প্রধান শিক্ষককে বাড়িতে ডেকে নির্যাতনের অভিযোগ উপজেলা চেয়ারমানের বিরুদ্ধে
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১৩ নভেম্বর,সোমবার,২০২৩ | আপডেট: ০১:৪১ পিএম, ২০ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
যশোর সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগের সভাপতি মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরী।
স্কুলের সভাপতি হতে প্রধান শিক্ষককে বাড়িতে ডেকে নিয়ে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে যশোর সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগের সভাপতি মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে।
বুধবার ঘটনাটি ঘটলেও শুক্রবার বিষয়টি জানাজানি হয়। তবে এ ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন উপজেলা চেয়ারম্যান।
যশোর আদর্শ বহুমুখী বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল আমিন এরই মধ্যে এ নিয়ে এবং নিজের জীবনের অনিরাপত্তার কথা জানিয়ে যশোর কোতোয়ালি থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছেন।
যশোর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. আহসান হাবিব বলেছেন, তিনি প্রধান শিক্ষকের মাধ্যমে বিষয়টি জেনেছেন এবং বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শককে এ নিয়ে খোঁজ-খবর নিতে বলেছেন।
যশোর উপশহর বিরামপুর এলাকার বাসিন্দা প্রধান শিক্ষক নুরুল আমিন বলেন, যুবলীগ নেতা ও উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরী দীর্ঘদিন ধরেই যশোর আদর্শ বহুমুখী বালিকা বিদ্যালয়ের সভাপতি হতে চান। সম্প্রতি তিনটি পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হওয়ার পর তিনি ফোন করে ওই নিয়োগ কার্যক্রম বাতিলের নির্দেশ দেন। চেয়ারম্যান বলেন, তিনি সভাপতি হয়ে এই নিয়োগ সম্পন্ন করবেন।
“কিন্তু কথা না রাখায় ৩১ অক্টোবর আমাকে একটি পার্কে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর চেয়ারম্যান ও তার লোকজন ২ নভেম্বরের বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির নির্বাচন বন্ধের জন্য আমার ওপর নির্যাতন চালান। এবং আমাকে দিয়ে আবেদনপত্র লিখিয়ে নিয়ে সেই নির্বাচন বন্ধ করান।”
প্রধান শিক্ষক বলেন, “পরবর্তীতে ৯ নভেম্বর বিদ্যালয়ে অভিভাবক সমাবেশ আহ্বান করলে ক্ষিপ্ত হন মোস্তফা ফরিদ আহমদ চৌধুরী। ৭ নভেম্বর ফোন করে নিজের বাড়িতে ডেকে পাঠান আমাকে। পরদিন সকালে উপজেলা চেয়ারম্যানের বাড়িতে গেলে প্রায় দুই ঘণ্টা আটকে রেখে আমার ওপর নির্যাতন চালানো হয় এবং অভিভাবক সমাবেশ বন্ধ করে দেওয়া হয়।
“উপজেলা চেয়ারম্যান ও তার লোকজন আমার গোপনাঙ্গ, মাথা ও মুখে ব্যাপক আঘাত করেন। আমাকে যখন ছেড়ে দেওয়া হয় তখন বাইরে এসে আমি লোকজনের সামনে প্রশ্রাব করে দিই। তারপর আমার স্ত্রীর সহায়তায় হাসপাতালে ভর্তি হতে গেলে বাধা দেওয়া ও খুনের হুমকি দেওয়া হয়।”
নুরুল আমিন বলেন, “আমি ভয়ে বাড়ি ফিরে আসি এবং গোপনে চিকিৎসা নিচ্ছি। আমি যাতে কাউকে কিছু না বলি সেজন্য আমাকে প্রতিদিনই হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আপনারা (সাংবাদিক) কীভাবে জেনেছেন জানি না, এর দায়ও কিন্তু আমার ঘাড়ে আসবে। বর্তমানে পরিবার-পরিজন নিয়ে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।
“এরপর ৯ নভেম্বর উপজেলা চেয়ারম্যান তার লোকজন নিয়ে বিদ্যালয়ে হাজির হন এবং নিজেকে সভাপতি ঘোষণা করেন। এ সময় বিদ্যালয়ে উপস্থিত বর্তমান সভাপতি অ্যাডভোকেট মোকাররম হোসেনকে লাঞ্ছিত করে স্কুল থেকে বের করে দেন তিনি।”
এ নিয়ে বিভিন্ন দপ্তরের অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাননি বলে অভিযোগ করেন প্রধান শিক্ষক।
স্কুলের বর্তমান সভাপতি মোকাররম হোসেন বলেন, “অভিভাবক সমাবেশ বন্ধ করা হলেও আমি ৯ নভেম্বর স্কুলে যাই। খবর পেয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান লোকজন নিয়ে স্কুলে আসেন। এ সময় তার লোকজন আমাকে লাঞ্ছিত করে এবং স্কুল থেকে বেরিয়ে যেতে বাধ্য করে।
“সে সময় উপজেলা চেয়ারম্যান প্রধান শিক্ষকের কক্ষে ছিলেন। তিনি সবাইকে শুনিয়ে বলেন, এখন থেকে এই বিদ্যালয়ের সভাপতি আমি, আমার নির্দেশে সব কার্যক্রম চলবে।
“আমি বিভিন্ন দপ্তরে বিষয়টি জানিয়েছি কিন্তু কোনো প্রতিকার পাইনি। এই স্কুলটি একটি অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে গেল”, যোগ করেন সভাপতি মোকাররম হোসেন।”
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে শনিবার উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা ফরিদ আহমদ চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সামনে স্কুল পরিচালনা কমিটির নির্বাচন তাই আমার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ আমাকে নিয়ে এই অপপ্রচার করছে।”
শিক্ষকের অভিযোগ দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে যশোর কোতোয়ালি থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এসআই শারমিন আক্তার বলেন, “প্রধান শিক্ষক নুরুল আমিন একটি অভিযোগ দিয়েছেন। কিন্তু স্কুলটি শহর ফাঁড়ির মধ্যে পড়েছে। তাই বিষয়টি তদন্ত করার জন্য তাদের কাছে পাঠানো হয়েছে।”