avertisements 2

জীবিত ১৯৬ জন মৃতের তালিকায়

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২৫ মার্চ,শনিবার,২০২৩ | আপডেট: ০৬:০৩ এএম, ২৩ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪

Text

বৃদ্ধা জয়গন বেগম। ভোটার হালনাগাদে ২০১৪ সালের ৮ আগস্ট তাঁকে মৃত দেখানো হয়েছে। অথচ তিনি জীবিত। মৃত দেখানোর কারণে কয়েক বছর ধরে বিধবা ভাতা থেকে বঞ্চিত তিনি। এমন ভুলের জন্য তথ্য হালনাগাদকারীকে দায়ী করছেন স্বজনরা।

জয়গনের নাতনি রোমা আক্তার বলেন, ‘আমার দাদির নামে একটি বিধবা ভাতা কার্ড ছিল। এক বছর আগে সেই কার্ডের ভাতা তুলতে গেলে উপজেলা সমাজসেবা অফিস থেকে জানানো হয় দাদি মারা গেছেন কয়েক বছর আগে। তারপর নির্বাচন অফিসে গেলে সেখানে ভোটার আইডি নম্বর সার্চ দিলে আমার জীবিত দাদিকে মৃত দেখানো হয়। যার কারণে ভাতা বন্ধ।’

টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলায় ২০২২ সালের হালনাগাদে ১৯৬ ভোটারকে মৃত দেখানো হয়। এর মধ্যে আবেদনের ভিত্তিতে ২৭ জনের ভুল সংশোধন করা হয়েছে। এখন কাগজে–কলমেও জীবিত তাঁরা। বাকিদের ভুল তথ্য সংশোধনে যাচাই–বাছাই চলছে।

আলমনগর ইউনিয়নের কামারকুমুল্লী গ্রামে জয়গন বেগমের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, বাড়িতে কাজ করছেন তিনি। তাঁর স্বামী ইউসুফ আলী কয়েক বছর আগে মারা গেছেন। কোনো সন্তান না থাকায় স্বামীর জমি বিক্রি করে কয়েক বছর ধরে তাঁর ভাইয়ের বাড়ি বড়কুমুল্লী গ্রামে বসবাস করছেন।

জয়গনের মতো আরেক ভুক্তভোগী ধোপাকান্দি ইউনিয়নের বিষ্ণুপুর গ্রামের নিতাই চন্দ্র দাসের স্ত্রী সাবিত্রী রানী। তিনি অভিযোগ করেন, ভোটার হালনাগাদে তাঁকে মৃত দেখানো হয়েছে। গত ১৯ মার্চ মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট করতে গিয়ে বিষয়টি জানতে পারেন তিনি। পরে নির্বাচন অফিসে গেলে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানের কাছ থেকে জীবিতের সনদপত্র নিতে বলা হয়। এরপর ধোপাকান্দি ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলামের কাছ থেকে গত ২০ মার্চ জীবিত থাকার প্রত্যয়নপত্র সংগ্রহ করেন। একইভাবে পৌরসভার গাংগাপাড়া গ্রামের আমান আলীর ছেলে শফিকুল ইসলাম, জোত বিষ্ণুপুর গ্রামের নিতাই দাসের ছেলে দীপক দাস, গান্দাইল গ্রামের আবু হানিফা ও মনতলা গ্রামের রোকেয়া বেগমসহ ২৭ জনকে মৃতের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করায় তাঁরা বয়স্ক ভাতা থেকে বঞ্চিত। মৃতের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় ভাতা বা ব্যাংকে থাকা টাকা তুলতে হয়রানির শিকার হয়েছেন। তাঁরা উপজেলা নির্বাচন অফিসে আবেদন করে মৃত তালিকা থেকে তাঁদের নাম প্রত্যাহার করে জীবিত হতে সক্ষম হয়েছেন।

উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মতিউর রহমান জানান, ভোটার তালিকা হালনাগাদের জন্য মাঠকর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়। তাঁরা সবাই ছিলেন স্কুল শিক্ষক। তাঁদের তথ্য হালনাগাদে প্রশিক্ষণ ও কাজের নিয়মাবলি শিখিয়ে দেওয়া হয়। বাড়ি বাড়ি ঘুরে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করেন তাঁরা। কিন্তু ভুল করে মৃত তালিকার নির্ধারিত ১২ নম্বর ফরমে তথ্য সংগ্রহ করেন নির্বাচন অফিসে জমা দেন তাঁরা। তিনি আরও বলেন, ২০০৭ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত গোপালপুর উপজেলায় ২৭ জনকে মৃত দেখানো হয়েছে। তাঁদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ভুল সংশোধন করা হয়েছে। এ ছাড়া ১৯৬ জনের সঠিক তথ্য খুঁজে বের করে সংশোধনের চেষ্টা চলছে।

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এ এইচ এম কামরুল হাসান বলেন, সংগ্রহকারীরা যে তথ্য দিয়েছেন, সেই তথ্যই ডাটাবেজে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। তারপরও বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া আবেদন করলেই উপজেলা নির্বাচন অফিস থেকে দ্রুতই তাঁদের তালিকা সংশোধন করে দেওয়া হচ্ছে।  

গোপালপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসফিয়া সিরাত বলেন, ভোটার হালনাগাদের তথ্য সংগ্রহকারীরা জীবিত ১৯৬ জনকে মৃতের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছেন। তথ্য সংগ্রহকারীদের খুঁজে বের করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2