মিহির কান্তি মজুমদার
প্রবীণ মানুষের অসুখ-বিসুখ
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১৮ অক্টোবর,মঙ্গলবার,২০২২ | আপডেট: ০২:২৮ এএম, ২৫ ডিসেম্বর, বুধবার,২০২৪
গত ১ অক্টোবর তারিখে পালিত হলো আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস। ১৯৯০ সালের ১৪ ডিসেম্বর তারিখে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৯৯১ সাল থেকে এ দিবস পালিত হচ্ছে। এবারের থিম- “Resilience of Older Persons in a Changing World”। প্রবীণ মানুষের সংখ্যা বাড়ছে সারা বিশ্বে। ৬০ বছর ও তদুর্ধ বয়স্ক মানুষকে প্রবীণ বলা হয়। বিশ্বে প্রবীণ মানুষের সংখ্যা বর্তমানে প্রায় ১০০ কোটি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে আগামী ২০৫০ সালে এ সংখ্যা ২০০ কোটিতে উন্নীত হবে। এ প্রবীণ জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশই হবে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশসমূহে। বাংলাদেশে এ সময় এ জনসংখ্যার হার হবে ২২.৫%, সংখ্যার হিসেবে প্রায় ৪.৫ কোটি।।
বয়স বাড়লে সব কিছুই পুরাতন হয়, আয়ু কমে, কর্মক্ষমতা কমে। মানুষও এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম নয়। কাজেই বয়স্ক হওয়া প্রকৃতির নিয়ম। এটা কোন রোগ বা অসুখ নয়। তবে প্রবীণদের রোগাক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেশি। মানবদেহ কমবেশি ৩৭.২ ট্রিলিয়ন কোষ দ্বারা গঠিত। এক ট্রিলিয়ন মানে এক লক্ষ কোটি। প্রতি সেকেন্ডে প্রায় দশ লক্ষ দেহ কোষ মারা যায়। অধিকাংশ মারা যায় প্রকৃতির নিয়মে। কিছু মারা যায় বাইরের আঘাত বা ক্ষতিকর রাসায়নিকের প্রভাবে। মৃত কোষের জায়গায় পুনরায় নতুন কোষ তৈরী হয়। এভাবে ভারসাম্য বজায় থাকে। যখন এ ভারসাম্যে ঘাটতি পড়ে কোষ উৎপাদন কম হয়, তখনই শরীর ধীরে ধীরে বার্ধক্যের দিকে অগ্রসর হয়। কাজেই বার্ধক্য আগে আসা বা পরে আসার সাথে দুটি প্রক্রিয়া কাজ করে। একটি হচ্ছে জেনেজিক। অপরটি পরিবেশগত। জেনেটিক কারণে কোন কোন জনগোষ্ঠীর মধ্যে বার্ধক্য আগে বা বিলম্বে আসে। খাবার, ভাইরাস/ব্যাকটেরিয়া বা ক্ষুদ্র অণুজীবের সংক্রমণ, ধুমপান, বায়ু দূষণ, কম কায়িক পরিশ্রম,ওজন বৃদ্ধি এবং কিছু রোগ বার্ধক্য ত্বরান্বিত করে।
প্রবীণ হলে বা বার্ধক্যের আগমন ঘটলে শরীরে ধীরে ধীরে তার ছাপ পরিলক্ষিত হয়। চামড়া কুচকে যায়, উচ্চতা ও ওজন কমে, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের কর্মক্ষমতা কমে। এসব বার্ধক্যের লক্ষণ। মাংসপেশি কমে, হাড়ের ঘনত্ব কমে, ফলে ওজন কমে। ফুসফুস, কিডনী, হার্ট, মস্তিস্ক প্রভৃতি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কর্মক্ষমতা কমে। বিভিন্ন অন্তক্ষরা গ্রন্থির হরমোন নিঃসরণ কমে। এসবের কারণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যেমন কমে, তেমনি বাড়ে রোগে ভোগার প্রবণতা। প্রবীণ ব্যক্তিরা যেসব রোগে ভুগে থাকেন তার মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ মাত্রার কোলেস্টেরল, আর্থাইটিস, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, অস্টিওপোরেসিস, কিডনী রোগ, দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসতন্ত্রের রোগ, ক্যান্সার, দৃষ্টি ও শ্রবণ ক্ষমতা হ্রাস, চোখে ছানি পড়া, বধিরতা, নিউমোনিয়া, বিষন্নতা এবং আলঝাইমারস রোগ অন্যতম।
