মিহির কান্তি মজুমদার
জনমিতিক পরিবর্তনে বাংলাদেশ: উন্নয়নের এখনই শ্রেষ্ঠ সময়
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১১ অক্টোবর,মঙ্গলবার,২০২২ | আপডেট: ০৫:৪০ এএম, ৫ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
“এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়,
এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়”।
কবি হেলাল হাফিজের অসাধারণ দুটি কবিতার লাইন। কবিতার নাম “নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়”। কবি হেলাল হাফিজের দ্রোহের শব্দমালায় দৃপ্তভাবে উচ্চারিত হয়েছে যৌবনের এ আহ্বান। এটি সকলের কথা। চিন্তা, চেতনা, উচ্চারণ ও প্রকাশে দ্রোহ ও বিদ্রোহ না থাকলে যৌবনের এ কথা বিস্ফোরণের ন্যয় প্রকাশিত হয় না। ব্যক্তির জীবনে যেমন যৌবন শ্রেষ্ঠ সময়। দেশের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ যৌবনকাল আসে। সময়কালটা হচ্ছে তরুণ ও কর্মক্ষম লোকের আধিক্য। বাংলাদেশ এখন এ সময়টা পার করছে। বলতে গেলে অনেকটা পথই পার করে এসেছে। যৌবনকাল যেমন একবার অতিক্রান্ত হলে আর কখনোই আসে না। দেশের তরুণ ও কর্মক্ষম লোকের আধিক্য একটা পর্যায়ে শেষ হয়। শত বিনিয়োগেও তা আর ফেরে না।
সব দেশেই ডেমোগ্রাফিক বা জনমিতির পরিবর্তনে শুধু একবারই কর্মক্ষম লোকের আধিক্য আসে। সময়ান্তরে তা শেষ হয়। বাড়ে বয়স্ক লোকের সংখ্যা। উন্নয়নের গতি তখন আর অগ্রসর হয় না। পৃথিবীর সকল উন্নত দেশই এ সময়কাল অতিক্রম করেছে। জ্ঞান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি আহরণ করেছে। এগুলোর প্রয়োগ ও যথাযথ পরিকল্পনার মাধ্যমে তারা দেশের প্রবৃদ্ধি বহুগুণ করেছে। মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করেছে, উন্নত দেশের তালিকায় নাম উঠিয়েছে। এখন সেসব দেশে বয়স্ক লোকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, উন্নয়নের গতি তাই শ্লথ হয়েছে। কোন কোন ক্ষেত্রে উন্নয়নের গতি নেতিবাচক হয়েছে। তবে উন্নয়নের ফলে জ্ঞান, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং সর্বোপরি জীবনমানের যে উন্নয়ন হয়েছে, তা অক্ষুন্ন থাকছে। কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর আধিক্য বা জনমিতির এ সুবর্ণ সময়কে বলা হয়- ডেমোগ্রাফিক বোনাস। উন্নয়নের এটাই শ্রেষ্ঠ সময়।
কোন দেশের জনগণের সংখ্যাগত ও গুণগত পরিবর্তনের বিদ্যার নাম জনমিতি বা ডেমোগ্রাফি। দেশের জন্মহার ও মৃত্যুহার জনমিতির পরিবর্তনের সাথে নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত। জনমিতি বিজ্ঞানী থমাস রবার্ট মালথাস ১৯১৮ সালে প্রকাশিত ''An Essay on the Principle of Population" শীর্ষক প্রবন্ধে তার ঐতিহাসিক জনসংখ্যা তত্ত্ব প্রকাশ করেন। তিনি উল্লেখ করেন জনসংখ্যা যে গতিতে বৃদ্ধি পায়, খাদ্য উৎপাদন সে গতিতে বাড়ে না। সে প্রেক্ষিতে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের কোন ব্যবস্থা না থাকলে ক্ষুধা, দারিদ্র, রোগ, মহামারী, দুর্ভিক্ষ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ইত্যাদির মাধ্যমে মৃত্যু হার বৃদ্ধি পায়। এভাবে জনসংখ্যা প্রাকৃতিক উপায়ে নিয়ন্ত্রিত হয়ে একটা ভারসাম্য অবস্থা বজায় রাখে।
