মোঃ শফিকুল আলম
“সত্যবাবু” দোহাই আপনার ‘সত্যকাহন’ থেকে বিদায় নিবেননা!
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৭ জুন,সোমবার,২০২১ | আপডেট: ১২:৪৭ এএম, ২২ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
সাংবাদিকতার সাধারন সজ্ঞা হচ্ছে- “চলোমান ঘটনার ওপর প্রতিবেদন তৈরী করা এবং তা’ জনসাধারনে বিতরন করা। সাংবাদিকতা প্রকৃতপক্ষে একটি পেশা হিসেবে বিবেচিত। অপরদিকে পেশাদারিত্বের বাইরে যারা সিটিজেন জার্নালিস্ট তারাও তথ্য সংগ্রহ করেন এবং প্রকাশ করেন - অবশ্যই তথ্য সবক্ষেত্রেই প্রুফ এবং এভিডেন্স দ্বারা সিদ্ধ হতে হবে।”
আমি ভীষন লজ্জিত হই যখন আমাকে কেউ সাংবাদিক বলে বিবেচনা করেন। আমি পেশাদার বা সিটিজেন জার্নালিস্ট এর কোনো গোত্রেই যাইনা। সাংবাদিকতার নিয়ম-কানুন সম্পর্কে পুরোপুরি অজ্ঞ। সামাজিক মাধ্যমে যে যেটা ভালো মনে করেন সেটা লিখেন। আমি সেরকমই মাঝে মধ্যে অনিয়মিত লিখে থাকি। সময় কম থাকার কারনে লেখালেখি অনিয়মিত হয়ে থাকে।
অপরদিকে আমাকে অনেকে তথাকথিত রাজনীতিক হিসেবেও বিবেচনা করে ভুল করে থাকেন। রাজনীতি নিয়ে সিটিজেন’স কমেন্ট করে থাকি। তার অর্থ এই নয় যে আমি রাজনীতিক। রাজনীতি নিয়ে কমেন্ট করার কারনেই হয়তো অনেকে তথাকথিত রাজনীতিক মনে করে থাকেন। আমি রাজনীতিক নই; তবে বাংলাদেশের রাজনীতিতে দল হিসেবে আওয়ামীলীগের সমর্থক। এদেশেও আমি অনুরূপ লেবার পার্টির সমর্থক এবং কর্মী। ছাত্রজীবনে ছাত্রসংগঠনের সাথে কিছুটা সরাসরি সম্পৃক্ততা থাকলেও পরবর্তীতে জাতীয় রাজনীতিতে অংশগ্রহন করিনি। কারন, রাজনীতির মতো কঠিন সাবজেক্ট বোঝার মতো আমার জ্ঞান ছিলোনা। আর সাংবাদিকতার জ্ঞান তো একেবারেই শূন্য।
সিডনিতে যারা সাংবাদিক হিসেবে পরিচিত তাদের একজন যিনি আবার একটি সাংবাদিক সংগঠনের জেনারেল সেক্রেটারী এবং ৩০ বছরাধিক সাংবাদিকতায় তার নাকি অভিজ্ঞতাও রয়েছে তার একটি ধারাবাহিক লেখা (যেটি তিনি ৬ পর্বে শেষ করেছেন) আমি সামাজিক মাধ্যমে পড়ে মন্তব্য করেছিলাম। প্রতিথযশা সেই সাংবাদিক মন্তব্যটির জবাব না দিয়ে ডিলেট করে দিলেন। আমার মনে হয় মন্তব্যটি ডিলেট না করে ফ্যাক্টস এন্ড এভিডেন্স দিয়ে উত্তর দিলে অন্যদের বুঝতে সহজ হতো। অন্তত আপনার মতো সাংবাদিকের কাছ থেকে আমরা সেরকমটাই প্রত্যাশা করতে পারি।
কমেন্টটি ডিলেট করায় এফবিতে এই বিখ্যাত সাংবাদিকের লেখার ওপর একটা মন্তব্য লেখা পোষ্ট করেছিলাম। জনাবের লেখার শিরোনাম ছিলো ‘সত্যকাহন’। এই আকর্ষনীয় শিরোনামে ধারাবাহিক ৬ পর্ব লেখাতে ইতোমধ্যে তিনি “সত্যবাবু” বলেও সম্বোধিত হয়েছেন। আমিও তার সাহসী, নিপুন, দক্ষতাপূর্ণ সাংবাদিকতার জন্য সম্মানসূচক সম্বোধন “সত্যবাবু” করছি।
