ইউরোপে ঢুকতে নৌকাডুবি, ৫ সিলেটীসহ ৭ বাংলাদেশীর লাশ স্পেনের হাসপাতালে
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২০ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০১৯ | আপডেট: ০৯:৩৬ এএম, ২১ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
গত ২৬ নভেম্বর স্পেনে প্রবেশ করতে গিয়ে ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে নি’হত ৯ জন অ’ভিবাসনপ্রত্যাশীর লা’শ পড়ে আছে স্পেনের সমুদ্র উপকূলবর্তী শহর ম্যালিয়ার একটি হাসপাতালে। মাদ্রিদে বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এদের কারোর সঙ্গেই কোনো পরিচয়পত্র না থাকায় তারা কোন দেশের নাগরিক- হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তা নিশ্চিত করতে পারছে না। তবে হাসপাতালটিতে অন্তত ৬ জন বাংলাদেশির লা’শ থাকতে পারে বলে ম্যালিয়া ক্যাম্পে অবস্থানকারী একজন বাংলাদেশি জানিয়েছেন। ভাগ্যান্বেষণে ঝুঁ’কিপূর্ণ যাত্রা : ভাগ্যান্বেষণে নানা দেশ ঘুরে, ম’রু-পাহাড়-পর্বত ডিঙিয়ে সর্বশেষে সাগর পাড়ি দিয়ে স্পেনে প্রবেশ করতে চেয়েছিলেন তারা।
২৫ নভেম্বর ম’রক্কো থেকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ম্যালিয়ায় প্রবেশ করাতে মানব পাচারকারীরা তাদের তুলে দেয় প্লাস্টিকের একটি নৌকায়। ২৬ নভেম্বর ম্যালিয়ার কাছে ৭৯ জনকে বহন করা নৌকাটি ডুবে যায়, এখানে ছিলেন ১৮ জন অ’ভিবাসনপ্রত্যাশী বাংলাদেশি। ম্যালিয়া ক্যাম্পে অবস্থানকারী অ’ভিবাসনপ্রত্যাশী একজন বাংলাদেশি নাম প্রকাশ না করার শর্তে ফেসবুক মেসেঞ্জার অ্যাপের মাধ্যমে জানান, তার সঙ্গে ওই নৌকায় থাকা ১১ জন বাংলাদেশির আলাপ হয়েছে। তাদের তথ্য অনুসারে তিনি জানান, নৌকায় ১৮ জন বাংলাদেশির মধ্যে ১১ জন ক্যাম্পে প্রবেশ করেছে। বাকি ৭ জনের মধ্যে ১ জন পানিতে ভেসে গেছে।
বাকি ৬ জনের কেউ বেঁচে থাকলে তাদের এ ক্যাম্পে নিয়ে আসত কর্তৃপক্ষ। তাদের লা’শ হাসপাতালে থাকার সম্ভাবনার কথাও জানিয়েছেন তারা। বাংলাদেশির পরিচয় : বিভিন্ন সূত্রে সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ২৬ নভেম্বরের নৌকাডুবিতে মৃ’ত ও নিখোঁজ ৭ জনের মধ্যে মোট পাঁচজন বাংলাদেশির পরিচয় জানা গেছে। এ পাঁচজনের বাড়ি সিলেট বিভাগে। তাদের পরিবার সূত্রে জানা যায়, বিশ্বনাথ উপজে’লার অলংকারী ইউনিয়নের পেছিখুম’রা গ্রামের আশিক মিয়ার ছে’লে আবু আশরাফ মা’রা গেছে। ২৯ নভেম্বর তার পরিবার বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছেন বড়লেখা উপজে’লার সুড়িকান্দি গ্রামের আফতাব উদ্দিনের ছে’লে জাকির হোসেন ও পকুয়া গ্রামের জালাল উদ্দীন।
