avertisements 2

একের পর এক বিস্ফোরণ-আগুন, কীসের আলামত?

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১৪ মার্চ,মঙ্গলবার,২০২৩ | আপডেট: ০৬:৪০ এএম, ১১ মে,শনিবার,২০২৪

Text

দেশের বিভিন্ন স্থানে একের পর এক বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। এই ঘটনাগুলো স্বাভাবিক দুর্ঘটনা নাকি নাশকতা? প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনে মাঠে কাজ করছে পুলিশ, র‌্যাবসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা। একের পর এক এমন ঘটনা ভাবিয়ে তুলছে দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে। কয়েক দিন আগে সীতাকুণ্ডে কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় ব্যাপক প্রাণহানি হয়। এরপর রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবের পর গুলিস্তানের সিদ্দিকবাজারের একটি ভবনে বিস্ফোরণ হয়। ওই বিস্ফোরণে ২৪ জন সাধারণ মানুষ প্রাণ হারায়। গত রোববার নারায়ণগঞ্জের মাসদাইর এলাকার এমএফ টাওয়ারের ছয়তলার একটি ফ্ল্যাটে বিস্ফোরণের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় গর্ভবতী নারী দগ্ধ হন। সর্বশেষ গত সোমবার সন্ধ্যায় তেজগাঁওয়ের বস্তিতে আগুন লাগে। এভাবে একের পর বিস্ফোরণ ও আগুনের ঘটনা ভাবিয়ে তুলছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের। কেন এ ধরণের ঘটনা হঠাৎ করে বেড়ে চলেছে? তবে এসব ঘটনায় এখন পর্যন্ত নাশকতার কোনো আলামত পাইনি বলে জানান পুলিশের আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। তিনি বলেন, প্রতিটি ঘটনা আমরা অধিকতর তদন্ত করে দেখছি। র‌্যাব ডিজি মো. খুরশীদ হোসেন বলেন, একের পর এক দুর্ঘটনার বিষয়টি সন্দেহজনক ভেবে র‌্যাবের গোয়েন্দারা কাজ করছেন।

২০২১ সালের ২৭ জুন সন্ধ্যায় রাজধানীর মগবাজারে একটি তিনতলা ভবনে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে মারা যান ১২ জন, আহত হন দুই শতাধিক লোক। ঘটনাস্থলে অনেক যানবাহন ও ভবন এই বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই ঘটনার পর রাজধানীর ভবনগুলোতে সেপটিক ট্যাংক, স্যুয়ারেজ লাইন, বিদ্যুৎ ও গ্যাসলাইন সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়টি সামনে চলে আসে। কিন্তু কিছু দিন পর এসব রক্ষণাবেক্ষণ মনিটরিং করার কার্যকর কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি। সচেতনমহলের ধারণা, এসব রক্ষণাবেক্ষণের অভাবেই সাম্প্রতিক বিস্ফোরণের ঘটনাগুলো ঘটেছে।

চলতি সপ্তাহের গত চার দিনে চারটি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ৩০ জন। যেখানে রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবে একটি ভবনে বিস্ফোরণে তিন জন মারা যাওয়ার ক্ষতই এখনো শুকায়নি সেখানে ওই ঘটনার দুদিন পরই বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে সিদ্দিকবাজার। গত মঙ্গলবার বিকালে পুরান ঢাকার সিদ্দিকবাজারে সাততলা ভবনে ঐ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২৪ জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে। এ সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। গত শনিবার বিকালে সীতাকুণ্ডে অক্সিজেন-গ্যাস উৎপাদন কারখানায় বিস্ফোরণে নিহত হন সাতজন। ওইদিন ভোরেই আবার রাজধানীর গুলশানে এসি বিস্ফোরণে দগ্ধ হন দুজন। তাদের মধ্যে গোপাল মল্লিক নামে একজন মারা যান। এর আগেও দেশে অনেক ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটেছে। গত বছরে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিএম ডিপোতে বিস্ফোরণে ৫১ জনের মৃত্যু হয়। ২০২১ সালের ২৭ জুন রাজধানীর মগবাজারে বিস্ফোরণে মৃত্যু হয় ১২ জনের। এর আগে গ্যাসলাইন লিক থেকে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে নারায়ণগঞ্জেও। ২০২০ সালের ৪ সেপ্টেম্বর রাতে নারায়ণগঞ্জের বাইতুস সালাত জামে মসজিদে বিস্ফোরণে ইমামসহ ৩১ জন প্রাণ হারান। গত ২ ফেব্রুয়ারি ভাটারায় গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে স্বামী-স্ত্রীর মৃত্যু হয়। গত ডিসেম্বরে মিরপুরে এসি বিস্ফোরণে দগ্ধ হয়ে আরিয়ান নামে ১৪ বছরের এক কিশোর মারা যায়। ১২ জানুয়ারি সাভারে সিলিন্ডারের লিকেজ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে দগ্ধ হয়ে সাদিয়া নামে সাত বছরের এক শিশুর মৃত্যু হয়। গত ১৫ অক্টোবর রাজধানীর শ্যামপুরের জুরাইন কবরস্থান রোডে তিতাস গ্যাসের লাইনে কাজ করার সময় বিস্ফোরণে দ্বগ্ধ হন পাঁচ শ্রমিক। সংশ্লিষ্ট সরকারি দায়িত্বশীল সংস্থাগুলোর উদাসীনতায় প্রায় প্রতিদিন বাড়ছে এসব ঘটনা। অন্যদিকে দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর মিছিলও। পুরান ঢাকার সিদ্দিকবাজারের বিস্ফোরণের ঘটনায় এক এক করে সরকারি সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর উদাসীনতার বিষয়টি আসছে প্রকাশ্যে।

বুয়েটের একাধিক বিশেষজ্ঞ, রাজউকের শীর্ষ কর্মকর্তা ও সিদ্দিকবাজারের ঘটনার একাধিক তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, সিদ্দিক বাজারে ভয়াবহ বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত ক্যাফে কুইন ভবন সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। রাজউক কর্মকর্তারা বলেন, ভবনের মাটির নিচের জলাধার, পাইপলাইন, গ্যাস ও বিদ্যুৎলাইন প্রতি তিন মাস অন্তর রক্ষণাবেক্ষণ করতে হয়। কিন্তু অধিকাংশ ভবনে তা করা হচ্ছে না। কোনো একটি ঘটনা ঘটলে অনেকের টনক নড়ে। কিন্তু কিছুদিন পরে আর কার্যকরী কোনো উদ্যোগ থাকে না। এটা দায়িত্বে গুরুতর অবহেলার সামিল। দায়িত্বে অবহেলায় জড়িতদের কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা উচিত বলে তারা মন্তব্য করেন।

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2