একই শহরে এক রাতে অর্ধশত বিয়ে!
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১১ মার্চ,শনিবার,২০২৩ | আপডেট: ০৮:৫৪ পিএম, ২৪ ডিসেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
ফাল্গুনের বাকি আর মাত্র ৬ দিন। আসছে চৈত্র মাস। হিন্দুরীতি অনুযায়ী চৈত্রে কোনো শুভদিন নেই বিয়ের জন্য। ফলে একটি শুভদিনের জন্য অপেক্ষা করতে হবে আরও দেড়মাস, অর্থাৎ বৈশাখ। তাইতো কালবিলম্ব না করে ছেলে-মেয়ে, ভাই কিংবা বোনের বিয়ের জন্য বৃহস্পতিবার (৯ মার্চ) দিনটিকে বেছে নিয়েছে শেরপুরের অন্তত ১০০ পরিবার।
বৃহস্পতিবার (৯ মার্চ) শেরপুর জেলা শহরে এক রাতে হিন্দু সম্প্রদায়ের অর্ধশত বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। এতে একদিকে যেমন পুরোহিত সঙ্কট দেখা দিয়েছে অন্যদিকে ছিল বাড়তি চাহিদা ছিল বাজনাওয়ালাদের।
গণমাধ্যমকে পুরোহিত বাবলু গোস্বামী ও বাবু চক্রবর্তী অর্ধশত বিয়ের তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
পুরোহিত ও বিয়েবাড়ির লোকজন জানিয়েছেন, হিন্দু পঞ্জিকামতে আগামী ১৬ মার্চ বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হচ্ছে বাংলা ১৪২৯ সালের চৈত্র মাস। হিন্দু ধর্মীয় শাস্ত্র অনুযায়ী চৈত্র মাসে বিয়ের অনুষ্ঠান হয় না। কিন্তু গত ২৪ ফাল্গুন বৃহস্পতিবার ছিল বাংলা ১৪২৯ সালের হিন্দু সম্প্রদায়ের ছেলে-মেয়ের বিয়ের শেষ শুভদিন। এদিন বিয়ে না হলে বিয়ের পরবর্তী দিনক্ষণের জন্য ১৪৩০ সালের বৈশাখ মাস পর্যন্ত। অর্থাৎ আরও প্রায় দেড়মাস অপেক্ষা করতে হবে। তাই ছেলে-মেয়ের অভিভাবকেরা নিজ সন্তানদের চলতি ফাল্গুন মাসের শেষ শুভ দিনটিতে বিয়ে দেওয়ার জন্য ওঠে পড়ে লেগেছিলেন।
এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার দিবাগত গভীর রাতে শেরপুর শহরের বিভিন্ন এলাকায় প্রায় অর্ধশত হিন্দু বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়। এই উপলক্ষে বিয়েবাড়ি ও কমিউনিটি সেন্টারগুলো আলো ও বাজনায় মুখরিত হয়ে ওঠে। পাশাপাশি শহরে বিপুলসংখ্যক বরযাত্রীর আগমন ঘটে। দূর-দূরান্ত থেকে আসা বরযাত্রীদের রাতযাপনের জন্য শহরের আবাসিক হোটেলগুলো ছিল পরিপূর্ণ।
তবে এক দিনে এতগুলো বিয়ে অনুষ্ঠিত হওয়ায় বাদ্যওয়ালাদের ব্যাপক চাহিদা দেখা দেয়। এই সুযোগে তারা স্বাভাবিক পারিশ্রমিকের চেয়ে পাত্র-পাত্রীর অভিভাবকদের কাছ থেকে বেশি টাকা আদায় করেন।
জেলা শহরের তেরাবাজার এলাকার একটি বিয়েবাড়িতে আসা বরযাত্রী জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার বাবন কুমার সাহা জানান, মাত্র ১৫ দিন আগে তার শ্যালকের বিয়ে ঠিক হয়েছিল। বৃহস্পতিবার চলতি বাংলা বছরের বিয়ের শেষ দিন হওয়ায় অল্প সময়ের মধ্যেই তার শ্যালকের বিয়ে করিয়ে নিলেন।
শহরের মুন্সিবাজার এলাকার ব্যবসায়ী বিবেকান্দ্র রায় জানান, আর মাত্র এক সপ্তাহ পরেই চৈত্র মাস। চৈত্র মাসে কোনো বিয়ে হবে না। তাই তড়িঘড়ি করে ফাল্গুন মাসের বিয়ের শেষ দিনটিতে তার মেয়ের বিয়ে দিলেন।
পুরোহিত বাবু চক্রবর্তী ঢাকা মেইলকে বলেন, শেরপুরে বর ও কন্যা উভয়পক্ষ কালবিলম্ব না করে বিয়ের জন্য ফাল্গুনের শেষ শুভদিনটি বেছে নেন। তাদের মঙ্গল কামনা করছি।
শেরপুরের পুরোহিত বাবলু গোস্বামী বলেন, কথায় আছে ‘শুভ কাজে বিলম্ব করতে নেই’। চৈত্র মাসে হিন্দু বিয়ে হয় না। আর ফাল্গুন মাসের শেষ দিনটিতে বিয়ে না হলে ছেলে-মেয়ের অভিভাবকদের প্রায় দেড়মাস অপেক্ষা করতে হবে। এতে অনেক সময় নানা ধরনের বাধা-বিপত্তি আসতে পারে। তাই সেই চিন্তা মাথায় রেখে ছেলে-মেয়ের অভিভাবকেরা বৃহস্পতিবারের শুভদিনটিকে কাজে লাগিয়েছেন। দিনটি ছিল আনন্দের, তাই উৎসবমুখর পরিবেশ ছিল প্রতিটা বাড়ি। আর পুরো শহরে পড়ে গেছে হৈ হুল্লোড়।