avertisements 2

ভ্যান চালিয়ে চীনে দুই ছে'লেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াচ্ছেন বাবা

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২০ মার্চ,সোমবার,২০২৩ | আপডেট: ০১:০৭ এএম, ২১ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪

Text

সন্তানদের উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করার ইচ্ছা ও সন্তানদের স্বপ্ন পূরণে প্রবল আক্ষেপে শেষ সম্বল ১ বিঘা (৩৩ শতক) জমি বিক্রি করে দুই ছে'লেকে একসাথে চীনে পাঠান ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াতে। দীর্ঘদিন থেকে তিনবেলা খেয়ে না খেয়ে ভ্যান চালিয়ে সন্তানদের খরচ যোগান দিচ্ছেন ভ্যান চালক মকিম উদ্দীন। ভ্যানচালক মকিমউদ্দীন শিক্ষিত না হলেও সন্তানদের উচ্চশিক্ষা লাভে সুদূূর চীনে পাঠিয়েছেন। ঠাকুরগাঁও জে'লার বালিয়াডাঙ্গী উপজে'লার দুওসুও ইউনিয়নের জোতপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মকিমউদ্দীন।

বড় ছে'লে হবিবুর রহমান চীনের জিয়াংসু ইউনিভা'র্সিটিতে মেকানিক্যাল ডিজাইন অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচার অটোমেশন বিভাগ ও ছোট ছে'লে আবুল হাসিম মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে পড়াশোনা করছেন। ভ্যানচালক হলেও মকিমউদ্দীনেন দৃঢ়প্রতিজ্ঞা যেন এখন বাস্তবতার মুখ দেখছে। নিজে কঠোর পরিশ্রমে ভ্যান চালিয়ে দুই ছে'লেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াচ্ছেন সুদূর চীন দেশে। বর্তমানে একটি ব্যাটারিচালিত ভ্যানের আয়ে সন্তানদের পড়াশোনার খরচ ও সংসারের ভরণপোষণ করছেন তিনি।

মকিমউদ্দীনের পরিবারে চার সন্তানের মধ্যে দুই ছে'লে ও দুই মেয়ে। বড় দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন কয়েক বছর আগে। ক'ষ্টের সংসারে সন্তানদের পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ায় সমাজে এক আলাদা সম্মানের জায়গা তৈরি হয়েছে মকিমউদ্দীনের।স্থানীয়রা বলেন, বাবা কতটা ক'ষ্টের উপার্জনে ছে'লেদের পড়াশোনা করাচ্ছেন, তা বলার মতো নয়। আমাদেরও সন্তান আছে। সবাই এমন হয় না। তবে তারা আমাদের স্বপ্ন দেখার সুযোগ করে দিয়েছেন। ক'ষ্ট ও পরিশ্রম করে সব কাজ করা যায়, তারই দৃষ্টান্ত প্রতিবেশী মকিমউদ্দীনের দুই ছে'লে।

তারা দিন আনে দিন খায়। তারা অনেক ক'ষ্ট করে তাদের সন্তানদের পড়াশোনার খরচ চালিয়ে যাচ্ছেন। অনেক অভাবেও তারা সন্তানদের পড়াশোনা বন্ধ রাখেননি। বিষয়টি আসলে অনুপ্রা'ণিত হওয়ার মতো। আম'রা আশা করছি, তারা দক্ষ প্রকৌশলী হয়ে এলাকা ও দেশসেবায় নিয়োজিত থাকবেন।

মকিমউদ্দীনের স্ত্রী' হুসনে আরা বেগম বলেন, ‘আমা'র দুই মেয়ে ও দুই ছে'লে। মেয়ে দুটোকে অনেক ক'ষ্ট করে বিয়ে দিয়েছি। পৈতৃক এক বিঘা আবাদি জমি ছিল। ছে'লে দুটোর জন্য তা বিক্রি করতে হয়েছে। একমাত্র ভ্যানটি আমাদের সম্বল। বাবুর বাবার বয়স হয়েছে, তবুও প্রতিদিন ভ্যান নিয়ে বের হন। কোনোদিন তিনি বসে থাকেন না। আজ ছে'লেরা চীনে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াশোনা করছে। প্রতি মাসে টাকা দিতে হয়। ছে'লে দুটাও অনেক ক'ষ্ট করে পড়াশোনা করে সেখানে। আমাদের যত ক'ষ্টই হোক, আম'রা তাদের উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করাতে চাই।’

আর বাবা মকিমউদ্দীন বলেন, ‘আমি ২৮ বছর ধরে পা দিয়ে ভ্যান চালিয়ে আসছি। পরে একটি ব্যাটারিচালিত ভ্যান কিনেছি। চালাচ্ছি পাঁচ বছর ধরে। অভাবের কারণে পড়াশোনা করতে পারিনি। তবে আমা'র ইচ্ছা ছিল আমা'র সন্তানদের পড়াশোনা করাব। আমা'র একমাত্র আয়ের পথ ভ্যান। যা হয় তার সবটুকু জমা করে ছে'লেদের পাঠাই। আম'রা স্বামী-স্ত্রী' কখনো খাই, কখনো না খেয়ে থাকি। কাউকে বলা হয় না এ ক'ষ্টের কথা। এভাবেই দিন কাটে।’

মকিমউদ্দীনের বড় ছে'লে হবিবুর রহমান চীনে থাকলেও কথা হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। তিনি বলেন, ‘আম'রা এখানে ২০১৯ সালে ডিপ্লোমা করতে আসি। এখানে পড়াশোনা করতে আসার আগে বাবা তার শেষ সম্বল ৩৩ শতাংশ জমি বিক্রি করেছেন। আমা'র বাবা মাঝে মাঝেই ফোনে বলে, বাবা, আমা'র অনেক ক'ষ্ট হচ্ছে। তোমাদের মানুষের মতো মানুষ হতে হবে। আমি আমা'র বাবাকে সান্ত্বনা দিই, বাবা, চিন্তা করবেন না। আপনার স্বপ্ন পূরণে ভালো'ভাবে পড়াশোনা করি। ইনশাআল্লাহ খুব শিগগিরই আপনি একটা সুসংবাদ পাবেন। আম'রা আমাদের মেধা দেশের জন্য কাজে লাগাতে চাই।’

বালিয়াডাঙ্গী উপজে'লা চেয়ারম্যান আলী আসলাম বলেন, ভ্যান চালিয়ে ছে'লেদের পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছেন মকিমউদ্দীন, যা দৃষ্টান্ত। উপজে'লা প্রশাসন পরিবারের পাশে আছে। তাদের উচ্চশিক্ষার প্রয়োজনে তাদের সকল সুবিধা দেয়া হবে বলেও আশ্বস্ত করেন তিনি।বালীয়াডাঙ্গী উপজে'লার উপজে'লা নির্বাহী কর্মক'র্তা যোবায়ের হোসেন বলেন, বিষয়টি আসলেই অনুপ্রা'ণিত হওয়ার মত। ভ্যান চালিয়ে তিনি দুই ছে'লেকে চীনে পড়াশোনা করান। এখান থেকে বুঝা যায় যদি মানুষের ইচ্ছা শক্তি ও পরিশ্রম করার মানসিকতা থাকে তবে সফলতার দিকে এগিয়ে যাওয়া যায়। এটি আমাদের জন্য আনন্দায়ক বিষয়ক। যদি কখনো তার প্রয়োজন হয় সহযোগিতার তবে উপজে'লা প্রশাসন তাদের পাশে দাড়াবে।

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2