avertisements 2

পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা ঢাকায়, অফিস চালায় পিয়ন!

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১১:০৮ পিএম, ১ জানুয়ারী,শুক্রবার,২০২১ | আপডেট: ০১:৫১ পিএম, ২২ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪

Text

সময় তখন সকাল সাড়ে ১১টা। অফিস কার্যালয়ের সামনে চেয়ারে বসে মধ্যবয়সী এক ব্যক্তি ধূমপানে ব্যস্ত। পরিচয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আমি এই কার্যালয়ের অফিস অ্যাসিস্ট্যান্ট। কী করতে হবে আমারেই কন। আমিই সব কিছুর দায়িত্বে আছি। স্যারেরা অফিসে আসে মাসের মধ্যে দুই-তিন দিন। বাকি সময় আমাদের অফিস পাহারা দিতে হয়।'

আপনার সঙ্গে আর কে কে অফিসের কাজগুলো করেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'দুজন অফিস পিয়ন, আর কয়েকজন নিরাপত্তাপ্রহরী রয়েছে। আমরাই অফিস দেখাশোনা করি। স্যারেরা সব সময় অফিসের কাজে বাইরে ব্যস্ত থাকেন। অফিসে আসার সময়ই পান না।' কথাগুলো অকপটে বলছিলেন নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের আটি এলাকায় অবস্থিত বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের শিমড়াইল শাখার ওয়ার্ক অ্যাসিস্ট্যান্ট মাহবুব আহসান।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অফিস কার্যালয়ের ভেতরে ঢুকতেই চোখে পড়ে কয়েকটি টেবিল-চেয়ার ফাঁকা পড়ে আছে। কোথাও কোনো সাড়াশব্দ নেই। ধুলাবালুতে টেবিল-চেয়ারগুলো সাদা হয়ে গেছে। ওই কার্যালয়ের দায়িত্বে থাকা উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মাইনুর রহমানের অফিস কক্ষে তালা ঝোলানো রয়েছে। উপসহকারী প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন নিজাম উদ্দিন ও সাইফুল ইসলাম নামে দুই ব্যক্তি, তাদের টেবিলগুলোও ফাঁকা পড়ে আছে। অপর দিকে নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন আবুল খায়ের ও নুরুল আমিন নামে দুই ব্যক্তি। এ ছাড়া কার্যসহকারী হিসেবে মশিউর রহমান দায়িত্বে থাকলেও তাকে অফিস কার্যালয়ে খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওই ওয়ার্ক অ্যাসিস্ট্যান্ট জানান, 'আমাদের অফিসের কোনো কাজ না থাকায় সচরাচর কেউ অফিসে আসেন না। স্যারেরা বাসা ভাড়া নিয়ে ঢাকায় বসবাস করেন। যদি বিশেষ কোনো কাজ থাকে তাহলে অফিসে আসেন। এ ছাড়া কাজের ক্ষেত্রে প্রয়োজনে কাজের সাইটে আসেন। এর বেশি আর কিছু বলতে পারব না বলে এড়িয়ে যান তিনি।'

অফিস কার্যালয়ের ১০০ গজ সামনে ওই কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের জন্য কোয়ার্টারে থাকার ব্যবস্থা থাকলেও তারা কোয়ার্টারে না থেকে ঢাকায় বসবাস করেন। এ কার্যালয়ের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মাইনুর রহমানের থাকার কোয়ার্টারে গিয়ে দেখা যায়, ওখানে বসবাস করছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের উচ্চমান সহকারী গিয়াস উদ্দিন নামে এক ব্যক্তি। এ কোয়ার্টারে আপনি কিভাবে থাকছেন- এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, 'স্যারেরা এখানে বসবাস না করায় আমি পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করছি। আমরা থাকাতে কোয়ার্টারটি সচল রয়েছে। না হলে খুপরিঘরে পরিণত হতো।'

উপসহকারী প্রকৌশলী নিজাম উদ্দিনের বরাদ্দকৃত কোয়ার্টারে বসবাস করছেন ওই কার্যালয়ের মনিরুজ্জামান নামে এক ব্যক্তি। তার স্ত্রী নাসিমা বেগম জানান, ভবনের অবস্থা খারাপ হওয়ায় কর্মকর্তারা না থাকায় আমরা এই কোয়ার্টারে বসবাস করছি।

ডিএনডি সেচ প্রকল্পের শিমড়াইল শাখার উপসহকারী প্রকৌশী নিজাম উদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, আমাদের কার্যালয়ে খুব বেশি কাজ না থাকায় মতিঝিল সার্কেল অফিসে বেশির ভাগ সময় কাটাই। আপনার বরাদ্দকৃত কোয়ার্টারে অন্য ব্যক্তি কিভাবে বসবাস করছেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভবনগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাওয়ায় নতুন করে ভবন নির্মাণের জন্য প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ ভবন হওয়ায় আমরা এখানে বসবাস করছি না। 

ডিএনডি সেচ প্রকল্পের শিমড়াইল শাখার বিভাগীয় প্রকৌশী মাইনুর রহমান বলেন, ডিএনডি প্রজেক্টের কাজ সেনাবাহিনী হাতে নিয়েছে, আমাদের তাদের সঙ্গে বেশির ভাগ সময় কাজে থাকতে হয়। আমার নামে কোনো কোয়ার্টার বরাদ্দ নেই। তাই আমি ঢাকায় বসবাস করছি। 

নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. জসিম উদ্দিন বলেন, যেসব কর্মকর্তা অফিস কার্যালয়ে ঠিকমতো না এসে বেতন নেয়। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2