হাইকোর্টের রায়ে স্ত্রীকে ফিরে পেলেন শ্যাম সুন্দর
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১৪ নভেম্বর,সোমবার,২০২২ | আপডেট: ০৮:১০ এএম, ২৫ ডিসেম্বর,
বুধবার,২০২৪
ভালোবাসার জয় রংপুরের বদরগঞ্জের যুবক শ্যাম সুন্দর রায় ভালোবেসে করে বিয়ে করেছিলেন হেমা শর্মাকে। হেমার পরিবার এ বিয়ে মেনে নিতে পারেনি। মেয়ের বয়স ১৮ বছরের নিচে দেখিয়ে পুলিশের মাধ্যমে হেমাকে ফিরিয়ে নেন বাবা রাকেশ শর্মা। এরপর মেয়েকে আত্মীয়স্বজনদের বাড়িতে লুকিয়ে রাখেন। এদিকে স্ত্রীকে ফিরে পেতে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন শ্যাম সুন্দর।
আদালতে শ্যাম সুন্দরের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। তিনি জানান, হেমা ও শ্যামের দাম্পত্য জীবন ফিরে পাওয়ার লড়াইটা ছিল ব্যতিক্রম। চলতি বছর ১৩ জানুয়ারি তারা ভালোবাসার সম্পর্ককে বিয়েতে রূপ দেন। শ্যামের পরিবার এ বিয়েতে সম্মত থাকলেও পিতৃহীন হেমার মা-মামারা মেনে নেননি। তাই বিয়ের রাতেই হেমাকে পুলিশের সহায়তায় তুলে নিয়ে গিয়ে মামা গণেশের বাড়িতে আটকে রেখে নির্যাতন চালায় তার পরিবার।
বিচারপতি মো.মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের হাইকোর্ট বেঞ্চ গত ৩১ অক্টোবর এক আদেশে রোববার (১৩ নভেম্বর) হেমাকে হাজির করার নির্দেশ দেন। হাইকোর্টের আদেশে পুলিশি প্রহরায় হেমাকে আদালতে উপস্থিত করা হয়। পরে তিনি আদালতের কাছে শ্যামের সঙ্গে বিয়ে, মা-মামাদের অত্যাচার ও জোর করে আটক করে রাখার বিষয়ে জানান। তাকে দিয়ে মিথ্যা মামলা করানো হয় বলেও উল্লেখ করেন। এ সময় তিনি স্বামীর কাছে ফেরার ইচ্ছাও প্রকাশ করেন।
শ্যাম সুন্দরের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, পৌর শহরের পুরাতনবাজার পাড়ার রাকেশ শর্মার মেয়ে হেমা শর্মার (১৮) সঙ্গে শ্যামের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। মেয়ের পরিবার বেশ বিত্তশালী হওয়ায় এই সম্পর্ক তাঁরা মেনে নিতে পারেননি। চলতি বছরের ১৩ জানুয়ারি হেমা শর্মা একাই শ্যামের বাড়িতে চলে আসেন। ঘরোয়াভাবে তাঁদের বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়।
বিয়ের খবর জানার পর হেমার বাবা মেয়েকে অপ্রাপ্তবয়স্ক দেখিয়ে শ্যাম সুন্দর রায়ের বিরুদ্ধে বদরগঞ্জ থানায় অপহরণ এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে অভিযোগ দেন। মামলার পর পুলিশ হেমাকে স্বামীর বাড়ি থেকে তুলে এনে বাবার হাতে তুলে দেয়। এরপর থেকে হেমাকে আত্মীয়স্বজনদের বাড়িতে লুকিয়ে রাখেন বাবা।
শ্যামের পরিবার জানায়, পুলিশ নিয়ে যাওয়ার পর থেকে শ্যাম সুন্দর তাঁর স্ত্রীকে খুঁজে পাচ্ছিলেন না। অবশেষে স্ত্রীকে ফিরে পেতে গত ৩১ অক্টোবর আইনজীবীর মাধ্যমে হাইকোর্টে আবেদন করেন। ওই আবেদন আমলে নিয়ে ১৩ নভেম্বর হেমা শর্মাকে সশরীরে হাজির করতে রংপুরের পুলিশকে নির্দেশ দেন উচ্চ আদালত। আজ হেমা শর্মাকে হাইকোর্টে হাজির করা হলে বিচারপতি মজিবুর রহমান মিয়া ও কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দ শুনানি শেষে তাঁকে শ্যাম সুন্দর রায়ের হাতে তুলে দেন।
হাইকোর্টের রায়ে খুশি শ্যাম সুন্দর রায় বলেন, ‘আমি ভালোবেসে হেমা শর্মাকে বিয়ে করেছি। কিন্তু পুলিশ আমার কাছ থেকে জোর করে তাকে ছিনিয়ে নিয়ে তার পরিবারের হাতে তুলে দিয়েছিল। আমি বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ করেও স্ত্রীকে না পেয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হই। সেখানে আমি সঠিক বিচার পেয়েছি।
আইনজীবী তাজুল ইসলাম আরও জানান, আদালত পরে হেমার মা, মামা, শ্যাম ও শ্যামের পিতার বক্তব্যও সরাসরি জানতে চান। সবকিছু শুনে বিচার কক্ষ থেকেই হেমাকে তার স্বামী শ্যামের কাছে তুলে দিতে নির্দেশ দেন বিচারকগণ।