প্রাকৃতিক নিয়মে এভাবে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রিত হলে কোন এলাকার জনসংখ্যা খুবই শ্লথ গতিতে হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটে। জনমিতিক বৈশিষ্ট্যের খুব একটা পরিবর্তন দৃশ্যমান হয় না। কিন্তু জন্মহার বা মৃত্যুহার কমানোর কার্যক্রমে একটু গতি পেলেই জনমিতিক পরিবর্তন শুরু হয়। জনমিতিক পরিবর্তনের এ প্রক্রিয়া কয়েকটি ধাপে অগ্রসর হয়। কোন জনপদে জন্মহার ও মৃত্যুহার যদি খুব বেশি থাকে, তখন জনসংখ্যার বৃদ্ধির গতি খুব কম থাকে। যেমন ১৮০১ সালে বাংলাদেশের ভৌগলিক এলাকায় প্রাক্কলিত জনসংখ্যা ছিল প্রায় ১.৪৫ কোটি। ১৯০১ সালে সে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ২.৮৯ কোটি। জনসংখ্যা দ্বিগুণ হতে সময় লেগেছে ১০০ বছর। অত্যন্ত শ্লথ গতির এ জনসংখ্যা বৃদ্ধির সময়কালকে জনমিতিক পরিবর্তনের পূর্বধাপ হিসেবে গণ্য করা হয়। ১৯৬০ এর দশকে এ দেশে জনস্বাস্থ্য ও স্যানিটেশন উন্নয়ন, টিকা কার্যক্রম, কুমিল্লা মডেল বাস্তবায়ন, সেচ কার্যক্রম, খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি, রুরাল ওয়ার্কস প্রোগ্রাম এবং অন্যান্য কার্যক্রমের মাধ্যমে খাদ্য উৎপাদন কিছুটা বৃদ্ধি পায়। স্বাস্থ্য, স্যানিটেশন, পানীয় জল-সরবরাহ ও যোগাযোগ ব্যবহার উন্নয়ন হয়। মৃত্যুহার কিছুটা হ্রাস পায়। কিন্তু জন্মহার আগের অবস্থাতেই বা উচ্চ জন্মহার থাকে। উচ্চ জন্মহার থাকাবস্থায় মৃত্যুহার হ্রাস পাওয়ায় জনসংখ্যার দ্রুত বৃদ্ধি ঘটে। যেমন ১৯৫১ সালের জনশুমারি অনুযায়ী এদেশে লোক সংখ্যা ছিল প্রায় ৩.৭৯ কোটি। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় এ জনসংখ্যা প্রায় ০৭ কোটিতে উন্নীত হয়। মাত্র ২০ বছরে এদেশে জনসংখ্যা বেড়েছে দ্বিগুণ। এটাই হচ্ছে বাংলাদেশের জনমিতিক পরিবর্তনের প্রথম ধাপ।
জনমিতিক পরিবর্তনের এ প্রথম ধাপে দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায়। এ বর্ধিত জনসংখ্যা উৎপাদনের জায়গা দখল করে। ফলে উৎপাদন হ্রাস পায়। তখন দুর্ভিক্ষ, মহামারী এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কারণে মৃত্যুহারের বৃদ্ধি ঘটে, জনসংখ্যা আবার হ্রাস পায়। জনমিতিক পরিবর্তনের প্রথম ধাপের এ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থাকে বলা হয় মালথাসের জনসংখ্যা ফাঁদ (Malthusian Population Trap)। তবে স্বাধীনতার পরে শিক্ষা, কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান, বৈদেশিক কর্মসংস্থান, নারী উন্নয়ন এবং ব্যাপক জন্মনিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের মাধ্যমে বাংলাদেশ এ জনসংখ্যা ফাঁদ এড়াতে সক্ষম হয়।
একজন মা গড়ে কতজন সন্তান জন্মদান করেন, তাকে বলা হয় টোটাল ফার্টিলিটি রেট, সংক্ষেপে টি.এফ.আর। ১৯৭২ সাল এবং পূর্ববর্তী সময়ে বাংলাদেশে টি.এফ.আর ছিল ৬.৩। টি.এফ.আর বেশি থাকলে শিশু বয়সি জনসংখ্যা বেশি থাকে। বেশি থাকে শিশু মৃত্যুর চিত্র। জনমিতিক পরিবর্তনের প্রথম ধাপ অতিক্রমের শুরুতে ১৯৭২ সালে বাংলাদেশে শিশু বয়সী (০-১৪ বছর) জনসংখ্যা ছিল ৪৫.২%। