avertisements 2

হঠাৎ কেন আলোচনায়

বাঁশফুল কি আসলেই দুর্ভিক্ষ ডেকে আনে?

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৮ মে, বুধবার,২০২৪ | আপডেট: ১১:৩৬ পিএম, ৩০ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪

Text

সম্প্রতি দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার এলুয়াড়ী ইউনিয়নের পাকাপান গ্রামের একটি বাঁশ ঝাড়ে ফুল ফুটেছে। সেই বাঁশ ঝাড় থেকে ঝরে পড়া বীজ সংগ্রহ করে তা থেকে চাল উৎপাদন করেছে ঐ গ্রামের সাঞ্জু রায় নামক এক দিনমজুর। ওই বাঁশঝাড় থেকে ১০ মণ বীজ সংগ্রহ করেছেন তিনি। সাঞ্জু মিয়া জানান, চার মণ বীজ থেকে দুই মণ পরিমাণ চাল পেয়েছেন তিনি।

তিনি বলেন, বীজ ভাঙ্গিয়ে চাল তৈরি করে তা তিনি নিজের জন্য রেখেছেন। প্রতিবেশীদের কাছে বিক্রিও করেছেন। এমনকি, কিছু চাল তিনি বাঁশঝাড়ের মালিককে উপহার দেয়ার পাশাপাশি গবেষণার জন্যও দিয়েছেন।

হঠাৎ বাঁশের বীজ সংগ্রহ করার নেপথ্যের কারণ বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, এখন কাজকর্ম নাই, অভাবের টাইম। ফুল আসার তিন চার মাস পর যখন বীজ আসলো, তখন আমি ভাবলাম যে যদি এইখান থেকে চাল উৎপাদন করতে পারি, আমার উপকার হয়।

বাঁশ গাছের বীজ থেকে চাল কীভাবে?

প্রথমেই জেনে নেয়া প্রয়োজন, বাঁশ কোনও গাছই নয়। এটি মূলত এক ধরনের ঘাস এবং চির সবুজ বহু বর্ষজীবী উদ্ভিদ, যা নাতিশীতোষ্ণ ও গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলে জন্মায়। এদিকে, ধান কিংবা গমও কিন্তু ঘাস জাতীয় উদ্ভিদ। পার্থক্য হলো, বাঁশের আয়ুষ্কাল অনেক। আর, গম ও ধানের আয়ু কয়েক মাসের। এখন যেহেতু এগুলোর সব-ই একই গোত্রের, তাই এদের বীজেও সাদৃশ্য থাকা স্বাভাবিক। দিনাজপুরের কাটাবাঁশের ঝাড়ে যে বীজ হয়েছে, তা দেখতে অনেকটা গম বা ধান আকৃতির।

এ বিষয়ে মাহবুবুর রহমান আরও বলেন, সব বাঁশের বীজের আকার একই রকম না। বাংলাদেশের পাহাড়ি অঞ্চলে মূলি বাঁশ নামক এক ধরনের বাঁশ আছে। কিছু আছে সরিষার দানার মতো। সবচেয়ে বড়টা মূলি বাঁশের বীজ, সেটা পিঁয়াজের মতো। আবার এই কাটা বাঁশের বীজ গমের মতো।

বাঁশ গাছে কতদিন পরে ফুল ফোটে?

নীলফামারী জেলার ডোমার উপজেলায় অবস্থিত আঞ্চলিক বাঁশ গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের (আরবিআরটিসি) রিসার্চ অফিসার মো. আসাদুজ্জামান সরকার বলেন, বাঁশের জীবনকাল নির্ভর করছে তার প্রজাতির ওপর। একটি বাঁশ গাছে অন্তত ৪০ বছর থেকে শুরু করে ১২০ বছর বয়সেও ফুল ফুটতে পারে। প্রজাতিভেদে এটা ভিন্ন হয়। একটি বাঁশ গাছ তখনই ফুল দেয়, যখন সেই গাছের উৎপাদন সক্ষমতা শেষ হয়ে যায়।

দিনাজপুরে বাঁশফুল প্রসঙ্গে বাংলাদেশ বন গবেষণা ইন্সটিউটের চট্টগ্রামের বিভাগীয় কর্মকর্তা ড. মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ওই ঝাড়ের যেগুলোয় এ বছর ফুল আসছে, সেগুলো এবছরই শুকিয়ে মারা যাবে। যেগুলোয় আসে নাই, সেগুলোয় পরের দুই তিন বছর আসবে। এভাবে একটা সময় সব বাঁশ শুকিয়ে মারা যাবে।

এ বিষয়ে মাহবুবুর রহমান আরও বলেন, সেখানে আগামী দুই তিন বছর ওখানে প্রচুর বীজ উৎপাদন হবে। তাই বীজ সংগ্রহ করে ওখানে নতুন করে চারা রোপণ করা প্রয়োজন। চারা রোপন করলে পাঁচ থেকে ছয় বছরের মাঝে আবার বাঁশঝাড় হয়ে যাবে। সব বীজ চালে রূপান্তরিত না করে বরং সেগুলো সংগ্রহ করা প্রয়োজন বলে মনে করেন এই বন কর্মকর্তা।

দুর্ভিক্ষের সঙ্গে কি আসলেই বাঁশফুলের সম্পর্ক আছে?

বাঁশফুল সম্বন্ধে সমাজে কিছু কথা প্রচলিত আছে। বলা হয়, যদি কোনও বাঁশঝাড়ে ফুল ফোটে, তবে তা ঐ এলাকায় ‘ইঁদুর বন্যা’ ঘটায়। অর্থাৎ, সেখানে ইঁদুরের উৎপাত বেড়ে যায়। অনেকে আবার বলেন, যেখানে বাঁশফুল হয়, সেখানে অতিশীঘ্রই দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। এই কথাগুলো কি কেবলই কিছু প্রচলিত ধারণা।

এ বিষয়ে মাহবুবুর রহমান বলেন, যেখানে ধান হয়, সেখানে ইঁদুর থাকে। কারণ ধান ইঁদুরের পছন্দের একটি খাদ্য। বীজ খেলে ইঁদুরের ব্রিডিং ক্যাপাসিটি বেড়ে যায়। ফলে ঐ এলাকায় হঠাৎ করে ইঁদুরের সংখ্যা বেড়ে যায়।

এক সময় যখন বীজ শেষ হয়ে যায় তখন ওই ইঁদুর খাবারের জন্য আশেপাশের মানুষের বাড়িতে হানা দেয় ও ফুল চলে গেলে সেখানে দুর্ভিক্ষ বেড়ে যায়। কিন্তু একটি মাত্র বাঁশঝাড়ে এরকম ফুল থেকে ইঁদুর বন্যার সম্ভাবনা খুব বেশি থাকে না।

সূত্র: বিবিসি

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2