avertisements 2

‌ভূয়া মামলা বাণিজ্য: রাত ১১টার মধ্যে টাকা না আনলে মামলা এন্ট্রি ‌

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১২ অক্টোবর,শনিবার,২০২৪ | আপডেট: ১০:৩৪ এএম, ১৬ অক্টোবর, বুধবার,২০২৪

Text

ফাইল ছবি

‘আপনারা দুই ভাই কাউন্সিলের ডান হাত-বাম হাত ছিলেন। বহু তাণ্ডব চালিয়েছেন। বহু কথা-গল্পই শুনলাম আপনাদের নামে। দল-পার্টি ক্ষমতায় থাকলে যা হয়। আপনাদের নামে মামলা দেওয়া হয়েছে। মামলা খুব খারাপ জিনিস। আর এই মামলায় আসামি যৌথ বাহিনী দিয়ে ধরাচ্ছে, এটা আরও খারাপ। এখন অপশন আছে। মামলা এন্ট্রি হবে রাত ১১টায়। এর আগেই টাকা পাঠান। না এলেই মামলা এন্ট্রি।’ 

এভাবেই বুধবার মোবাইল ফোনে কুষ্টিয়া শহরের জুগিয়া এলাকার আনন্দ কুমার পালের দুই ছেলে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত পলাশ কুমার পাল ও মিলন কুমার পালকে হুমকি দেওয়া হয়। তাদের কাছে এজাহারের কপিও পাঠানো হয়েছে।

এজাহারের কপিতে দেখা গেছে, এ মামলায় পলাশ কুমার পাল ও মিলন কুমার পালকে ৪০ ও ৪১ নম্বর আসামি করা হয়েছে। এভাবে ভুয়া এজাহারে কুষ্টিয়ায় নিরপরাধ মানুষকে মামলা দিয়ে ব্যাপক চাঁদাবাজি চলছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এজাহার থানায় জমা না দিয়েই কথিত আসামিদের ফোন দিয়ে টাকা চাওয়া হচ্ছে। চাঁদা না দিলে যৌথ বাহিনী দিয়ে গ্রেপ্তারের হুমকিও দেওয়া হচ্ছে। 

‘এজাহার’ থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, কুষ্টিয়া শহরের থানাপাড়া এলাকার আবুল হোসেনের ছেলে মাহামুদুল হাসান রোমন বাদী হয়ে ৬২ জনকে আসামি করে একটি অভিযোগ প্রস্তুত করেন। সেই এজাহারে কুষ্টিয়া শহরের ব্যবসায়ী, শিক্ষক, বেসরকারি চাকরিজীবী থেকে শুরু করে চিকিৎসকদেরও নাম রয়েছে। ৮ অক্টোবর এজাহারটি বিভিন্ন লোকের ফোনে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। একই ব্যক্তি আরও একটি এজাহার তৈরি করেন। সেখানে আসামি করা হয়েছে ৬৪ জনকে। আসামিদের স্বজন ও সংশ্লিষ্টদের মোবাইল ফোনে অভিযোগ দিয়ে ভীতি ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। 

রোমান বাদী হয়ে যে দুটি এজাহার তৈরি করেছেন, তা এখনও থানায় জমা হয়নি। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহফুজুল হক চৌধুরী। তিনি বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। কেউ অভিযোগ নিয়ে আসেনি। এলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

ভুক্তভোগী পলাশ কুমার জানান, অজ্ঞাত ব্যক্তি ফোন দিয়ে মামলার বিষয়টি জানায়। বাদীর সঙ্গে তাঁর  সম্পর্ক ভালো বলে বিষয়টি মীমাংসার আশ্বাস দেন। কত টাকা লাগবে জানতে চাইলে কেউ ৩০ হাজার কেউবা ২০ হাজার টাকা দিয়েছেন। অপরাধের মাত্রা বুঝে ৫০ হাজার টাকাও নেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন ওই ব্যক্তি। 

একই দিন কুষ্টিয়া শহরের দুই ধনাঢ্য শিল্পপতি দুই ভাইয়ের কাছেও ফোন দিয়ে চাঁদা দাবি করা হয়। বাদ যাননি নারী কলেজ শিক্ষকও। ওই শিক্ষক জানান, এজাহারের কপি পেয়ে তাঁর পরিচিত একজন মোবাইল ফোনে পাঠান। থানায় খোঁজ নিতে বলেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এটি ভুয়া। 

বড় বাজারের ব্যবসায়ী সমিতির দুই নেতাকেও মামলায় নাম দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে বাড়িতে পুলিশ পাঠানোর হুমকি দেওয়া হয়। ওই ব্যবসায়ী নেতা এক সাংবাদিককে জানালে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, সেটিও ভুয়া। 

বিভিন্ন ব্যক্তির মোবাইল ফোনে চাঁদা চাওয়া ব্যক্তির পরিচয় অনুসন্ধান করতে গিয়ে জানা যায়, তার নাম শাহাবুল ইসলাম। কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার বামনপাড়া এলাকার বাসিন্দা তিনি। তাঁর মোবাইল ফোনে কল দিলে মামলা বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেন। এ-সংক্রান্ত অডিও ক্লিপ আছে জানালে বলেন, ‘আমাকে একজন ফোন দিতে বলেছিল। তাই ফোন দিয়েছি। আমি কোনো টাকাপয়সা দাবি করিনি।’ পরে এ কাজে সাদ্দাম হোসেন নামে আরেকজন জড়িত বলে জানান। সাদ্দামের মোবাইল ফোনে কল দিলে তিনিও বিষয়টি অস্বীকার করেন। 

অনুসন্ধানে জানা গেছে, শাহাবুল, সাদ্দাম হোসেনসহ কয়েকজন এ কাজে জড়িত। তবে থানাপাড়ার মাহামুদুল হাসান রোমান নামে যে ব্যক্তিকে বাদী করা হয়েছে, ওই এলাকায় এ নামে কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাঁর নাম ব্যবহার করে ভুয়া এজাহার তৈরি করে ভীতি ছড়ানো হচ্ছে বলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে। 

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2