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ব্যাপক পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম, নারীর ক্ষমতায়ণ, শিক্ষা, নগরায়ণ, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি এবং অন্যান্য সামাজিক পরিবর্তনে জন্মহার কমতে শুরু করে। স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশনের উন্নয়নে শিশুমৃত্যুও হ্রাস পায়। শুরু হয় জনমিতিক পরিবর্তনের দ্বিতীয় ধাপ। এদেশে ১৯৮০ এর দশকেই এ দ্বিতীয় ধাপের সূচনা ঘটে। এ ধাপে জন্মহার ও মৃত্যুহার দুটোই হ্রাস পেতে থাকে । ফলে এ ধাপ খুব বেশি দিন স্থায়ী হয় না। জন্মহার ও মৃত্যুহার দ্রুত নেমে একটা স্থিতিবস্থায় চলে আসে। জন্মহার হ্রাস পাওয়ায় শিশু বয়সী জনসংখ্যা কমতে শুরু করে। পূর্বে যারা শিশু বয়সী ছিল, তারা ১৫ বছরের বেশি বয়স হয়ে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীতে রূপান্তরিত হয়। বৃদ্ধি পেতে থাকে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী (১৫-৬৪ বছর)। এবং শুরু হয় জনমিতিক পরিবর্তনের তৃতীয় ধাপ। এ ধাপে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী যেমন বৃদ্ধি পায়, তেমনি শিশু বয়সী জনসংখ্যা কমতে থাকে। উন্নয়নের জন্য সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য এ তৃতীয় ধাপের শেষের দিকে বয়স্ক জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। শিশু বয়সী জনসংখ্যা কম থাকায় কর্মক্ষম লোকের কাতারে পর্যাপ্ত লোক যোগ হয় না। বয়স্ক লোকের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং কর্মক্ষম লোকের ঘাটতি উৎপাদন প্রক্রিয়া ব্যাহত করে। জনসংখ্যা কমতে শুরু করে এবং শুরু হয় জনসংখ্যা পরিবর্তনের চতুর্থ ধাপ।
পৃথিবীর সকল দেশকে জনমিতিক পরিবর্তনের এ ধাপগুলোকে অতিক্রম করতেই হয়। তৃতীয় ধাপে কর্মক্ষম জনসংখ্যার আধিক্য দেশের উন্নয়নে দৃশ্যমান ভূমিকা রাখতে পারে। আনুপাতিক হারে প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের চেয়ে তৃতীয় ধাপের সময়কালও একটু বেশি। কমবেশি ৩০ থেকে ৩৫ বছর। ডেমোগ্রাফিক বোনাসের এ ধাপেই থাকে কর্মক্ষম জনসংখ্যার আধিক্য। এ সময় স্বকর্মসংস্থানসহ কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, শিল্পায়ন, দক্ষতা উন্নয়ন, যোগাযোগ, শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ক্ষেত্রে উন্নয়ন করে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডে›ড বা জনমিতিক লাভ অর্জন সম্ভব হয়।
সব দেশ বা অঞ্চলে এ ডেমোগ্রাফিক বোনাসকাল একবারই আসে। জন্মহার একবার হ্রাস পেলে আর তা কখনোই বাড়েনা। ডেমোগ্রাফিক বোনাসকালের শেষ দিকে বয়স্ক জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায়, জন্মহার হ্রাস পায়, দেশের জনসংখ্যাই কমতে থাকে। পৃথিবীর তাবদ উন্নত দেশ এ কর্মক্ষম জনসংখ্যার ঘাটতিসহ বয়স্ক জনসংখ্যার আধিক্যে ভুগছে। কিন্তু তারা ডেমোগ্রাফিক বোনাসকাল যথাযথ ব্যবহার করে মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করেছে। জ্ঞান, দক্ষতা, প্রযুক্তির উৎকর্ষ লাভে সক্ষম হয়েছে। খুব কাছাকাছি সময় যেসব দেশ এ বোনাসকাল যথাযথ ব্যবহার করতে পারেনি, তার মধ্যে আছে শ্রীলংকা। শ্রীলংকার জন্মহার, শিশুমৃত্যু. শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ণসহ সব মানব উন্নয়ন সূচকে এ অঞ্চলে অগ্রগামী ছিল। কাজেই, তাদের ডেমোগ্রাফিক বোনাসকাল আমাদের থেকে কমপক্ষে ১৫ বছর পূর্বে শুরু হয়েছে। বাংলাদেশের এ সময়কাল শুরু হয় ২০০০ সাল থেকে। শ্রীলংকায় শুরু হয়েছে সেই ১৯৮০ এর দশকে। তারা এ সময়কাল প্রায় শেষ করে ফেলেছে। গৃহযুদ্ধ, তামিল-সিংহলী নাগরিক দ্বন্দ, অপরিকল্পিত মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন ও অন্যান্য বিষয়ে সময়ক্ষেপণ করেছে। বাংলাদেশের হাতে এখনও প্রায় ১৫ থেকে ২০ বছর সময় আছে।
