শিকলবন্দী হয়ে থাকা রব্বানীর এ কেমন জীবন!
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৮ ফেব্রুয়ারী,
বুধবার,২০২৩ | আপডেট: ০৫:৫৮ এএম, ২৫ ডিসেম্বর,
বুধবার,২০২৪
ছবি: সংগৃহীত
বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার পারশুন গ্রামের ক্ষুদে পাড়ার ২৫ বছর বয়সী রব্বানী হোসেনের জীবন তিন বছর ধরে শিকলে বন্দী হয়ে আছে। দরিদ্র পরিবারের শেষ সম্বল ১০ কাঠা জমি বিক্রি করে চিকিৎসা করালেও বর্তমানে অর্থেভাবে ভারসাম্যহীন এ যুবকের চিকিৎসা বন্ধ হয়ে আছে।
মঙ্গলবার (৭ ফেব্রুয়ারি) সরেজমিনে দেখা গেছে, রব্বানীর পরিবারের থাকার মতো দুইটা মাটির ঘর আছে। ঘরের সামনের দরজার দেয়ালের মাঝে ছোট একটি ফাঁকা জানালার ওপর বসে আছে রব্বানী। হাতে শিকল, জানালার সঙ্গে শিকলে তালা লাগানো। তিনি কখনো দাঁড়িয়ে, কখনো শুয়ে বসে সময় কাটাচ্ছেন। কখনও হাসে তো কখনও কাঁধে। মাঝেমাঝে কথা বলে, তবে অস্পষ্ট। অনেক সময় অস্বাভাবিক আচরণের সঙ্গে চিৎকার শুরু করে।
তার এ অবস্থা জন্য নিয়ে উদ্বিগ্ন বাবা-মা ও বৃদ্ধ দাদি গণমাধ্যমের সামনে কান্নায় ভেঙে পড়লেন।
পরিবার জানায়, পারশুন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে রব্বানী। ২০১৮ সাল থেকে হঠাৎই তিনি মানসিক ভারসাম্য হারায়। এরপর থেকে আস্তে আস্তে অবস্থার অবনতি হতে থাকে আর নিত্যদিনের সঙ্গী হয় লোহার শিকল। ২০১৯ সালে বাড়িতেই তাকে শিকল বন্দী করা হয়। এ অবস্থায় চলে চিকিৎসা। রব্বানীর বাবা গোলাম মোস্তফা অন্যের জমিতে কাজ করেন। তার মা মর্জিনা বেগম নিজেও নানা রোগে ভুগছেন। এরপরও অসুস্থ সন্তানের যত্ন নিচ্ছেন। তবে অর্থেভাবে তার চিকিৎসা বন্ধ হয়ে গেছে। পরিবারে দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে রব্বানী সবার বড়।
তার চিকিৎসা সহযোগিতার জন্য বগুড়া জেলা প্রশাসক ও নন্দীগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সুদৃষ্টি কামনা করেছে রব্বানীর পরিবার।
থালতা-মাঝগ্রাম ইউনিয়নের পরিষদের (ইউপি) সদস্য আনোয়ার হোসেন বলেন, হাসিখুশি, শান্ত এবং ভদ্র স্বভাবের রব্বানী তার বাবার সাথে কৃষি কাজ করতো। ২০১৮ সালে হঠাৎই তিনি মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তার আচরণ অস্বাভাবিক হয় এবং বেশ কয়েকবার বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়ে যান। পরিবারের লোকজন বগুড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় খোঁজাখুঁজি করে তাকে আবার বাড়িতে আনে। পরিবার যখন সচ্ছল ছিল, তখন রব্বানীর চিকিৎসা চালিয়ে গেছে। বর্তমানে তাদের সংসারেই টানাটানি।
রব্বানীর মা মর্জিনা বেগম কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, দিনে ও রাতে ছেলের পায়ে, কখনো হাতে শিকল দিয়ে বেঁধে রেখে ঘুমানোর ব্যবস্থা করি। এ দৃশ্য মা হয়ে সহ্য করতে পারছি না। গরীব মানুষ, ঠিকমতো সংসার চালানোই আমাদের পক্ষে সম্ভব হয় না। ছেলের উন্নত চিকিৎসা করব কীভাবে?