সিজার টেবিল থেকে জীবন বাঁচাতে ওসির দরজায়
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২৬ সেপ্টেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৩ | আপডেট: ১০:৪৭ এএম, ১৯ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার চর বাঘমারা এলাকার আমিনুল ইসলামের স্ত্রী আমেলা বেগম (২৫)। তাদের ১২ বছরের দাম্পত্য জীবন। এই সময়ে চার সন্তানের জন্ম হয়েছে। বেঁচে আছে দুই মেয়ে ফাতেমা (১১) ও কুলসুম (৯)। জন্মের পরে মারা গেছে পুত্রসন্তান। আরেক সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগেই প্রযুক্তির সহায়তায় এই দম্পতি জানতে পারে অনাগত শিশুটি মেয়ে।
আমেলার অভিযোগ, এরপর নানা নির্যাতনের শিকার হন তিনি। স্বামী ও পরিবার নানাভাবে হত্যার হুমকি দিয়ে আসছিল। সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সকালে প্রসব বেদনা শুরু হলে আমেলা স্থানীয় ক্লিনিকে যান। সেখানেও আমিনুল অনাগত সন্তান ও প্রসূতিকে হত্যার হুমকি দেন।
সন্তান প্রসবের পানি ভাঙতে শুরু করে, শুরু হয় প্রসব যন্ত্রণা। চিকিৎসক অস্ত্রোপচারের (সিজার) প্রস্তুতি নেন। এমন সময় সকলের চোখ এড়িয়ে আমেলা প্রায় দেড় কিলোমিটার হেঁটে পৌঁছান রৌমারী থানায়।
উপজেলা সদরের নিরাময় হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়গনেস্টিক সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তৌহিদুর রহমান বলেন, ‘সোমবার সকালে প্রসব বেদনাসহ আমেলা হাসপাতালে আসেন। রোগীর পানি ভাঙছিল। তিনি ভর্তি হওয়ার পরেই সিজারের প্রস্তুতি নেওয়া হয়। এ সময় স্বামীসহ কয়েকজন স্বজন আসেন। মেয়ে সন্তানের বিষয় নিয়ে তাদের দ্বন্দ্ব শুরু হয়। আমরা তাদের পারিবারিক বিষয় নিজেদের মেটাতে বলি। পাশাপাশি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ডাকতে বলি। এরইমধ্যে সবার চোখ এড়িয়ে আমেলা অসুস্থ অবস্থায় থানা চলে যান। পরে পুলিশ এসে বিষয়টা সমাধান করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘থানা-পুলিশসহ বিভিন্ন পক্ষকে বিষয়টি জানিয়ে সমাধান করতে ৯ ঘণ্টা চলে যায়। ফলে পেটে থাকা শিশুর হার্টবিট কমে যাচ্ছিল। আমাদের এনআইসিইউ না থাকায় প্রসবপরবর্তী ঝুঁকি এড়াতে প্রসূতিকে অন্য হাসপাতালে পাঠিয়ে দেই। সর্বশেষ জানতে পেরেছি, শেরপুরের একটি ক্লিনিকে তার সিজার হয়েছে।’
শেরপুরের একতা বন্ধন হাসপাতালের কর্তব্যরত এক চিকিৎসক জানান, সোমবার রাত ১১টা ৩৫ মিনিটে আমেলা একটি কন্যা শিশু প্রসব করেন। বাচ্চার অবস্থা ভালো। মা মানসিকভাবে কিছুটা দুর্বল।
ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রুপকুমার সরকার বলেন, ‘সোমবার বিকেলে থানায় আসেন আমেলা। তিনি আমাকে জানান, মেয়ে সন্তান জন্ম নেবে জেনে তার স্বামী তাকে ও অনাগত সন্তানকে হত্যার চেষ্টা করছে। সন্তান ও নিজের জীবনের নিরাপত্তা চান ভীতসন্ত্রস্ত আমেলা।’
এরপর ওসি আমেলাকে আশ্বস্ত করে হাসপাতালে ফেরান। আর তার স্বামীকে নেওয়া হয় থানায়। কাউন্সিলিংয়ের পাশাপাশি স্ত্রী ও সন্তানের কোনো ক্ষতি হয় এমন কাজ করতে নিষেধ করা হয়।
ওসি রুপকুমার সরকার বলেন, ‘স্বামী আমিনুল ইসলামকে বোঝানো হয়েছে যে, বারবার কন্যা সন্তান জন্মদানে মায়ের কোনো ভূমিকা নেই। এ ক্ষেত্রে বাবার শুক্রাণু ক্রোমোজোম দায়ী উল্লেখ করে বিজ্ঞানভিত্তিক বিভিন্ন তথ্য দিয়ে কাউন্সিলিং করা হয়েছে। এরপর ওই বাবা তার ভুল বুঝতে পেরে স্ত্রীকে নির্যাতন না করার প্রতিশ্রুতি দেন।’
আমিনুল ইসলাম সমকালকে বলেন, ‘শুরুতে বিষয়টি বুঝিনি। ওসি স্যার পরে বুঝেছি। মাইয়া বাচ্চা হইছে, তাতেও এখন খুশি। আমি আর আমার স্ত্রীরে কিছু বলব না।’
ভুক্তভোগী আমেলা বেগম জানান, মেয়ে ও তিনি এখন নিরাপদে আছেন। তিনি ধীরে ধীরে মানসিক ধাক্কাটি সামলে নিতে চেষ্টা করছেন।