সাজার রায় শুনে কাঁদলেন পাপিয়া, পাশে দাঁড়ালেন স্বামী সুমন
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১৬ আগস্ট,শনিবার,২০২৫ | আপডেট: ০৯:৫২ পিএম, ১৬ আগস্ট,শনিবার,২০২৫

অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় সাজার রায় শুনে কাঁদলেন যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়া। স্ত্রীকে কাঁদতে দেখে কাঠগড়া থেকে নেমে পাশে গিয়ে দাঁড়ালেন স্বামী মফিজুর রহমান সুমন।
বৃহস্পতিবার বিকালে ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক আবু তাহের রায় ঘোষণার পর এ দৃশ্য দেখা গেছে।
সাড়ে তিন বছরের কারাদণ্ডের পাশাপাশি তাদের পাঁচ লাখ টাকা করে অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও ছয় মাস কারাভোগের সাজা দেওয়া হয়েছে।
এদিন জামিনে থাকা পাপিয়া আদালতে হাজির হন। সুমনকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়।
দুদকের তরফে কৌঁসুলি মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর মামলাটি রায়ের পর্যায় থেকে অধিকতর শুনানির জন্য আবেদন করেন। পাপিয়া ও সুমনের তরফে তাদের আইনজীবী শাখাওয়াত উল্লাহ ভূঁইয়াও শুনানি করেন। দুপুর ১টা ২০ মিনিট থেকে শুরু হওয়া শুনানি চলে ২টা ২০ মিনিট পর্যন্ত।
এরপর এক ঘণ্টা ১০ মিনিটের বিরতি দিয়ে বিকাল সাড়ে ৩টায় পুনরায় শুনানি শুরু হয়। ৪টা ১০ মিনিটের দিকে আদালত রায় ঘোষণা করে।
রায় শুনেই পাপিয়া আদালতের ভেতরে কাঁদতে থাকেন। এসময় কাঠগড়া থেকে নেমে পাপিয়ার কাছে এগিয়ে আসেন তার স্বামী সুমন।
আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়। পরে আসামিপক্ষের আবেদনে পাপিয়াকে বিশেষ বিবেচনায় কারাগারে না পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক। তবে অন্য মামলায় গ্রেপ্তার থাকায় সুমনকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
এর আগে ১১টা ৩৭ মিনিটে আদালতে হাজিরা দেন জামিনে থাকা পাপিয়া। এজলাসে বসে থাকা সুমনের পাশে গিয়ে বসেন পাপিয়া। তখন পাপিয়া মাস্ক খুলে স্বামীর সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলেন। মিনিট দশেক পর পাপিয়া সেখান থেকে উঠে সামনের বেঞ্চে গিয়ে বসেন। তখন মুখে মাস্ক পরে মোবাইল স্ক্রিনে নজর দেন তিনি। একপর্যায়ে টেবিলের ওপর মাথা রেখে চুপ করে বসে থাকতে দেখা যায়।
রায়ের পর পাপিয়া দম্পতির আইনজীবী শাখাওয়াত উল্লাহ ভূঁইয়া বলেন, “এ মামলায় তাদের ২০২০ সালের ১৫ ডিসেম্বর গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ২০২৪ সালের ২০ জুন পাপিয়া কারামুক্ত হন। তবে অপর আসামি সুমন গ্রেপ্তারের পর থেকেই কারাগারে রয়েছেন।
“আদালত তাদের যে সাজা দিয়েছেন, সেই মেয়াদের সাজা তারা আগেই শেষ করেছেন। পাপিয়াকে কারাগারে না পাঠিয়ে আমরা তার মুক্তি চেয়ে আবেদন করি। পরে আদালত বিশেষ বিবেচনায় আমাদের আবেদনটি মঞ্জুর করেছেন। তাকে কারাগারে যেতে হয়নি। আদালতের দেওয়া সাজা তারা ইতোমধ্যেই ভোগ করে ফেলেছেন। আমরা রায়ের পর্যবেক্ষণ দেখে আপিলের সিদ্ধান্ত নেব।”
রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে দুদকের আইনজীবী মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর বলেন, “এ মামলায় সর্বোচ্চ সাজা ছিল ১০ বছর। আদালত তাদের সাড়ে তিন বছরের সাজা দিয়েছেন।
“এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলব। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আপিল করা হবে।”
সোয়া ৬ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০২০ সালের ৪ অগাস্ট দুদকের উপপরিচালক শাহীন আরা মমতাজ এ মামলা দায়ের করেন।
তদন্ত শেষে পরের বছরের মার্চ মাসে পাপিয়া ও তার স্বামী মফিজুর রহমান সুমনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন দুদক কর্মকর্তা শাহীন আরা মমতাজ।
২০২০ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি পাপিয়া ও তার স্বামী সুমনকে ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে ঢাকা ও নরসিংদীতে পাপিয়ার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে বিপুল সম্পদের খোঁজ পাওয়ার কথা জানায় র্যাব।
গ্রেপ্তারের পর পাপিয়া ও তার স্বামীর বিরুদ্ধে শেরেবাংলা নগর থানায় অস্ত্র ও মাদক আইনে দুটি মামলা করে র্যাব। বিমানবন্দর থানায়ও তাদের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইন-১৯৭৪ এর অধীনে একটি মামলা দায়ের করা হয়। আর গুলশান থানায় মুদ্রা পাচার প্রতিরোধ আইনে সিআইডি আরেকটি মামলা করে। পরে দুদক পাপিয়ার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করে।
এর মধ্যে ২০২০ সালের ১২ অক্টোবর অস্ত্র মামলায় পাপিয়া ও সুমনের ২০ বছরের কারাদণ্ড হয়। আর অর্থ পাচারের মামলায় গত ২৫ মে পাপিয়ার চার বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয় আদালত। তবে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় পাপিয়ার স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরীসহ সহযোগীরা খালাস পান।
আরও পড়ুন
এই বিভাগের আরো খবর

‘জুলাই-আগস্ট হত্যাযজ্ঞে শেখ হাসিনার বিচার নিয়ে কোনো কম্প্রোমাইজ হবে না’

মেজর সাদিকের স্ত্রী সুমাইয়া জাফরিন ৫ দিনের রিমান্ডে

প্লট দুর্নীতির ৩ মামলায় হাসিনা-জয়-পুতুলের বিচার শুরু, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি

মারণাস্ত্র ব্যবহারে অতিউৎসাহী ছিলেন হাবিব ও ডিবি হারুন
