রাত হলেই হাসপাতালে রোগী ‘পরিদর্শন’ করে কুকুর!
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৪ জানুয়ারী,
বুধবার,২০২৩ | আপডেট: ১১:৫৪ পিএম, ২৪ ডিসেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
হাসপাতালের বেডে অতিরিক্ত রোগী থাকায় অনেক রোগীর ঠাই হয়েছে মেঝেতে। গভীর রাতে মেঝেতে যখন রোগী ও স্বজনরা ঘুমিয়ে পরেছে তখন হাসপাতালের ভেতরে পুরুষ ওয়ার্ডে কুকুর ঢুকে শুকছে তাদের। এমন কয়েকটি ছবি সম্প্রতি ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে।
এদিকে ছবিগুলো ভাইরাল হওয়ার পর থেকেই হাসপাতালের পরিবেশ ও কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনাসহ নানা বিষয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন মানবাধিকার সংগঠন ও সমাজ উন্নয়নে কাজ করা বিভিন্ন সংগঠনগুলো। অনেকেই এই ছবিগুলো ফেসবুকে পোস্ট করে লিখেছেন, “রাতে হাসপাতালে রোগী ‘পরিদর্শন’ করছে কুকুর।”
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তীব্র শীতের কারণে নীলফামারী জেলারেল হাসপাতালে প্রতিনিয়ত বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। এমন অবস্থায় বেডের তুলনায় রোগী বেশি হওয়ায় অনেককেই মেঝে ও বারান্দায় রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। দিনদিন রোগীর সংখ্যা বাড়লেও হাসপাতালের পরিবেশ ও পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে উদাসীন কর্তৃপক্ষ এমন অভিযোগ রোগী ও স্বজনদের।
সেবার মান খারাপ, জনবলসংকট সহ নানাবিধ অভিযোগ রয়েছে হাসপাতালটির বিরুদ্ধে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন রোগী ও তাদের স্বজন বলেন, এই হাসপাতালের কোনো পরিবেশ নেই। টয়লেট এবং মেঝে অপরিস্কার থাকে। হুট হাট কুকুর ঢোকে। পরিচ্ছন্ন কর্মীর তো দেখাই মেলে না। তাছাড়া খাবার পানির বা কাপড় ধোয়ার জন্য বেগ পেতে হয়।
রিমন ইসলাম নামের একজন বলেন, ‘আমার এক অসুস্থ আত্মীয়র সঙ্গে আমিও হাসপাতালটিতে এক রাত ছিলাম। হাসপাতালের এমন পরিবেশ যে কোনো সুস্থ মানুষও এখানে থাকলে অসুস্থ হয়ে যাবে।’
সমাজ কর্মী মারুফ খান বলেন, হাসপাতাল যেহেতু রোগ নিরাময় কেন্দ্র, সেহেতু সেখানের পরিবেশ অবশ্যই ভালো থাকা জরুরি। তবে নীলফামারীর জেনারেল হাসপাতালের চিত্রটি মোটেও গ্রহনযোগ্য নয়। এখানে কর্তৃপক্ষের নজরদারির অভাব রয়েছে। সেই সঙ্গে গার্ড বা রাত্রী কালীন যারা দায়িত্বে থাকেন তাদেরও অবহেলা রয়েছে। তাদের অবহেলা না থাকলে কুকুর প্রবেশ করে কিভাবে?’
সমাজ কর্মী শাকিল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি হাসপাতালে পরিবেশ নিয়ে অভিযোগ থাকে এটিও তার ব্যতিক্রম নয়। কর্তৃপক্ষ আরও সচেতন হওয়া উচিত।’
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ছবি গুলো তুলেছেন রুবেল ইসলাম নামে বেসরকারি একটি ব্যাংকে কর্মরত এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, ‘আমি গত ২৮ ডিসেম্বর রাত আনুমানিক ৯ টায় হাসপাতালে আমার বোন জামাইকে দেখতে যাই। সেখানে যাওয়ার পর কুকুর চারিদিকে ঘুরতে দেখি। প্রথমে বিষয়টি এড়িয়ে গেলেও পরে যখন মেঝেতে শুয়ে থাকা রোগী ও স্বজনদের শুকতে দেখি কুকুরটিকে। তখন বিষয়টি আমার কাছে খারাপ লাগে। পরে মুঠোফোনে ছবি তুলে নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘এমন অবস্থা যদি সরকারি কোনো হাসপাতালের হয় তাহলে সেবার মান বা দায়িত্বরত ব্যক্তিদের অবহেলা কতটা তা অবশ্যই প্রশ্নবিদ্ধ।’
এদিকে বিষয়টি অস্বীকার করে নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. আবু আল হাজ্জাজ বলেন, ‘ছবি গুলো এখনকার নয়, অনেক আগের। ছবি গুলো সরানোর জন্য কাজ করছি। আর আগের থেকে হাসপাতালের পরিবেশ অনেকটা ভালো। অন্যান্য যা সমস্যা আছে সেগুলোতে কাজ করছি।’
জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. জাহাঙ্গীর কবীর বলেন, ‘এবিষয়ে আমি হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ককে জানাবো। এমনটি যদি হয় তাহলে কুকুর প্রবেশ বন্ধে ব্যবস্থা নিতে বলবো।’