সাড়ে ১৮ লাখ টাকা ব্যয়ে দাঁড়িয়ে দুটি পিলার, ৬ বছরেও হয়নি ব্রিজ
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১১ নভেম্বর,শুক্রবার,২০২২ | আপডেট: ০৯:৫৩ পিএম, ২৬ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার সর্বরামপুর-ভবানীপুর চৌতাপাড়ায় রতনডারি খালের মাঝখানে প্রায় ছয় বছর ধরে দাঁড়িয়ে আছে দুটি পিলার। বরাদ্দের প্রায় ১৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয় হলেও নির্মাণ হয়নি ব্রিজ।
ফলে বর্ষা মৌসুমে কয়েক কিলোমিটার পথ পেরিয়ে ওপারে যেতে হচ্ছে পথচারীদের। এতে করে চরম দুর্ভোগে রয়েছেন ১০ গ্রামের স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ কৃষিনির্ভর প্রায় ৭ হাজার পরিবার। এলাকাবাসীর উন্নয়ন ও দুর্ভোগ লাঘবে দ্রুত ব্রিজটির নির্মাণকাজ শেষ করে চলাচলের উপযোগী করার দাবি স্থানীয়দের।
জানা যায়, ব্রিজ নির্মাণের জন্য ২০১৬ সালে উপজেলা পরিষদের বার্ষিক উন্নয়ন তহবিল (এডিপি) থেকে প্রায় ১৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। ওই বছরের মার্চ মাসে ব্রিজটি নির্মাণে দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে ঠিকাদার নিয়োগ করে এলজিইডি। কাজটির দায়িত্ব পেয়েছিলেন নওগাঁ শহরের পার-নওগাঁ মহল্লার গোলাম কিবরিয়ার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। উপজেলা প্রকৌশলীর তত্ত্বাবধায়নে ব্রিজ নির্মাণ কাজ শুরু হলেও রহস্যজনক কারণে কাজটি সমাপ্ত না করে সেখানে শুধু দুটি পিলার নির্মাণ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এর পর এস্টিমেটসহ দরপত্র বিবরণীর ফাইলটিও উপজেলা পরিষদ থেকে একসময় গায়েব হয়ে যায়।
আবার বরাদ্দের পুরো টাকায় শুধু দুটি পিলার তৈরি করে ব্রিজের কাজ শেষ না করলেও ঠিকাদারকে সম্পূর্ণ বিল দেওয়া হয়েছে এমন অভিযোগ রয়েছে।
দীর্ঘ ছয় বছর পর চলতি বছরে উপজেলা পরিষদের বার্ষিক উন্নয়ন তহবিল (এডিপি) থেকে ব্রিজটির আরও দুটি পিলার নির্মাণের জন্য আবারও প্রায় ১৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় কৃষক তোফাজ্জল হোসেন, মজিদ, খালেকসহ অনেকেই জানান, বর্ষা মৌসুমে খাল পেরিয়ে ফসল ঘরে আনতে গেলে পানিতে ভিজে যায়। পরিবহণযোগে ফসল ঘরে আনতে গেলে লাভ তো দূরের কথা লোকসানের মুখে পড়তে হয়। দীর্ঘ ২৮ বছরের প্রত্যাশিত ব্রিজটি আজও নির্মাণ না হওয়ায় যাতায়াতসহ সর্বক্ষেত্রে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা লুৎফর রহমান, রাশেদুজ্জামানসহ আরও অনেকেই বলেন, বর্ষা মৌসুমে ওপারে যেতে হলে সবসময় নৌকাও পাওয়া যায় না। তখন সাঁতরে ওপারে যেতে হয়, তা না হলে প্রায় ৪-৫ কিলোমিটার দূর দিয়ে ঘুরে আসতে হয়। এত দূরের পথ পেরিয়ে বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাতেও ভয় হয়। এই ব্রিজ না থাকায় আমাদের অন্তত ১০ গ্রামের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নসহ নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে।
এদিকে ব্রিজটি নির্মাণের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
রাণীনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রউফ দুলু বলেন, সর্বরামপুর ফুট ব্রিজটি নির্মাণ হলে খালের দুই পাড়ের বাসিন্দাদের জীবনযাত্রায় আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। তবে ওই ব্রিজ নির্মাণ সম্পন্নের জন্য যে পরিমাণ টাকার প্রয়োজন তা উপজেলা পরিষদ থেকে একবারে দেওয়া সম্ভব নয়। চলতি বছরে আবারও (এডিপি) থেকে ১৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে রাণীনগর উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) ইসমাইল হোসেন বলেন, ৬ বছর আগে ব্রিজটি নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল। তবে নির্মাণকাজ সম্পূর্ণ করতে প্রয়োজনীয় অর্থের অভাবে কাজটি পিছিয়ে পড়ে। চলতি বছরে এডিপি থেকে কিছু টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আশা করছি অল্প কিছু দিনে মধ্যেই আবার নির্মাণকাজ শুরু হবে।