জালাল উদ্দিন আহমেদ
খেলা হবে
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১৯ এপ্রিল,মঙ্গলবার,২০২২ | আপডেট: ০১:৫০ পিএম, ২২ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
দুটি শব্দ সমন্বয়ে উচ্চারিত বহুল প্রচারিত এই কথাটি আজকাল সমাজ রাষ্ট্র ও রাজনীতির অঙ্গনে বেশ আলো ছড়িয়েছে বলেই মনে হয়। কথাটির মধ্যে একটি আলাদা জোশ আছে। যখন ছোট ছিলাম তখন এই কথাটি আমাকে একটি অনুভূতির সুখস্বপ্নে বিভোর করতো। নির্ঘন্ট মোতাবেক প্রিয় ক্লাব বা খেলোয়াড়ের খেলা দেখার অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থাকতাম। খেলা হবে'র সেই ঘোষনায় কিশোর মনের অলিগলিতে সেইসব শিল্ড বা কাপের খেলা দেখার অপেক্ষায় নির্ঘুম দিনাতপাত করতাম। প্রিয় খেলোয়াড়ের ছবি নিজের অন্তরে গেঁথে রেখে সেরকম কিছু হওয়ার স্বপ্নে দোল খেতাম। যখন স্কুল কলেজের গন্ডিতে বিচরন শুরু হোল তখন নিজেকে পেলে ইউসেবিও না ভাবলেও ভারতীয় উপমহাদেশের সামাদ বা পিকের স্বপ্নকে বুকের মধ্যে লালন করে অন্ততঃ ফুটবল নিয়ে ছুটাছুটি করতাম। আর কর্ম জীবনে আসার পর দেশীয় আদলের বাদল কায়সার হামিদ কিংবা নান্নু মুন্নাদের খেলা দেখতে স্টেডিয়াম পাড়ায় ভিড় করতাম।
খেলা মানুষের শারিরীক সুষ্ঠতা ও সবলতাকে সুদৃঢ় করে। খেলাধুলা ও শরীর চর্চার নিয়মিত অভ্যেস মানুষকে সুস্থ্য ও সতেজ রাখে। এই খেলা নিয়ে আজকাল বেশ গবেষনা হচ্ছে বলেই মনে হয়। খেলা হয় মাঠে। এই মাঠের আবার প্রকারভেদ আছে। লুডু খেলা, দাবা খেলা বা ক্যারাম খেলা, সেটারও একটা মাঠের প্রয়োজন। সুতরাং লুডু দাবা বা ক্যারামের জন্য বোর্ডই হচ্ছে ওসবের খেলার মাঠ। আবার খেলাভেদে মাঠের ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। হাডুডু, ভলিবল কিংবা টেনিস ব্যাডমিন্টনের জন্য একখন্ড জমির প্রয়োজন হয়। কিন্তু ফুটবল ক্রিকেটের জন্য প্রয়োজন বিশাল সব স্টেডিয়াম। অর্থাৎ মাঠ ছাড়া খেলাধুলা অসম্ভব এক ব্যাপার বটে। খেলাধুলার স্কুল চ্যাম্পিয়ান থেকে শুরু করে জেলা, বিভাগ, দেশ, মহাদেশ এবং বিশ্ব চ্যাম্পিয়ানের আয়োজন ঘটে থাকে। আজকাল এইসব খেলার সংস্কৃতি দিয়ে বিশ্ব দরবারে দেশ ও জাতিকে সামনের সারিতে নিয়ে যাওয়ার এক প্রচ্ছন্ন প্রতিযোগিতা সমাজ রাষ্ট্র তথা জাতিকে আবেগ তাড়িত করে। বিশ্ব দরবারে খেলা আয়োজনের চমক জাগানিয়া এন্তেজামে গোটা বিশ্বে একটা সাজ সাজ রব পড়ে যায়। কিন্তু খেলা তো খেলাই। সেখানে শুদ্ধতা স্বচ্ছতা নিয়মানুবর্তিতা ও অহিংস প্রেম বন্ধনের কথা মাথায় রেখে সব কিছু খেলোয়াড়ি গন্ডির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। এবং এজন্য বিশ্বের শান্তি ও সমৃদ্ধি এবং মেলবন্ধনের একটি কার্যকরী উপাদান হিসাবে খেলাকে অমরা জীবন বিবর্তনের অংশ হিসাবে সাদরে গ্রহন করেছি।