সত্যবাবু আমার লেখাটির জবাব তার শেষ পর্বের লেখায় দিয়ে আপাতত ‘সত্যকাহন’ থেকে বিদায় নিয়েছেন। আমার লেখাটিকে আমি একেবারেই আমার বিষয়গত (বানিজ্য বিভাগে স্টাডি করেছি) জ্ঞান থেকে বলেছি যে এই দেশটিতে যেমন নিয়ম মেনে স্বল্প সময়ে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠা করা যায়; আবার তা’ পরিচালনায় ব্যর্থ হলে নিয়ম মেনে বন্ধ করে দেয়া যায়। ব্যবসায় বন্ধ করে দিলে দ্বিতীয় পক্ষ, তৃতীয় পক্ষ ইত্যাদি নানান পক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এই ঝুঁকি বহনের জন্য তাই ব্যবসায় শুরুর পূর্বেই (before the operation starts) ইন্সিউরেন্স থাকা বাধ্যতামূলক এবং পূর্ব শর্ত হিসেবে কাজ করে। আমি বলেছি কোভিডের সময় অনেক বড় বড় প্রতিষ্ঠান নিজেদেরকে দেউলিয়া (bankrupted) ঘোষনা করে ব্যবসায় থেকে exit করেছে। বাঙ্গালী বিল্ডারদের ক্ষেত্রে তেমনটি ঘটেছে। আবার ক্ষতিগ্রস্তরা ইন্সুউরেন্সের মাধ্যমে ক্ষতিপূরন করে নিতে সমর্থ্য হয়েছেন। আমি বলেছি যে ব্যাংক এবং বাড়ীর মালিক একমত হয়ে যদি বিল্ডার বাড়ীর কাজের কোনো অংশ(phase) শেষ করেছে বলে সম্মত হোন ব্যাংক সেই সম্পন্নকৃত কাজের বিপরীতে বিল্ডারকে টাকা পরিশোধ করে থাকে। আমি বলেছি সেক্ষেত্রে বিল্ডারের ক্লায়েন্টদের কাছ থেকে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার মেরে দেয়ার সুযোগ থাকার কথা নয়। আমি কিছুটা হলেও সাংবাদিকতার নিয়ম অনুসরন করে ফ্যাক্টস এন্ড এভিডেন্স দিয়ে কথা বলার চেষ্টা করেছিলাম।
প্রতিথযশা সাংবাদিক সেই “সত্যবাবু” তার ৩৩ বছরের সাংবাদিকতার সজ্ঞা, বিধি-বিধানের ধারে কাছে না গিয়ে, আমি যা’ লিখেছি তার উত্তর না দিয়ে যা’ লিখলেন তার চিত্রটিই দিয়ে দিলাম। সত্যবাবু আপনি সত্যকাহনের নামে বললেন আমি মিডিয়ায় কাজ করি, আমি তথা কথিত রাজনীতিক। আমাকে দিয়ে মিডিয়ার মালিক লিখিয়েছেন। আমি চাকুরী বাঁচাতে লিখেছি। সত্যবাবু এর কোনোটিই তো সত্য নয়। প্রথমত: আমি কেনো মিডিয়া কর্মী নই। দ্বিতীয়ত: আমি কারও চাকুরী করিনা। সুতরাং কারও কাছে আমার রুটি-রুজির ব্যাপার নেই। আমি কোনো কথিত রাজনীতিক নই। সত্যবাবু এবারে বলুনতো আপনার সত্যকাহনের কি হবে? আমি যা’ লিখেছি তার কোথায় মিথ্যাকাহন হয়েছে সেটি সুন্দর করে বুঝিয়ে বলবেনকি?
সত্যবাবু আমি আজ পর্যন্ত কাউকে আমার লেখা শেয়ার করতে বলেছি এরকম কোনো উদাহরন নেই। কে শেয়ার করেছে, কে আবার ডিলেট করেছে তা’ নিয়ে আমার মাথাব্যথা নেই। আমার লেখা শেয়ার করে কে লজ্জিত হয়েছেন সত্যবাবু তা’ও আমার জানা নেই। লজ্জিত হয়ে যদি কেউ ডিলেট করে দিয়ে থাকেন সেটি তারা করতেই পারেন। সত্যবাবু দোহাই আপনার সত্যকাহন থেকে বিদায় নিবেননা। ক্ষতিগ্রস্তরা জানেনইনা ক্ষতিপূরন পেতে কোথায় যেতে হয়। আপনার মতো সত্যবাবুরা এরকম সত্যকাহন থেকে আমার মতো তথাকথিত মিডিয়াকর্মীর মিথ্যাকাহনে বিদায় নিলে অস্ট্রেলিয়া মহাদেশটিতো অশুদ্ধ হয়ে যাবে। ক্ষতিগ্রস্তরা জ্ঞান হারিয়ে রাস্তায় গা এলিয়ে থাকবেন। দোহাই আপনার সত্যকাহনে বিরতি দিবেননা।