বিশ্বে প্রবীণদের ৫৮% উচ্চ রক্তচাপে ভুগছে বলে সমীক্ষায় দেখা যায়। দক্ষিণ এশিয়ায় এ হার আরো একটু বেশি। হৃদপিন্ড রক্ত পাম্প করে ধমনীর মাধ্যমে দেহকোষে পৌঁছায়। বয়স বাড়লে ধমনীর প্রসারণ ক্ষমতা কমে যায়। ধমনীর মধ্যে ক্যালসিয়াম, কোলেস্টেরল ইত্যাদির প্রলেপ জমলে প্রসারণ ক্ষমতা আরো কমে। ধমনী একটু শক্ত হয়। রক্ত প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয় এবং রক্ত চাপ বাড়ে। ধুমপান, ওজন বৃদ্ধি, মানসিক চাপ বৃদ্ধি, শারীরিক পরিশ্রম কম করা, লবণ বেশি খাওয়া, অনিদ্রা ইত্যাদি কারণে উচ্চ রক্তচাপ হয়। এটি একটি নিরব ঘাতক। রক্তচাপ বাড়লে হার্টকে অতিরিক্ত পরিশ্রম করে রক্ত প্রবাহ অক্ষুন্ন রাখতে হয়। হার্টের আকার তখন বৃদ্ধি পায়, হার্টের গায়ে অতিরিক্ত মাংসপেশি জমা হয় এবং হার্ট কর্মক্ষমতা হারাতে থাকে। তাছাড়া বয়স বাড়লে যেমন মাংসপেশি কমে, তেমনি বাড়ে চর্বি। ধমনী গাত্রে চর্বি বা কোলেস্টেরল জমে রক্ত প্রবাহ বিঘিœত করে। হার্ট অ্যাটাক হয়। মৃত্যু ও পঙ্গুত্বের তালিকা দীর্ঘ হয়।
শরীরের যে অঙ্গ বয়সের সাথে প্রথম কর্মক্ষমতা হারাতে থাকে, সেটি হচ্ছে ফুসফুস। বয়স ৩৫ পার হলেই ফুসফুসের কর্মক্ষমতা কমতে থাকে। ধোঁয়া ও ধুলাবালির মধ্যে কাজ করলে বা সংক্রমণ ঘটলে এর আগেই ফুসফুস কর্মক্ষমতা হারাতে শুরু করে। ২০০৭ সালে পরিচালিত জরিপে দেখা গেছে বাংলাদেশে চল্লিশোর্ধ মানুষের ২২ শতাংশ সিওপিডি (ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিভ পালমোনারী ডিজিস) এ ভূগছে। এটি একটি দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসতন্ত্রের রোগ। ব্রঙ্কাইটিস বা কাশির সাথে নিয়মিত কফ তৈরী হওয়া এবং ফুসফুস বড় হয়ে যাওয়া-এগুলো একত্রে সিওপিডি সৃষ্টি করে। ফুসফুস শ্বাস নিলে বেলুনের মত ফুলে বড় হয়। সিওপিডিতে ফুসফুস আগেই ফুলে থাকে। তখন রোগি পর্যাপ্ত অক্সিজেন নিতে পারে না। আবার সম্পূর্ণ কার্বন-ডাই অক্সাইড বের করতেও পারেনা। এ রোগে আক্রান্তরা সাধারণত নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয় ও মৃত্যুবরণ করে।
বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে আর্থাইটিসে ভূগতে হয় প্রায় সকলকেই। বাংলায় এর নাম বাত বা সন্ধি প্রদাহ। শরীরের কোন জয়েন্টে প্রদাহ থাকলে, ওজন বেশি হলে এবং মাতা-পিতার আর্থাইটিস থাকলে এ রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। গেটে বাত বলে এ রোগের ভুক্তভোগী অনেক। বিশেষ করে হাটু, কোমড় ও আঙ্গুলের গিড়ায় এ রোগ হয়। হাটু বা শরীরের জয়েন্টে কখনো আঘাত পেলে, প্রদাহ হলে, অতিরিক্ত ওজন থাকলে এবং বয়সজনিত হাড় ক্ষয়ে এ রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। পরবর্তীতে বয়স বাড়লে এ রোগের প্রকোপ বাড়তে থাকে। শরীরের ওজন কমালে আর্থাইটিসের প্রকোপ কমে। এক কেজি ওজন কমলে হাটুর উপর ৪ কেজি ওজনের চাপ কমে।
