avertisements 2

১৬ শিক্ষার্থীর জন্য ৯ জন শিক্ষক

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১৯ আগস্ট,শুক্রবার,২০২২ | আপডেট: ১২:২৭ পিএম, ২২ এপ্রিল,মঙ্গলবার,২০২৫

Text

দুপুর ১টা। চেয়ারে বসে আলিম প্রথম বর্ষের ক্লাস নিচ্ছিলেন শিক্ষক ফাতেমাতুজ জোহুরা। তবে বড়সড় ক্লাসরুমে শিক্ষার্থী মাত্র দু'জন, সাদিয়া আক্তার বেলি ও আঙ্গুরা আক্তার। অথচ কাগজে কলমে শিক্ষার্থী ২৩ জন। দ্বাদশ শ্রেণিতে গিয়ে পাওয়া গেল না কাউকে। আরেকটিতে একজন পাওয়া গেলেও ছিলেন না শিক্ষক। অন্য শ্রেণিকক্ষেও নেই শিক্ষার্থীদের কলরব। এমন দৃশ্য ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার মগটুলা ইউনিয়নের বৈরাটী আলিম সিনিয়র মাদ্রাসার।

ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ সড়কের পাশে বৈরাটী গ্রামের আবদুর রউফসহ চার শিক্ষানুরাগী ১১০ শতাংশ জমিতে প্রতিষ্ঠা করেন মাদ্রাসাটি। তবে মামলা, শিক্ষক সংকট ও দলাদলিতে জর্জরিত প্রতিষ্ঠানটি। শিক্ষার্থী ফেরাতে শিক্ষকদেরও তেমন আগ্রহ নেই। ১৯৬০ সালে প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসায় এখন সাইনবোর্ডও নেই। এ দুরবস্থার জন্য শিক্ষক সংকটকে দায়ী করলেন ফাতেমাতুজ জোহুরা। তাঁর দাবি, কয়েকজন শিক্ষক বদলি হওয়ায় শিক্ষার্থী কমে গেছে।

কাগজে কলমে মাদ্রাসায় শিক্ষার্থী ৫১০ জন। তবে গত শনিবার সরেজমিনে পাওয়া গেল ১৬ জন। ষষ্ঠ শ্রেণিতে সাতজন এবং সপ্তম শ্রেণিতে ছিল চারজন। তাদের পাঠদানের জন্য আছেন ৯ শিক্ষক। সংশ্নিষ্টরা জানান, প্রতিষ্ঠানের জীর্ণদশার কারণে চুরি হয়ে যাচ্ছে নানা সামগ্রী। শিক্ষার্থী না থাকায় নতুন বইয়ের বান্ডিল শিক্ষক মিলনায়তনে পড়ে আছে, জমেছে ধুলা। এবতেদায়ি, দাখিল ও আলিম শাখা শিক্ষার্থী সংকটে ধুঁকলেও একই চত্বরে বৈরাটী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কানায় কানায় পূর্ণ।

দশম শ্রেণিতে উপস্থিত একমাত্র ছাত্রী নাফিজা আক্তার তাবাসসুমের ভাষ্য, সে ছাড়া আরও পাঁচজন ছিল ক্লাসে। তবে বাকিরা চলে গেছে। ওই ক্লাসে কাগজে কলমে ৪৬ শিক্ষার্থী রয়েছে। নবম শ্রেণিতে ৬৪ থাকলেও বাস্তবে কাউকে পাওয়া যায়নি। পাঠদানের সময় নিয়মিত নামও ডাকা হয় না। অষ্টম শ্রেণিতে উপস্থিত রুবাইয়া সুলতানা ঝুমা ও সুমাইয়া আক্তার জানায়, তারা তিনজন এলেও একজন চলে গেছে।

১৯৯৯ সালে মামলা জটিলতায় পড়ে মাদ্রাসাটি। ১৯৯৯, ২০১০, ২০১১ ও ২০১৬ সালে কমিটি গঠন, অধ্যক্ষ নিয়োগ, শিক্ষকদের দ্বন্দ্বে একাধিক মামলা হয়। প্রতিষ্ঠানটির জমিদাতা পরিবারের সদস্য এবং অধ্যক্ষ নিয়োগ নিয়ে করা মামলার বাদী আবুল কালাম এবতেদায়ি শাখার সহকারী শিক্ষক। তাঁর অভিযোগ, অধ্যক্ষের উদাসীনতার কারণেই এই দুরবস্থা।

মাদ্রাসার ৬৭ শিক্ষার্থী উপবৃত্তি পায়। এজন্য প্রত্যেকের কাছ থেকে ৩০০ টাকা করে নেওয়ার অভিযোগ করেছে একাধিক শিক্ষার্থী। অভিভাবক সমাবেশ, শিক্ষার্থীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে না আসার কারণ জানা ও আসতে উদ্বুদ্ধ করার নির্দেশনা থাকলেও শিক্ষকরা তা মানেন না। যদিও সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক মমতাজ বেগমের দাবি, ফোনে কল দিয়ে শিক্ষার্থীদের মাদ্রাসায় আসতে বলা হয়। এবতেদায়ি শাখায়ও কোনো শিক্ষার্থী পাওয়া যায়নি। শাখার প্রধান আবদুল মান্নান ভুঁইয়া বলেন, তিনটি ক্লাস হলেও দুপুরের আগে সবাই চলে গেছে।

সংশ্নিষ্টরা জানান, মাদ্রাসার এবতেদায়ি শাখায় শিক্ষক সংকট নেই। দাখিলে আটজন শিক্ষক নেই। আলিমে আরবি ও ইতিহাসের প্রভাষক আছেন। চার প্রভাষকসহ উপাধ্যক্ষ, দপ্তরি, নৈশপ্রহরী, আয়াসহ কয়েকটি পদে কর্মচারী নেই। শিক্ষকদের দাবি, এ কারণে শিক্ষার্থী কমেছে। তবে স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. আবদুল মান্নান বলেন, এলাকায় কলেজ পর্যায়ের প্রতিষ্ঠান না থাকায় মাদ্রাসাটি শিক্ষার্থীদের জন্য মঙ্গলের হতো।

এসব বিষয়ে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মো. শাহজাহান বলেন, মামলা জটিলতা, করোনা ও নিজেদের দুর্বলতার কারণে শিক্ষার্থী কমেছে। শিক্ষক পেলে পরিস্থিতি উন্নতি হবে। উদাসীনতার অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, উদাসীনতা থাকতেই পারে, আরও যাঁরা আছেন তাঁদেরও সক্রিয় হতে হবে।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, মামলা জটিলতা ও কমিটি না থাকায় মাদ্রাসায় নিয়োগ দেওয়া যাচ্ছে না। ইউএনও হাফিজা জেসমনি বলেন, প্রতিষ্ঠানটি নিয়ে কিছুদিন ধরেই অভিযোগ আসছে। দ্রুত এটি পরিদর্শন করা হবে।

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2