগ্রেসের মধ্যবর্তী নির্বাচনে রিপাবলিকানরা ৪১ টি আসন হারায় এবং ডেমোক্র্যাটরা কংগ্রেসের নিয়ন্ত্রণ গ্রহন করে। যদিও সিনেটের ২ টি আসন ডেমোক্র্যাটদের কাছ থেকে নিয়ে নিয়ন্ত্রণ রিপাবলিকানদের হাতেই থেকে যায়। ট্রাম্পের ৪ বছরের শাসনামলে সিনেটের ঐ বিজয় ছাড়া আর কোনো বিজয় ছিলোনা।
৩ নভেম্বর ২০২০ নির্বাচনে ট্রাম্প হোয়াইট হাউজ হারালেন এবং গত দু’দিন পূর্বে সর্বশেষ ভোট গননায় জর্জিয়ার দু’টি আসন হারানোতে রিপাবলিকানরা সিনেটেও মেজরিটি হারালো। সিনেটে আসন সংখ্যা এখন ৫০-৫০। সাংবিধানিকভাবে যেহেতু ভাইস প্রেসিডেন্ট সিনেটের প্রেসিডেন্ট সেহেতু কামালা হ্যারিসের কাষ্টিং ভোটে যেকোনো সাধারন বিল পাশ করতে পারবে। কিন্তু বিশেষ কোনো বিল পাশ করতে সিনেটে ৬০ ভোটের মেজরিটি লাগবে। সেক্ষেত্রে শেষ দু’বছর সাধারন মেজরিটিতে যেকোনো বিল পাশ করা যাবে। সুতরাং শেষ দু’বছর ডেমোক্র্যাটরা দেশে প্রয়োজনীয় যেকোনো পরিবর্তন আনায়ন করতে পারবে।
অনেকে ট্রাম্পকে চলন্ত ম্যাগনেট হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। অর্থাৎ ট্রাম্প চুম্বকের মতো ডেমোক্র্যাট ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে টেনে নিয়েছে। জর্জিয়ার দু’টি run-off election (run-off election কি? জর্জিয়ার আইনানুযায়ী বিজয়ী প্রার্থীকে ৫০%+১ ভোট পেতে হবে; অন্যথায় পূনরায় নির্বাচন হবে) এ ভোটারের উপস্থিতির কারনেই দু’টি আসনের run-off election এ ডেমোক্র্যাটরা জিতে যায়। এই নির্বাচনে ৬০% ভোটার উপস্থিত ছিলো। গত ২৮ বছরের মধ্যে জর্জিয়ায় এই প্রথম ডেমোক্র্যাটদের বিজয়। ডোনাল্ড ট্রাম্পের কারনেই ডেমোক্র্যাটরা নতুন ভোটার রেজিস্ট্রেশনের ৪৪% যখন রিপাবলিকান ছিলো ৪২%।
জর্জিয়া, মধ্য-পশ্চিম এবং দক্ষিন-পশ্চিম অন্চলসমূহে ট্রাম্প সর্বাধিক ভোটারকে ভেটকেন্দ্র আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। কিন্তু ভোটারদের অধিকাংশ অবশ্য তাঁর বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে। সে কারনেই ট্রাম্পের রাজত্বকালের সমাপ্তি ঘটেছে। এমনকি ২০২৪ এ প্রতিযেগিতায় ফিরে আসার সম্ভাবনাও ক্ষীণ। ট্রাম্প-পরীক্ষণও শেষ। তিনি হারিয়ে যাবেন। অদৃশ্য হবেন। এক সময়ে তাঁর আলোচনা শোনা যাবেনা। কখনো আলোচনায় আসলেও নেতিবাচক দৃষ্টান্ত হিসেবে আসবে।