অস্টিওপোরেসিস বা হাড় ক্ষয় বা হাড়ের ঘনত্ব কমে যাওয়া বয়স্কদের একটি রোগ। সাধারণত: ২৫ থেকে ৫০ বছর পর্যন্ত হাড়ের ঘনত্ব অক্ষুন্ন থাকে। নারীর মেনোপোজের (ঋতুস্রাব স্থায়ীভাবে বন্ধ হওয়া) পরে হাড় ক্ষয় দ্রুত হয়। কোমরে ব্যাথা, মেরুদন্ড সামনে ঝুঁকে যাওয়া, উচ্চতা কম-বেশি ২ ইঞ্চি কমে যাওয়া অস্টিওপোরেসিসের লক্ষণ। এ বয়সে ভারসাম্যতা হারানো ও পড়ে যাওয়ার প্রবণতা বেশি হয়। এ সময় পড়ে গেলে বা একটু আঘাতে হাড় ভেঙ্গে যেতে পারে।
বয়স বাড়ার সাথে ডায়াবেটিসের সংযোগ আছে। ওজন বেড়ে যাওয়া, জীবন-যাত্রার পরিবর্তন, কায়িক পরিশ্রম কম করা, বেশি শর্করা জাতীয় খাবার খাওয়া ইত্যাদির কারণে টাইপ-২ ডায়াবেটিস হয়। জেনেটিক বা বংশগত কারণের সাথে ডায়াবেটিসের যোগসূত্র আছে। পিতা-মাতার ডায়াবেটিস থাকলে টাইপ-২ ডায়াবেটিস হবার আশঙ্কা থাকে। শরীরের বিপাকক্রিয়া ও বিভিন্ন রাসায়নিক বিক্রিয়ার মধ্যে ভ্রমাতœক কোন বিক্রিয়ায় প্যানক্রিয়াসের বেটা সেল ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এবং ইনসুলিন উৎপাদন ক্ষমতা হারায়। এতে টাইপ-১ ডায়াবেটিস সৃষ্টি করে।
প্রবীণদের স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। ডায়াবেটিস রোগি স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি দ্বিগুণ। সাধারণত ডায়াবেটিস থাকলে উচ্চ রক্তচাপ থাকে। এদের রক্তে কোলেস্টেরল জমার ঝুঁকিও বেশি। এরূপ রোগীর বয়স ৫৫ এর বেশি হলে এবং ধুমপানের অভ্যাস থাকলে স্ট্রোকের ঝুঁকি আরো বেশি। এসবের কারণে মস্তিষ্কের রক্তনালী যথাযথ অক্সিজেন সরবরাহ করতে পারে না। ফলে স্ট্রোক হয়। আবার মস্তিষ্কের রক্তনালীর কোথাও প্রথমে ফুলে যাওয়া ও পরে ফেটে গেলে স্ট্রোক হয়। বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় এক লক্ষ মানুষ স্টোকে মৃত্যুবরণ করে, পঙ্গুত্ববরণ করে অনেক বেশি।
শরীরের রক্ত পরিশোধন করে বর্জ প্রসাবের সাথে বের করে কিডনী। বার্ধক্যের সাথে শরীরের এ অতি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের কর্মক্ষমতা কমে যায়। চল্লিশ বছর বয়সের পরে প্রতি বছর ১% হারে কিডনীর রক্ত পরিশোধন ক্ষমতা কমে যায়। তাছাড়া অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং হৃদরোগ দ্রুত কিডনীর ক্ষতি করে। কিডনীর কার্র্যক্ষমতা কমলে রক্তে ক্রিয়েটিনিন এর মাত্রা বাড়ে। মারাত্মক পর্যায়ে ক্ষতি হওয়ার আগ পর্যন্ত অনুভব করা যায় না যে কিডনী রোগ হয়েছে। এ জন্য কিডনী রোগকেও নিরব ঘাতক হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়।