এ ছাড়াও নিখোঁজ রয়েছেন সিলেটের দক্ষিণ সুরমা’র শাহীন আহমেদ ও সুনামগঞ্জ সদরের ইব্রাহিমপুর গ্রামের আলাউদ্দিনের ছে’লে মো. আমির হোসেন জুনেদ। এর মধ্যে মো. জুনেদকে উ’দ্ধারকর্মীরা উ’দ্ধার করে নিয়ে যাচ্ছে মুমূর্ষু অবস্থায়- এমন ছবি স্পেনের জাতীয় দৈনিক ‘এল পাইস’সহ কয়েকটি অনলাইনে প্রকাশিত হয়েছে। ছবি দেখে জুনেদকে চিনতে পারলেও তার পরিবার এখন পর্যন্ত জুনেদের কোনো খোঁজ পায়নি। নি’হত ও নিখোঁজদের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, প্রায় এক বছর আগে স্পেনে যাওয়ার উদ্দেশে দালালের মাধ্যমে প্রথমে তারা আলজেরিয়ায় যান।
সেখান থেকে ২০ দিন আগে ম’রক্কোয় পৌঁছান। কয়েক দফায় দালালরা তাদের স্পেনে পাঠানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। সর্বশেষ ২৫ নভেম্বর দালালদের সহায়তায় ম’রক্কোর নাদুর এলাকা থেকে নৌকায় সাগর পথে বাংলাদেশি ১৮ জনসহ মোট ৭৯ জন ম্যালিয়ার উদ্দেশে যাত্রা করেন। সমুদ্র পাড়ি দেওয়ার আগে ২৪ নভেম্বর নি’হত আশরাফ ইমো অ্যাপের মাধ্যমে পরিবারের সঙ্গে শেষ কথা বলেন। আশরাফ পরিবারকে জানান, ম্যালিয়ার উদ্দেশে রওনা হবেন।
এরপর পরিবারের সঙ্গে তার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকে। একাধিক সূত্র এবং মৃ’ত ও নিখোঁজদের পরিবার থেকে জানা যায়, ভাগ্য বদলের জন্য ইউরোপে যাওয়ার আশায় দালালদের সঙ্গে ১৫ লাখ টাকার চুক্তি হয়। টাকার বড় অংশও পরিশোধ করা হয়। বাংলাদেশির লা’শ শনাক্তকরণে বিলম্ব : ম্যালিয়া হাসপাতালে ৯ জন অ’ভিবাসনপ্রত্যাশীর মৃ’তদেহ রয়েছে, যাদের পরিচয় জানায়নি কর্তৃপক্ষ।
এর মধ্যে দুজন বাংলাদেশি রয়েছেন বলে দাবি করেছেন মাদ্রিদে বাংলাদেশি মানবাধিকার সংস্থা ভালিয়েন্তে বাংলার সভাপতি ফজলে এলাহি। তাদের লা’শ দ্রুত বাংলাদেশে প্রেরণ করা যায়, সে জন্য ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি। দুই সপ্তাহ পরও দুজনের লা’শ শনাক্ত ও বাংলাদেশে প্রেরণে বিলম্ব হওয়ার জন্য দূতাবাসকে দায়ী করেন তিনি। মাদ্রিদে বাংলাদেশ দূতাবাসে যোগাযোগ করা হলে ফার্স্ট সেক্রেটারি (লেবার উইং) মোহাম্ম’দ শরিফুল ইস’লাম বলেন, আম’রা হাসপাতালে যোগাযোগ করেছি। তারা জানিয়েছেন, হাসপাতালে নয়জনের মৃ’তদেহ রয়েছে।
কিন্তু তাদের কাছে কোনো ডকুমেন্ট না থাকায় পরিচয় নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, বাংলাদেশি যারা নিখোঁজ রয়েছেন, তাদের তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করা হচ্ছে। আমাদের একজন কর্মক’র্তা খুব শিগগিরই ম্যালিয়ায় যাচ্ছেন লা’শ শনাক্তের জন্য।