মানব সমাজে চলার পথে আজকাল খেলাকে নিয়ে সর্বক্ষেত্রেই একটা সাজ সাজ রব লক্ষ্য করা যায়। ইদানীংতো এই 'খেলা' শব্দটি রাজনীতির মঞ্চেও তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। 'খেলা হবে' শ্লোগান দিয়ে রাজনীতির মাঠ গরম করার এক অভিনব কায়দায় রাজনীতিবিদদের দৌঁড়ঝাপ করতে দেখা যায়। খেলা হবে শ্লোগানের উপর কোরাস গেয়ে জনতার মঞ্চ বানানো হয়। ভোটের রাজনীতি গরম রাখার এক ব্যতিক্রমী শ্লোগান তুলে 'খেলা হবে' বলে প্রতিপক্ষকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয়া হয়। রাজনীতির খেলার মাঠ কিন্তু ব্যাপক। জন সম্পৃক্ততার এই খেলায় রাজনীতি তার আদর্শিক অনুশীলনে রাষ্ট্রের সরকার ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রন করে। দেশে এই রাজনীতির খেলায় সরকারী ব্যবস্থার উলোট পালট হয়। গনতন্ত্র পাগল বাঙালী এই চটকদার শ্লোগান 'খেলা হবে'র নাগর দোলায় দুলতে দুলতে তাদের পরম কাঙ্ক্ষিত পাঁচ বছর অন্তর গনতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে পরম তৃপ্তিতে ভোট দেন। এই খেলা হবের শ্লোগানে উতপ্ত হয় মিটিং মিছিলের আমেজ। এক্ষেত্রে খেলা হবে নামক রাজনৈতিক শ্লোগানটি বাংলার মাটি থেকে উদ্ভুত বলেই এখানে বাঙালী কথাটি উচ্চারনে আনতে হয়েছে।
সুতরাং খেলা মানব জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই তার প্রতিদ্বন্দিতার স্বভাব সুলতা নিয়ে সদম্ভে বিচরন করে। মানব জীবন থেকে শুরু করে সমাজ জাতি ও রাষ্ট্র জীবনের সর্বক্ষেত্রেই খেলা হবের প্রতিযোগিতায় আমরা সবাই কমবেশী এক একজন প্রতিযোগী বা অংশ গ্রহনকারী। খেলা নামের এই ছোট্ট শব্দটি আজ আমাদের রাষ্ট্রীয় রাজনীতিতে(অবশ্য ভারত রাষ্ট্রের পশ্চিম বংগ রাজ্যে ব্যাপকভাবে এর প্রচলন হয়েছে) বেশ সমাদার পাচ্ছে বলেই মনে হয়। একযুগ আগে নারায়নগঞ্জের এক ডাকসাইটে নেতার মুখ নিসৃত এই 'খেলা হবে' কথাটি আজ রাজনীতির আইকনিক শব্দ হিসাবে এখন বাংলার অপর প্রান্তে বেশ জোরেসোরেই উচ্চারিত হচ্ছে। এবং তা এখনকার দিনে জন সম্পৃক্ততায় এক বিশুদ্ধ রাজনৈতিক শ্লোগান হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে। আশা করি রাজনীতির অঙ্গনে এই খেলা হবের ডাকটি তার শুদ্ধ আচরনে খেলা নামক প্রকৃত বিষয়টির মান সমুন্নত রাখবে। আমরা আশাবাদী হয়েই বলতে চাই খেলাধুলার শুদ্ধাচার, নিয়মানুবর্তিতা ও শিষ্টাচারের পথ ধরে রাজনীতির অঙ্গনে এই 'খেলা হবে' শ্লোগানটি তার যোগ্য মর্যাদায় উচ্চকিত হবে।