avertisements 2

সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি ঠেকাতে আসছে নতুন নির্দেশনা

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৩:৪৪ পিএম, ২৯ মার্চ,সোমবার,২০২১ | আপডেট: ০১:৪৫ পিএম, ২১ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪

Text

দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় আজকালের মধ্যে যেকোনো সময় আসছে নতুন নির্দেশনা। আনুষ্ঠানিকভাবে লকডাউন না হলেও অনেকটা আগের আদলেই বেশ কিছু ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা এবং কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হবে বলে সরকারের নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে জানা গেছে। সভা-সমাবেশ কর্মসূচি, জমায়েত, পর্যটন ও বিনোদনমূলক ভ্রমণ, মেলা, জনবহুল সামাজিক আয়োজনে সাময়িক নিষেধাজ্ঞাকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

করোনা মোকাবেলায় গঠিত জাতীয় কারিগরি বিশেষজ্ঞ কমিটি ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুসারে এরই মধ্যে এসংক্রান্ত সিদ্ধান্ত প্রায় চূড়ান্ত। এখন প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে বলে ওই সূত্র জানায়।

নির্দেশনা বাস্তবায়নে প্রয়োজনে আগের মতোই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তাও নেওয়া হতে পারে। এ ছাড়া দোকানপাট ও ব্যবসাকেন্দ্র খোলা রাখার সময়সীমা ও ক্রেতা-বিক্রেতার ভিড় নিয়ন্ত্রণ করা হবে কঠোরভাবে। চলবে ভ্রাম্যমাণ আদালত। সড়ক, নৌ ও আকাশ পথে যাতায়াতেও আসছে নিয়ন্ত্রণ। সবচেয়ে শক্ত অভিযান হবে মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য। মাস্ক ছাড়া কেউ যাতে বাইরে বের না হন সেদিকে নজর রাখা হবে সবচেয়ে বেশি। পাশাপাশি চিকিৎসা, পরীক্ষা ও টিকাদানে গতি ফেরাতেও কিছু দিকনির্দেশনা থাকবে নতুন করে। এ ক্ষেত্রে করোনার টিকাদান কার্যক্রম হাসপাতাল থেকে সরিয়ে সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি (ইপিআই) কেন্দ্রে নেওয়ার চিন্তাভাবনা চলছে।

জানতে চাইলে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আব্দুল মান্নান গতকাল রবিবার বিকেলে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বিস্তারিত এখনই বলা যাবে না, অপেক্ষা করুন কিছু কঠোর নির্দেশনা আসছে।’

স্বাস্থ্যসচিব পরে কিছুটা আভাস দিয়ে বলেন, যেসব কারণে সংক্রমণ দ্রুত ও বেশি ছড়ানোর ঝুঁকি রয়েছে, সেগুলোকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। শুধু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ই নয়, অন্যান্য মন্ত্রণালয় মিলে সমন্বিতভাবেই নির্দেশনাগুলো কার্যকর করা হবে। জনগণকেও সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে নিজেদের সুরক্ষায় সচেতন ও সতর্ক থাকতে হবে।

নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের আরেক সূত্র জানায়, সরকার আপাতত তিন সপ্তাহের জন্য একটি নতুন কর্মকৌশল নিয়ে মাঠে নামছে, যা যেকোনো সময় নির্দেশনা বা ঘোষণা আকারে প্রকাশ করার প্রস্তুতি চলছে। এই কর্মকৌশলের অংশ হিসেবে কিছু নিষেধাজ্ঞা ও নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি কোন এলাকায় সংক্রমণ বেশি তা পর্যবেক্ষণ করে সেই এলাকায় জন চলাচল সাময়িক সীমিত ও নিয়ন্ত্রিত হতে পারে। বিদেশ থেকে আগতদের ক্ষেত্রেও থাকছে নতুন কিছু নির্দেশনা। সরকার প্রজ্ঞাপন আকারে এসব নতুন নির্দেশনা জারি করবে।

জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা চলতি মাসের শুরুর দিকেই একটি বৈঠক করে সরকারকে কিছু পরামর্শ দিয়েছিলাম। সরকার সেগুলো নিয়ে কাজ করছিল। কিন্তু এর মধ্যেই পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটেছে। এখন আর বসে থাকার সুযোগ নেই। একযোগে বহুমাত্রিক কাজ করতে হবে। মানুষের বেপরোয়া আচরণ বন্ধে যেমন জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে, তেমনি সংক্রমণ শনাক্ত, কোয়ারেন্টিন ও আইসোলেশন ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। ঢাকায় আগের মতো জোনিং সিস্টেম চালু করে এলাকাভিত্তিক কিছু ব্যবস্থা নিতে হবে।’

ওই বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘সাধারণ মানুষেরও একটু হুঁশ হওয়া দরকার। যেখানে দেখছি শনাক্ত বেড়ে যাচ্ছে দ্রুত, বাড়ছে মৃত্যু, তার পরও মানুষের মধ্যে এর কোনো প্রতিক্রিয়া দেখছি না। মাস্ক পরছে না, মনের সুখে ঘুরে বেড়াচ্ছে, নিজেকে ও অন্যকে ঝুঁকির মুখে ফেলছে।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল) ডা. মো. ফরিদ উদ্দিন মিয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, চিকিৎসাব্যবস্থা জোরদার করার পদক্ষেপ হিসেবে পুরনো ১০টি সরকারি হাসপাতালে জরুরি ভিত্তিতে বাড়ানো হচ্ছে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) শয্যা, দেওয়া হচ্ছে হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা ও বর্ধিত সেন্টাল অক্সিজেন সিস্টেম। মহাখালীতে সিটি করপোরেশনের আইসোলেশন সেন্টারে আইসিইউ ইউনিটসহ দেড় হাজার শয্যার করোনা ইউনিট প্রস্তুত করা হচ্ছে। মহানগর হাসপাতাল ও মিরপুর লালকুঠি হাসপাতালেও স্থাপন করা হচ্ছে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সিস্টেম। এ ছাড়া যেসব হাসপাতালে রোগীর চাপ বেশি সেখানে প্রয়োজনমতো চিকিৎসক ও নার্সসহ অন্যান্য জনবল বাড়ানো হচ্ছে। তিনি বলেন, রোগীর চাপ যেভাবে বাড়ছে তাতে হাসপাতাল বাড়িয়ে কিংবা আইসিইউ বাড়িয়েও কতটা সামাল দেওয়া যাবে, সেটা চিন্তার বিষয়। সংক্রমণ প্রতিরোধ করা না গেলে আক্রান্ত হওয়ার পরে চিকিৎসা দিয়ে কুলানো যায় না।

এর আগে গত ১৬ মার্চ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক বৈঠক থেকে ১২ দফার একটি সুপারিশ তৈরি করে তা খসড়া আকারে পাঠনো হয় মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে। সেখানেও কিছু সতর্কতামূলক পদক্ষেপের সুপারিশ ছিল। ওই বৈঠকে প্রয়োজনে জন চলাচলে নিয়ন্ত্রণ বাড়ানো, সর্বস্তরে জনসমাগম সীমিত করা, শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপরেই বেশি জোর দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতির অবনতি হলে তখন স্বাভাবিক অবস্থায় না আসা পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না খোলা, পরীক্ষাগুলোও বন্ধ রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে পরামর্শ দেওয়া হবে বলে জানানো হয়। এ ছাড়া বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিন, সংক্রমিত ব্যক্তিদের আইসোলেশন নিশ্চিত করা, আসন্ন ঈদে ঘরমুখো মানুষের ঢল কমাতে ছুটি কমানোর মতো সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে বলেও জানানো হয়।

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2