avertisements 2

এক শামীমার কাছে জিম্মি ১২’শ শিক্ষক!

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৬ নভেম্বর,রবিবার,২০২২ | আপডেট: ০৪:৪৫ পিএম, ১৫ মে, বুধবার,২০২৪

Text

শামীমা আক্তার। ছবি: সংগৃহীত

টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে শিক্ষকদের দক্ষতা অর্জনে পরিচালিত রিসোর্স সেন্টারে (ইউআরসিতে) কর্মরত ডাটা এন্ট্রি অপারেটর শামীমা আক্তার (৪৫)। একই কর্মস্থলে ২০ বছর ধরে কর্মরত আছেন তিনি। দির্ঘ্যদিন একই স্থানে কর্মরত থাকায় উপজেলা শিক্ষা অফিস, রিসোর্স সেন্টারের কতিপয় কর্মকর্তা এবং কিছু দুর্নীতিপরায়ণ শিক্ষক নেতার যোগসাজশে প্রায় ১২শ শিক্ষককে জিম্মি করে প্রশিক্ষণের নামে তিনি প্রতি মাসে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী শিক্ষকরা।

সরকারি নিয়মের তোয়াক্কা না করে প্রায় দুই যুগ একজন সরকারি কর্মচারি একই কর্মস্থলে কিভাবে চাকরি করেন- এ নিয়ে ক্ষুব্দ শিক্ষক-কর্মচারিরা। শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তারা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেছেন, বদলী প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে অচিরেই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) মির্জাপুরে উপজেলা সদরের সরিষাদাইর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রিসোর্স সেন্টারে (ইউআরসিতে) সরেজমিন ঘুরে ভুক্তভোগী শিক্ষকদের সঙ্গে কথা হলে তারা নানা অনিয়ম আর দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ধরেন।

অফিস সূত্র জানায়, ইউআরসির রিসোর্স সেন্টারের ডাটা এন্ট্রি অপারেটর শামীমা আক্তার ২০০২ সালে মির্জাপুর অফিসে যোগদান করেন। তার গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের ভুয়াপুর উপজেলায় হলেও ক্ষমতার প্রভাব বিস্তার করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে শিক্ষকদের দক্ষতা অর্জনে পরিচালিত মির্জাপুরে রিসোর্স সেন্টারে (ইউআরসিতে) একই পদে কর্মরত প্রায় দুই দশক। 

আজ শুক্রবার (৪ নভেম্বর) মির্জাপুর উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্র জানায়, এ উপজেলায় ১৭০ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে এবং শিক্ষক কর্মচারির সংখ্যা প্রায় ১২শ। মির্জাপুর পৌরসভা, মহেড়া, জামুর্কী, ফতেপুর, বানাইল, আনাইতারা, ওয়ার্শি, ভাতগ্রাম, ভাওড়া, বহুরিয়া, গোড়াই, লতিফপুর, আজগানা, তরফপুর ও বাঁশতৈল ইউনিয়নে আটটি ক্লাস্টারের মাধ্যমে শিক্ষা অফিসার ও সহকারী শিক্ষা অফিসাররা শিক্ষকদের তদারকি করেন। শিশুদের ঝড়েপরা রোধ, প্রাথমিক শিক্ষার গুনগত মানোন্নয়ন এবং শিক্ষকদের অধিক দক্ষতা অর্জনের জন্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় মির্জাপুরে সরিষাদাইর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রিসোর্স সেন্টার গড়ে তুলেন। এখানে একজন ইন্সট্রাক্টরের (প্রশিক্ষকের) মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। 

