অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২০২২ উদযাপন
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২৪ ফেব্রুয়ারী,বৃহস্পতিবার,২০২২ | আপডেট: ০৯:১০ এএম, ১৯ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
গতকাল রবিবার (২০শে ফেব্রুয়ারি, ২০২২) অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে যথাযথ ভাবগাম্ভীর্য ও মর্যাদার সাথে মেলবোর্ন বাংলা স্কুল ও মেলবোর্ন বাংলাদেশি কম্যূনিটি ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ‘জাতীয় শহীদ দিবস’ ও ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ উদযাপন করা হয়।
শুরুতেই অতিথিবৃন্দ স্কুলের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, ও অভিভাবকদের নিয়ে অমর একুশে উপলক্ষে আয়োজিত শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা উদ্বোধন করেন। চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার সার্বিক দায়িত্বে ছিলেন বাংলা স্কুলের শিক্ষক মিতা পারভিন এবং নাসিমা খান আর বিচারকের দায়িত্বে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সটিটিউট এবং আর এম আই টি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী, চিত্রশিল্পী হাসিনা চৌধুরী মিতা।
অনুষ্ঠানের শুরুতে কোরআন তেলাওয়াত করে স্কুলের শিক্ষার্থী সুমাইয়া হক। এরপর ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে করে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মেলবোর্ন বাংলা স্কুলের অধ্যক্ষ ও মেলবোর্ন বাংলাদেশি কম্যূনিটি ফাউন্ডেসনের সভাপতি জনাব মোল্লা মোঃ রাশিদুল হক। তিনি স্কুলের শিক্ষার্থী ও অনুষ্ঠানে আগত অতিথিদের সামনে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের পটভূমি, ভাষা রক্ষায় এর প্রয়োজনীয়তা, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে এর ভূমিকা, ইত্যাদির উপর আলোকপাত করেন ও পরবর্তী প্রজন্মের জন্যে ভাষা শিক্ষার উপর গুরুত্ত আরোপ করেন। উনি সমাজ ও দেশের স্বার্থে করা মেলবোর্ন বাংলাদেশি কম্যূনিটি ফাউন্ডেশনের উল্লেখযোগ্য কর্মকাণ্ড সবার সামনে তুলে ধরেন ও মেলবোর্নে বসবাস রত বাংলাদেশীদের ও মেলবোর্ন বাংলা স্কুলের উন্নয়নে সবাইকে এগিয়ে আসার আহবান জানান।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকলের জন্যেএরপর অমর একুশের উপর এক প্রামান্য চিত্র দেখানো হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া রাজ্যের মোরল্যান্ড সিটি কাউন্সিলের সন্মানিত কাউন্সিলর স্যু বোল্টন। তিনি ব্যাক্তি ও সামাজিক জীবনে মাতৃভাষা শিক্ষার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। বাংলা ভাষার ইতিহাস জানতে পেরে অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীদের ভাষা ও জীবনের সংগ্রামের সাথে বাংলা ভাষা ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের তুলনা করেন। তারা তাদের ছোটবেলায় ইংরেজীর পাশাপাশি আরবী, ইটালিয়ান ইত্যাদি ভাষা শিক্ষার কথা স্মরন করেন। স্থানীয় পাঠাগারে বাংলা বই সরবরাহ ছাড়াও ভবিষ্যতে বাংলা ভাষা শিক্ষা ও বাংলাদেশী কম্যূনিটির সবধরনের সাহায্যে এগিয়ে আসার প্রতিশ্রুতি দেন। এছাড়া বক্তব্য রাখেন থাই ল্যাঙ্গুয়েজ স্কুলের প্রধান শিক্ষক নামটিপ ম্যুর। তিনি ভাষা প্রসারে ল্যাঙ্গুয়েজ স্কুলের অবদানের কথা স্মরণ করিয়ে দেন।
মেলবোর্ন বাংলাদেশি কম্যূনিটি ফাউন্ডেশনের প্রধান উপদেস্টা জনাব ড. মাহবুব আলম তাঁর বক্তব্যে বলেন রক্ত ছাড়া যেমন মানুষ বাঁচতে পারে না তেমনি মাতৃভাষা ছাড়া কোন জাতি বাঁচতে পারেনা। তিনি আরও বলেন, আজ ২১ শে ফেব্রুযারী (অন্তর্র্জাতিক মাতৃভাষা দিবস) সারা বিশ্বের প্রতিটি জাতিকে তাদের মাতৃভাষাকে মূল্যায়ণ ও সংরক্ষনের তাগিত দেয়। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট কৃষিবিদ ড.মাহাবুবুর মোল্লা, বিশিস্ট জিপি ড. আবুল কাশেম, অস্ট্রেলিয়া-বাংলাদেশ ইসলামিক কাউন্সিলের প্রাক্তন সভাপতি জনাব আবু জাফর মোহাম্মাদ আলী, চিত্রশিল্পী হাসিনা চৌধুরী মিতা, প্রমুখ।
এরপর শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অস্ট্রেলিয়া এবং বাংলাদেশের সম্মিলিত জাতীয় সঙ্গীত ও অমর একুশের গান গেয়ে শোনায় মেলবোর্ন বাংলা স্কুলের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক ও অতিথি বৃন্দ। অনুষ্ঠানে থাই জাতীয় সঙ্গীত শোনায় থাই ল্যাঙ্গুয়েজ স্কুলের শিক্ষার্থী প্যাট্রিক, এবং কবিতা শোনায় আরেক শিক্ষার্থী। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ছড়া ও কবিতা আবৃত্তি করে ও গান গেয়ে শোনায় মেলবোর্ন বাংলা স্কুলের শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবক বৃন্দ। তাদের মধ্যে সুমাইয়া হক, সাদ ইবনুল হক, মানহা মাহবুব, মানিভা মাহবুব, আরিশা বিনতে আফতাব, নেহান রানা, আরাশ রানা, নুসাইবা, আফরাজ, সুহাইলা, আবু বকর, আলীনা হক, ও ফউজিয়া উল্লেখযোগ্য।
এরপর শুরু হয় চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরনী অনুষ্ঠান। পুরস্কার বিতরন করেন কাউন্সিলর স্যু বোল্টন। চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় ছোটদের মধ্যে প্রথম হয় মানিভা, দ্বিতীয় হয় আলীনা, ও তৃতীয় হয় নুসাইবা। বড়দের মধ্যে প্রথম হয় আরিশা এবং আয়েশা, দ্বিতীয় হয় সাদ এবং যুগ্মভাবে তৃতীয় হয় সুমাইয়া এবং মানহা । তাছাড়া চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী সবাইকে সার্টিফিকেট ও বিভিন্ন পুরস্কার দেয়া হয়।
অনুষ্ঠানের শেষে সবাইকে অনুষ্ঠানে আসার জন্যে ধন্যবাদ জানিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন জনাব মোল্লা মোঃ রাশিদুল হক। সার্বিক তত্তাবধানে ছিলেন মোল্লা মোঃ রাশিদুল হক, ড. মাহবুবুল আলম, মোঃ সাব্বির, মোঃ রাশেদ, মিতা পারভীন, জোবাইদা আলী, নাসিমা খান সহ আরও অনেকে। অনুষ্ঠান শেষে সবাই একসাথে দুপুরের আহার উপভোগ করেন।