avertisements 2

পুলিশের সামনে কুপিয়ে হত্যা, নেপথ্যে ভারতীয় গরুর ব্যবসা!

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১৪ এপ্রিল,বৃহস্পতিবার,২০২২ | আপডেট: ০৭:৪৪ এএম, ২৩ এপ্রিল,মঙ্গলবার,২০২৪

Text

শেরপুরে শ্রীবরদী উপজেলার এক গ্রামে পুলিশের সামনে শেখবর আলী (৪৫) নামে একজনকে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনার নেপথ্যে ভারতীয় চোরাই গরুর ব্যবসা রয়েছে বলে জানা গেছে।

মঙ্গলবার সরেজমিনে শ্রীবরদী উপজেলার রানীশিমুল ইউনিয়নের হালুয়াহাটি গ্রামে গিয়ে নিহতের আত্মীয় ও গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে।

নিহতের বোন নিহতের বোন মাহমুদাসহ এলাকাবাসী জানান, বছর পাঁচেক আগে ভারতীয় চোরাই গরুর ব্যবসা নিয়ে মৃত শরাফত আলীর ছেলে জাকির হোসেন জিকো ও নিহত শেখবর আলীর মারপিট হয়। মারপিটের একপর্যায়ে জিকোকে দা দিয়ে গলায় কোপ দেয় শেখবর। এ ঘটনার পর থেকেই শেখবর আলী স্ত্রী সন্তান নিয়ে এলাকা ছাড়েন এবং দীর্ঘ দিন ধরে ঢাকায় বসবাস করছিলেন।

মাহমুদা বলেন, ভারতীয় গরুর ব্যবসা করত শেখবর। শেখবরের কাছে গরু প্রতি এক হাজার করে চাঁদা চেয়েছিল জিকো। কিন্তু আমার ভাই জিকোকে চাঁদা দিতে চায়নি। বাগ্‌বিতণ্ডার একপর্যায়ে শেখবরকে গলা টিপে ধরে জিকো। শেখবর রাগে জিকোর গলায় দা দিয়ে কোপ দেয়। তবে এ ঘটনায় মামলা না করে জিকো জানায়, শেখবর যেদিন বাড়িতে আসবে সেদিন তাকে মারবে। নিহতের বোন বলেন, ঘটনার পাঁচ বছর পর পুলিশ ও শত শত মানুষের সামনে জিকো জবাই করে মেরে ফেলল আমার ভাইকে।

উল্লেখ্য, গত ২৩ মার্চ সন্ধ্যায় আগে হালুয়াহাটি গ্রামে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে পশু জবাইয়ের ছুরি দিয়ে শেখবর আলীকে জবাই করে হত্যা করা হয়। এ সময় ঘটনাস্থলে পুলিশ উপস্থিত ছিল। ওই ঘটনায় আহত হয়েছে আরও দুজন। এর মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এ ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে মোট ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

নৃশংস এই হত্যার ভিডিও ঘটনার ১৭দিন পরে গত শনিবার রাতে কোন এক সময় এমডি সিরাজল (md sherajol) নামের এক আইডি থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করা হলে, তা মুহূর্তেই ভাইরাল হয়।

এলাকাবাসী জানান, ভারতীয় চোরাই গরু নিয়ে জিকোর সঙ্গে মারপিটের ঘটনার পর থেকে প্রায় পাঁচ বছর ধরে শেখবর আলী স্ত্রী সন্তান নিয়ে ঢাকাতেই থাকতেন। শেখবর ঘর-বাড়ি ছেড়ে ঢাকায় চলে যাওয়ার সুযোগে তার জমি-জমা দখল করে নেয় জিকোর পরিবার। ঘটনার আগের দিন পর্যন্ত অভিযুক্তদের ভয়ে এলাকায় আসেননি শেখবর। তবে, জমি উদ্ধারের জন্য বিভিন্নভাবে চেষ্টা চালায় শেখবর।

সূত্র জানায়, ঘটনার কয়েক দিন আগে জিকোরা মিলে শেখবর আলীর কয়েকটি গাছ কেটে নেয়। এ ঘটনায় ২২ মার্চ জিকোসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন শেখবর আলীর মা মাহফুজা বেগম (৬৫)। মায়ের কাছে ঘটনা শুনে ২৩ মার্চ সকালে স্ত্রী সন্তান নিয়ে শ্রীবরর্দীতে আসেন শেখবর। জিডির প্রেক্ষিতে ওই দিন শ্রীবরদী থানার এসআই ওয়ারেস ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান। পুলিশ ঘটনাস্থলে যাওয়ার সময় রাস্তা থেকে পুলিশের গাড়িতে ওঠেন শেখবর।

মা মাহফুজার দাবি, পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে গাড়ি থেকে নেমে ঘটনার বিষয় জানতে চায়। এ সময় প্রতিপক্ষরা কেউ সাড়া দেয়নি। একপর্যায়ে শেখবর পুলিশের গাড়ি থেকে নেমে আসলে পরিস্থিতি বদলে যায়। মুহূর্তের মধ্যেই দা, লাঠি, ফলা নিয়ে শেখবরের দিকে তেড়ে আসে প্রতিপক্ষের লোকজন। পুলিশ ও স্থানীয়রা ঠেকানোর চেষ্টা করলেও প্রতিপক্ষ দলের ২/৩জন শেখবরের মাথায় ও পায়ে কুপিয়ে তাকে মাটিতে শুইয়ে ফেলে। এর মধ্যেই জিকোর ভাই সাইফুল ছুরি দিয়ে ফিল্মি স্টাইলে জবাই করে শেখবরকে।

শেখবরের মা বলেন, আল্লাহু আকবর বলে আমার কলিজার টুকরাকে আমার সামনেই জবাই করা হলো। পাষণ্ডদের পায়ে ধরেও রক্ষা করতে পারিনি ছেলেকে।

ভিডিওতে দেখা যায়, পুলিশ ও শতাধিক মানুষের সামনেই জবাই করা হচ্ছে শেখবরকে। এ সময় পুলিশ ও স্থানীয়রা ফিরাতে চেষ্টা করলেও দমাতে পারেনি হত্যাকারীদের। এ পর্যায়ে ভয়ে পিছু হটে পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা।

স্থানীয়রা জানান, শেখবরের হত্যা দৃশ্য এই এলাকার মানুষদের কাছে এখনো দুঃস্বপ্নের মতো। নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের দৃশ্য যারা দেখেছে তারা ঘুমাতে পারে না, খাওয়া গলায় নামছে না। এলাকার মানুষ স্তব্ধ হয়ে গেছে।

শ্রীবরদী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বিপ্লব কুমার বিশ্বাস জানান, এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনার প্রধান আসামি জিকো, তার ভাই জজ মিয়া ও সাইফুলসহ মোট ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে হত্যাকাণ্ডে জড়িত বলে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে জিকো ও সাইফুল। এছাড়াও এ ঘটনায় পুলিশের এসআই ওয়ারেস আলীকে পুলিশ লাইনে ক্লোজ করা হয়েছে। এলাকায় নিরাপত্তার জন্য পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2