এদিকে তদারকি না থাকায় এ রিসোর্স সেন্টারে অনিয়ম আর দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করেন প্রভাবশালী ও ক্ষমতাধর ডাটা এন্ট্রি অপারেটর শামীমা আক্তার। উপজেলার ১০-১৫ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অন্তত ২০ জন অসহায় ও নিরীহ শিক্ষক অভিযোগ করেন, মন্ত্রণালয় থেকে পদন্নোতি বা বদলীর ব্যবস্থা নেওয়া হলেও ক্ষমতার দাপট আর অর্থের লোভে ডাটা এন্টি অপারেটর শামীমা আক্তার কখনো বদলী হন না।

উপজেলা শিক্ষা অফিস, রিসোর্স সেন্টার এবং স্থানীয় কিছু শিক্ষক নেতার সঙ্গে সখ্যতা থাকায় প্রায় ১২শ শিক্ষকদের জিম্মি করে প্রশিক্ষণের নামে তিনি বিপুল অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। তার চাহিদা মত টাকা না দিলে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ থেকে বাদ দেওয়া হয়। এছাড়া নিরীহ শিক্ষকদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ, দুব্যবহারসহ বিভিন্ন ভাবে হয়রানী করা হয় বলে ভুক্তভোগী শিক্ষকরা অভিযোগ করেন।

তারা আরও অভিযোগ করেন, শামীমা আক্তার প্রশিক্ষণের নাম অন্তভুক্ত করার জন্য বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মোবাইলে যোগাযোগ করে বিকাশে টাকা পাঠাতে বলেন। টাকা না পাঠালে তাদরে নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয় না। টাকার বিনিময়ে একই শিক্ষক একাধিক বিষয়ে প্রশিক্ষণ পাচ্ছেন শামীমা আক্তারের খুঁটির জোরে বলে অভিযোগ রয়েছে। কোন শিক্ষক তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে তাকে বিভিন্ন ভাবে হুমকিসহ বয়ভিতি দেখানো হয়। ভুক্তভোগী শিক্ষক কর্মচারিরা ডাটা এন্টি অপারেটর শামীমা আক্তারের দ্রুত বদলীসহ তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জোর দাবী জানিয়েছেন।

এ ব্যাপারে রিসোর্স সেন্টারে কর্মরত অভিযুক্ত ডাটা এন্টি অপারেটর শামীমা আক্তার বলেন, কিছু শিক্ষক কর্মচারি আমার বিরুদ্ধে নানা ভাবে অভিযোগ দিয়ে যাচ্ছেন। অনৈতিক লেনদেনের সঙ্গে তিনি জড়িত নয় বলে দাবী করেন। তবে ২০০২ সাল থেকে তিনি এই অফিসে একই পদে কর্মরত বলে জানিয়েছেন। নানা সমস্যার কারণে তিনি বদলী হতে পারেনি বলে জানিয়েছেন।

উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন বলেন, রিসোর্স সেন্টার দেখাশোনা করেন একজন ইন্সট্রাক্টর। শিক্ষা অফিস থেকে শুধু প্রশিক্ষণার্থী শিক্ষকদের নামের তালিকা পাঠানো হয়। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে তদন্ত সাপেক্ষে ডাটা এন্টি অপারেটরের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মির্জাপুর উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের ইন্সট্রাক্টর ড. মো. আব্দুর রহিম এ বিষয়ে বলেন, ডাটা এন্টি অপারেটর শামীমা আক্তার দীর্ঘ দিন ধরে এ অফিসে কর্মকর্তা এটা সত্য। অনেকেই নানা অভিযোগ করেছেন। কোন শিক্ষক কর্মচারি তার বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত লিখিত অভিযোগ দেননি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ ব্যাপারে টাঙ্গাইল জেলা পিটিআইয়ের সুপার (চলতি দায়িত্ব) অমল চন্দ্র সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হেল তিনি বলেন, একজন ডাটা এন্টি অপারেটর সরকারি কর্মচারি হয়ে কি ভাবে একই কর্মস্থলে ২০ বছর থাকেন এটা বোধগম্য নয়। মন্ত্রণালয় থেকে বদলী প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত সময়ের মধ্যে তাকে বদলীসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2