avertisements 2

মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়ে

মিষ্টি নিয়ে হাজির আইসিইউতে ভর্তি সেই মেয়েটি

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১৫ মার্চ, বুধবার,২০২৩ | আপডেট: ০৪:৩০ পিএম, ১৪ জানুয়ারী,মঙ্গলবার,২০২৫

Text

নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় পড়ে গিয়ে প্যারালাইজড হওয়ায় শ্রুতিলেখকের মাধ্যমে পরীক্ষা, তার পর শ্বাসকষ্টে টানা এক মাস নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউতে) ভর্তি ছিলেন। সঙ্গে ভেন্টিলেশন। এক পর্যায়ে মেয়ের বাঁচার আশা ছেড়েই দিয়েছিলেন মা-বাবা। এদিকে আইসিইউর যন্ত্রণা কাটলেও দুই মাস ফিজিওথেরাপি দিতে হয়। এর পর মেয়েটি পড়ার টেবিলে বসে। সেই মেয়ে এবার ঢাকার সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। মেয়েটির নাম ফারিহা আফরিন।

মেয়েটির বাড়ি রাজশাহী মহানগরীর বুলনপুর ঘোষপাড়ায়। মেডিক্যালে ভর্তির সুযোগ পেয়ে সোমবার (১৩ মার্চ) দুপুরে মাকে সঙ্গে করে মিষ্টি নিয়ে হাজির হন রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের আইসিইউর ইনচার্জ ডা. আবু হেনা মোস্তফা কামালের চেম্বারে। ডা. মোস্তফা কামাল তো মেয়েটিকে মিষ্টি হাতে দেখে হতবাক। প্রথমে বুঝতে পারেননি কেন? তাঁর কাছে এই উপহার নিয়ে আসা। পরে জানতে পারেন, চার বছর আগে মেয়েটি টানা এক মাস আইসিইউতে চিকিত্সাধীন ছিলেন। প্রতিদিন মনে হতো আজই তার শেষ দিন। ডা. আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, ‘সব রোগীকেই আমরা একই রকম যত্ন নিই। কিন্তু এই মেয়েটি আমাকে মনে রেখেছে, এ জন্য ভালো লাগছে।’

যোগাযোগ করা হলে ভুক্তভোগী ফারিহা আফরিন জানান, তার মৃত্যুর সঙ্গে লড়াইয়ের গল্প। বলেন, ‘আমার অতীতের অসুস্থতা ছিল আরো ভয়াবহ। আমি যখন নবম শ্রেণিতে পড়তাম, তখন আমার ‘জিবিএস’ হয়েছিল। এটা এক রকম ভাইরাস দিয়ে সংক্রমিত। আমি তখন বার্ষিক পরীক্ষা দিচ্ছিলাম। প্রথম আমার একটি হাত প্যারালাইজড হয়ে যায়। লিখতে পারছিলাম না। তার পরও আমি স্কুলে পরীক্ষা দিতে যাই। ঐ দিন আমি বাথরুমে পড়ে গিয়েছিলাম। তখন আমার পা প্যারালাইজড হয়ে যায়। তবু আমি পরীক্ষা দিতে চাই। শেষ পর্যন্ত আমার স্কুলের শিক্ষকেরা সপ্তম শ্রেণির একটি মেয়েকে শ্রুতিলেখক হিসেবে নিয়ে পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ দেন।’

ফারিহা বলতে থাকেন, ‘আমি উত্তর বলি আর ঐ মেয়ে লিখে। এর পর আমার প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট শুরু হলো। আমি আর কথা বলতে পারি না। পদার্থবিজ্ঞান পরীক্ষাটা আর দেয়াই হলো না। প্রথম অর্ধবার্ষিক পরীক্ষার নম্বর গড় করে আমাকে পাস করিয়ে দেয়া হয়। আর আমাকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নেয়া হলো। সারা দিন আমি ক্যাজুয়ালিটি বিভাগে পড়ে থাকলাম। কোনো চিকিত্সক ছিলেন না।

এর পর আমাকে একটি বেসরকারি হাসপাতালের নিউরোলজি বিভাগের চিকিত্সকের কাছে নেয়া হলো। ঐ চিকিত্সক আমাকে আইসিউতে ভর্তির সুপারিশ করলেন। কিন্তু রামেক হাসপাতালে আইসিইউর শয্যা ফাঁকা না থাকায় আমাকে বেসরকারি একটি হাসপাতালের আইসিইউতে নেয়া হয়। আমি তখন মৃত মানুষের মতো হয়ে গিয়েছিলাম। চোখের পাতা পর্যন্ত নাড়াতে পারতাম না। এক দিন পর রামেক হাসপাতালের আইসিইউতে শয্যা পাওয়া গেল। আমি সেখানে টানা এক মাস চিকিত্সাধীন ছিলাম। পুরো সময় আমাকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়।’

ফারিহা বলেন, ‘২০১৯ সালের প্রথম দিন, ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে আমাকে বাসায় আনা হলো। তার পর প্রায় দুই মাস আমাকে ফিজিওথেরাপি দেয়া হয়। আমি ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠলাম। ২০২০ সালে পিএন সরকারি বালিকা বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও ২০২২ সালে কাশিয়াডাঙ্গা কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিলাম। এবার সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছি। সংবাদটি শোনার পরেই আমার মনে হয়েছে, আমি আইসিইউতে এক মাস মৃত মানুষের মতো ছিলাম। আমার বাবা এক মাস হাসপাতালের বারান্দায় কাটিয়েছেন। অনেক রাতে বাবার কাছে খবর গেছে যে আমি মারা গেছি। সে অবস্থা থেকে আমি আজ মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছি। আইসিইউর ইনচার্জ ডা. আবু হেনা মোস্তফা কামালের অবদানের কথা কোনো দিন ভুলতে পারব না। সেজন্যই মাকে সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলাম।’

ফারিহা আফরিনরা দুই ভাই-বোন। বড় ভাই রাজশাহী প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। মা লায়লা আঞ্জুমান একটি কলেজের প্রদর্শক। বাবা মো. আনোয়ার হোসেন কৃষিভিত্তিক ব্যবসায়ী বলেন, ‘টানা এক মাস হাসপাতালের বারান্দায় কাটিয়েছি। আমার সেই মেয়ে সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যালে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে।’

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2