avertisements 2

মাধবী-৪৩

মোঃ আসাদুজ্জামান
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২৬ জুন,রবিবার,২০২২ | আপডেট: ০৭:৫৮ এএম, ১ মে, বুধবার,২০২৪

Text

মাধবী,
তোমার জন্য কোন প্রণতি নেই, নৈবেদ্য নিবেদনের কোন অন্জলি নেই, যতটা ভালোবাসা ছিলো তাও আজ অবশিষ্ঠ নেই, মনের দু’য়ারে শুধু উঁকি দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে এক মাংস-মাধবী ! সে যাই হোক, 
আজ শিখলাম কেউ কোন প্রশ্ন করলে তার সোজা সাপ্টা জবাব দিতে নেই । বিশেষ করে প্রশ্নকারী যদি উকিল হয় । উত্তরটা সত্য না মিথ্যা, গ্রহনযোগ্য না পাংতেও, অপরাধ না নির্দোষ তা বিবেচনার আগেই ভিন্ন অভিব্যক্তি প্রকাশ পায় প্রশ্ন কর্তার কাছ থেকে ! এটাই উকিলদের গুন, তাই কেউ উকিলদের ঘাটায় না । 
মাধবী, দেশ আজ দুইভাগে বিভক্ত ! বন্যা পীড়িত মানুষ এবং তাদের সমব্যাথি জনতা একদিকে , আর অন্যদিকে পদ্মা সেতুর উৎসবে মত্ত কিছু অনুসরণকারী ! বলা বাহুল্য যে আমি প্রথম পক্ষের সারিতে ॥ তুমি ?  তোমাকে আর কি জানতে চাইবো, তুমি তো আমার বিপরীতে থাকবে এটাই শ্বাশতঃ সত্য ! আজ সোস্যাল মিডিয়ার দেওয়ালে রাকসুর সাবেক ভিপি রিজভী আহমেদের ১৮ জুন ২০২২ তারিখের একটি বক্তব্যের বরাতে দেখলাম এখন পর্যন্ত বন্যার্ত প্রতিটি মানুষের জন্য সরকারী বরাদ্দ মাত্র ‘দেড় টাকা’ !! মানুষ অংকও জানে দেখি, পারেও বটে ! আচ্ছা মাধবী, দেড় টাকায় আজকের বাজারে কি পাওয়া যায় ? একটা বিস্কুট বড়জোর? এই উপহাস কি সত্যিই প্রাপ্য বিপদগ্রস্ত মানুষের জন্য ? পদ্মা সেতু উদ্বোধনে কত খরচ হবে ? তুমি হলে কি করতে ? উদ্বোধনের খরচ না দূর্গত মানুষের জন্য খরচ ? 
মাধবী, বহমান সময় অস্থির, কেউ কেউ বলে স্থবির, নিন্দুকেরা বলে প্রতিক্রিয়াশীল! আমি, তুমি, অগনিত মানুষ মিলে আমরা ! আজ তুমি বাদে অন্যদের নিয়ে যে আমরা, তাদের সবাই অনুভব করছি আমাদের অনুভূতিগুলো ভোঁতা হয়ে গেছে !গনতন্ত্রহীনতা, মূল্যস্ফিতি, দ্রব্যমূল্যের লাগামহীনতা, আইনের শাসনের অবর্তমান, মানবাধিকারহীনতা, আরও কত কি আজ আমাদের বিবেক এবং অনুভূতিকে নাড়া দিয়ে যাচ্ছে, কিন্ত কিছুই করছি না । নপুংশক হয়ে গেছি ! শঠতা আজ আমাদের পেয়ে বসেছে ! আমরা মানুষ হিসেবে পাথরের মূর্তি কিংবা হিম শীতল বরফ হৃদয়ের অধিকারী হয়ে গেছি ! কাউকে কাউকে অবশ্য অবিকল মানুষের মত দেখাচ্ছে, ঠিক তোমাকে যেমন দেখায় !

মাধবী, তোমার কাছে দু-মুঠো বিকেল চেয়েছিলাম, তুমি সন্ধ্যা দিয়েছিলে , গোলাপ কিংবা রজনীগন্ধা চাওনি কখনো ! 
ভরা জোছনার সন্ধ্যাগুলোতে তোমার  কাজল পরা দু’চোখে ঠিঁকরে পড়তো ফুল চন্দন ! কি অপূর্ব দেখাতো তোমাকে, কখনো বলা হয় নি ! তুমি আমার আকাশ হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষনিকের মেঘ হয়েছিলে ! আজ আমার বিরহের আকাশে তাকিয়ে তাই দেখি সেখানে বসন্ত আছে, কোকিল আছে, শুধু আমার কৃষ্ণচূড়া - মাধবী নেই !! 
মাধু, তোমার বিরহে নিত্যদিন আমার মনের সুন্দরেরা রক্তাক্ত হয়, তিক্ততায় ভেঙে পড়ে, মনকে কাঁদায় তোমার বিরহ বেদনা বুঝার জন্য ! নিত্যদিন তোমাকে ভাবি, তোমাকে অনুভব করি, নাজিম হিকমতের মত করে এখনো অনুভব করি ‘তুমি আমার কোমল প্রাণ মৌমাছি’ ! তোমাকে হারিয়ে যে বেঁচে আছি, একে বাঁচা বলে না মাধবী, এ জীবন্ত লাশ ছাড়া আর কিছু না ! 
মাধবী, তুমি ছিলে আমার আকাশের ধ্রুব তারা ! আমার অভিমানগুলো জমা হতো অমাবস্যার ক্লান্তিতে ! এখন, এই বিরহ বেলায় মাঝে মাঝে মনে হয়, তোমাকে ভালোবাসা ছিলো জ্বলন্ত নিকোটিনের মত, সাময়িক আত্মতৃপ্তি, চিরস্থায়ী দহন, আজন্ম হৃদয়ের রক্তক্ষরণ ! তোমার দেওয়া সন্ধ্যাগুলো আজ আমার বিরহ- বাসর ! আজ এ বর্ষা দিনে মনে পড়ছে, তুমি কখনো আষাঢ়ে  বৃষ্টি চাওনি, ভরা বসন্ত তোমার প্রিয় ছিলো ! আজ সব মনে পড়ছে মাধবী ॥ ভালো থেকো ! ভালোবেসে সখি নিভৃত যতনে আমার নামটি লিখো তোমার মনেরও মন্দিরে ….

লেখক: 
আইনজীবি ও রাজনৈতিক কর্মী 

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2