ঘনঘন প্রস্রাব করার জন্য প্রবীণদের রাত্রে ঘুম থেকে ওঠার সমস্যা হতে পারে। হৃদযন্ত্রের কর্মক্ষমতা কমে গেলে এ সমস্যা হয়। দিনের বেলা দাঁড়ানো বা বসে থাকা অবস্থায় হার্ট শরীরের নিচের দিকে প্রবাহিত রক্ত টেনে কিডনীতে প্রেরণ করতে পারেনা। ফলে শরীরের নিম্নাঙ্গের রক্তের জলীয় অংশ পায়ের মাংশপেশির কোষে জমা হয়। তখন প্রস্রাব কম হয়, পা ফুলে যায়। রাতে ঘুমানো অবস্থায় শরীর সমান্তরাল থাকে। তখন এ জলীয় অংশ পুণরায় রক্তপ্রবাহে মিশে যায়। কিডনী তখন তা পরিশোধন করে বর্জ আকারে প্রস্রাব তৈরী করে। প্রস্রাব করার জন্য তাই রাত্রে অনেকের ঘুম থেকে উঠতে হয়। রাতে এ জন্য অনেকে কম পানি পান করেন। এতে রক্তের ঘনত্ব বাড়ে এবং হার্ট এ্যটাকের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে।
বয়স বাড়লে চোখে ছানি পড়ে। বাংলাদেশে ৭.৫ লক্ষের বেশি মানুষ অন্ধত্বের শিকার। এর মধ্যে ৮০% এর চোখে ছানি আছে। প্রতিবছর ১.২০ লক্ষ মানুষ ছানি পড়া রোগির তালিকায় যুক্ত হয়। বয়সের সাথে শ্রবণ শক্তিও হ্রাস পায়। এক তৃতীয়াংশ বয়স্ক মানুষের কানে সমস্যা আছে। এর মধ্যে অনেকেই বধির।
বয়স বৃদ্ধির সাথে ক্যান্সার রোগের গভীর সম্পর্ক আছে। বয়স্ক হওয়া ক্যান্সারের একটি বড় ঝুঁকি। প্রতি ১০ জন ক্যান্সার রোগীর মধ্যে ৯ জনের বয়স ৪৫ বছরের বেশি। বয়স যত বাড়ে, ক্যান্সার আক্রান্তের ঝুঁকি তত বাড়তে থাকে। বয়স্ক পুরুষের ফুসফুসের ক্যান্সার, প্রস্টেট ক্যান্সার এবং বয়স্ক মহিলাদের ব্রেস্ট ক্যান্সার, জরায়ুমুখ ক্যান্সার ও কলোরেকটাল ক্যান্সার বেশি হয়। ধুমপানে ক্যান্সার বাড়ে। ধুমপান ছাড়াও তামাকপাতা বিভিন্ন পদ্ধতিতে খাওয়ার কারণে মুখ, জিহবা, মাড়ি এসব জায়গায় ক্যান্সার হয়। বয়স্কদের মধ্যে এসব ক্যান্সারের প্রকোপ বেশি।
প্রবীণ মানুষের মধ্যে শতকরা ১৪ জন বিষন্নতায় ভোগেন বলে সমীক্ষায় দেখা যায়। সব সময় দঃখ বোধ হওয়া, হতাশা, ক্ষুধামন্দা, কাজের প্রতি অনিহা-এসব বিষন্নতার লক্ষণ। ভুলে যাওয়া বা মনে করতে না পারাও বয়স্কদের রোগ। মস্তিস্কের কোষ নষ্ট হওয়া এবং এদের নেটওয়ার্ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার জন্য ডিমেনসিয়া বা ভুলে যাওয়া রোগ হয়। আলঝাইমারস রোগে ডিমেনসিয়া হয়।
স্বাস্থ্য সচেতনতা রোগ প্রতিরোধে ভালো ভূমিকা রাখে। প্রবীণদের রোগ সম্পর্কে সচেতন থাকা বাঞ্চনীয়। যেকোন ধরণের তামাক ব্যবহার না করা, ওজন স্বাভাবিক রাখা, নিয়মিত স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খাওয়া, নিয়মিত দাঁত, চোখ ও কান পরীক্ষা করা এবং চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা একান্ত আবশ্যক। তাছাড়া উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা, নিয়মিত হাটা, বন্ধু বান্ধবদের সাথে যোগাযোগ রাখা, যেকোন কাজের মধ্যে থাকা এবং দুশ্চিন্তা যতদূর সম্ভব পরিহার করা প্রয়োজন।
ড. মিহির কান্তি মজুমদার, সাবেক সচিব