অতিসম্প্রতি বাংলাদেশে জনশুমারি ২০২২ শেষ হয়েছে। এ শুমারীর প্রাথমিক প্রতিবেদন অনুযায়ী এদেশে শিশু বয়সী জনসংখ্যা ২৮.৬১% এ নেমে এসেছে। ২০১১ সালের শুমারীতে এ হার ছিল ৩৪.৬৪%। জাতিসংঘের জনসংখ্যা বিভাগের প্রাক্কলন অনুযায়ী শিশু বয়সী জনসংখ্যা ২০৫০ সালে সব থেকে কম হবে (১৭.৩%)। এ সময় বয়স্ক জনসংখ্যার হার হবে ২২.৫%। বয়স্ক জনসংখ্যার জন্য স্বাস্থ্য খাতে চাপ থাকবে। কর্মক্ষম লোকের ঘাটতি উৎপাদন প্রক্রিয়া ব্যহত করবে। এখনই বিরাট জনসংখ্যা ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত। ৩৫ বছরের উপরের বয়সী ৬৭% পুরুষ এবং ৫১% নারী জানেন না, তাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে। মাত্র ১৫% নারী ও ৯% পুরুষ উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখেন। উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস আক্রান্তের গতি এভাবে চলতে থাকলে হƒদরোগ, কিডনী রোগ, স্ট্রোক ও অন্যান্য মারণঘাতী অসংক্রামক রোগীর সংখ্যা এতো বৃদ্ধি পাবে, গ্রামে গ্রামে হাসপাতাল করেও রক্ষা পাওয়া যাবে না। সবাই যদি রোগী হয়, তবে উৎপাদন ও উন্নয়ন প্রক্রিয়া নি¤œগামী হবে।
বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেল্থ সার্ভের প্রতিবেদন অনুযায়ী টিএফআর বা একজন মায়ের গড় প্রতি সন্তান সংখ্যা ২.২ এর নিচে নেমেছে। খুলনা বিভাগে এ সংখ্যা ১.৯ এবং রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে ২.১। অর্থাৎ এ তিন বিভাগে জনসংখ্যা বৃদ্ধি ঘটবেনা এবং খুলনা বিভাগে এ দশকেই জনসংখ্যা কমা শুরু করবে। কর্মক্ষম জনসংখ্যা বাংলাদেশে এখন সবচেয়ে বেশি (৬৭%)। এ জনসংখ্যার দক্ষতা উন্নয়ন, স্বকর্মসংস্থানসহ কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, শিল্পায়ন, যোগাযোগ, বৈদেশিক কর্মসংস্থানসহ বহুমুখী কার্যক্রমের এখনই সবচেয়ে উত্তম সময়। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দৃশ্যমান অগ্রগতি করেছে। ২০ বছর পূর্বে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের রপ্তাণি আয় সমান ছিল। এখন বাংলাদেশের রপ্তাণি আয় প্রায় ৫০ বিলিয়ন ডলার। পাকিস্তানের আয় ২৫ বিলিয়ন ডলার। তবে আমাদের আমদানি ঘাটতি আছে। রপ্তাণি যে গতিতে বাড়ছে, আমদানি বেড়েছে সমান গতিতে। কোন কোন ক্ষেত্রে আমদানি একটু বেশি বেড়েছে। যেসব মালামাল আমদানি হয়, তা দেশেই উৎপাদনের ব্যবস্থা নিতে হবে। কারিগরী ও ভোকেশনাল শিক্ষা অবহেলিত রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক ভাবে। যা দূর করা খুবই জরুরী। শিশু বয়সী জনসংখ্যা যেহেতু কমছে, প্রত্যেক শিশুর সুস্থ্য জন্ম, বিকাশ ও শিক্ষার পর্যাপ্ত বিনিয়োগ যেমন প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন সব কিছুর মানোন্নয়ন। মোট কথা আমাদের উন্নয়নের রাস্তার প্রধান সময়কাল যেহেতু শেষ হয়ে যাচ্ছে, তাই প্রত্যেকটি মুহুর্ত সঠিকভাবে ব্যবহার করতে হবে। প্রতিটা ক্ষেত্রে দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, এনজিও থেকে ব্যক্তি পর্যায়ে সর্বাত্মক আত্মনিয়োগের কোন বিকল্প নেই। এ সময় আর পাওয়া যাবে না। উন্নয়ন আমাদের নাগালের মধ্যে। তা ধরার জন্য একটা কিছু করতেই হবে। কবি হেলাল হাফিজের “রাডার” কবিতার ভাষায়-
“একটা কিছু সন্নিকটে, হাত বাড়িয়ে ধরুন।
দোহাই লাগে একটা কিছু করুন”।
--------------------------------------------------
ড. মিহির কান্তি মজুমদার, সাবেক সচিব