রাশেদুল ইসলাম
কাঁচা বাদাম
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৯ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২১ | আপডেট: ১০:২০ এএম, ১৯ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
সম্প্রতি কাঁচা বাদাম নিয়ে একটা গান ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। এই ভাইরাল হওয়ার কারণে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের অজ পাড়াগাঁয়ের ভুবন বাদ্যকার রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে গেছেন । ভুবন বাদ্যাকার একজন দরিদ্র ফেরিওয়ালা । কাঁচা বাদামের বিনিময়ে তিনি নষ্ট মোবাইল সেট, ছেঁড়া গলার চেন, ভাঙ্গা হাতের বালা ইত্যাদি সংগ্রহ করে থাকেন । কাঁচা বাদাম ওজনে একটু ভারি হয়। এ কারণে ব্যবসায়িক লাভের জন্যই বোধহয় তিনি ভাজা বাদাম না দিয়ে, কাঁচা বাদাম দিয়ে থাকেন। এ কথাটি তিনি গানের মধ্যে সরল ভাবে জানিয়ে দেন যে, তাঁর কাছে ভাজা বাদাম নেই। তিনি এখন এত বিখ্যাত যে, তাঁর গ্রামের নাম কুড়াল ঝুড়ি তাও আমরা জানতে পারছি এবং তাঁর সেই গ্রাম এখন একটি দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে ।
প্রশ্ন হতে পারে হটাৎ করে কেন ভুবন বাদ্যকার ভাইরাল হলেন ?
এ প্রশ্নের একটা উত্তর হতে পারে এই যে, এটা একটা ‘হুজুগ’ । হুজুগে বাঙালি বলে একটা কথা আছে । পশ্চিম বাংলা এবং পূর্ব বাংলা -এই দুই বাংলার মানুষ বাঙালি । বাঙালিকে প্রবাদে ‘হুজুগে বাঙালি’ বলা হয়েছে । সে বিচারে এটা একটা স্বাভাবিক বাঙালি চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ হতে পারে ।
আমি নিজেও গানটি বেশ কয়েকবার শুনেছি । ছেলেমেয়েদের এই গানের সাথে বিভিন্ন ধরনের নাচ আমিও দেখেছি । আমার কাছে গানটি তেমন আহামরি কিছু মনে হয়নি । গানের কথাগুলোও অতি সাদামাটা । কিন্তু এই অতি সাদামাটা কথা ভাইরাল হল কেন ?
আমার মনে হয় আমরা বড়রা এখন অনেক বেশি কৃত্রিম হয়ে গেছি । নিজের বা অন্য কোন বিষয়ে সহজ সরল ভাবে আমরা এখন কোন কিছু বলিনে । সবই কৃত্রিম ভাবে বলি । এই কারণে ভুবন বাদ্যকারের ব্যবসা কৌশলের সহজ সরল বক্তব্য বর্তমান ছেলেমেয়েদের অবাক করেছে । আরও অবাক করেছে ভুবনবাবুর বিনীত আচরণ । কাউকে খুব বেশী প্রশংসা করা হলে আমাদের সমাজে সাধারণত তাঁর ব্যবহার খারাপ হয়ে যায় এবং তিনি অহংকারি হয়ে পড়েন । কিন্তু ভুবন বাদ্যকার ব্যতিক্রম । তিনি অহংকারি না হয়ে, অনেক বেশী বিনয়ী হয়েছেন । তাঁর বিনীত আচরণ আমাকেও মুগ্ধ করেছে । ভুবন বাদ্যকার তেমন শিক্ষিত কেউ নন; কিন্তু কেউ সম্মান দিলে মানুষকে যে বিনীত হতে হয়, তা তিনি জানেন ।
আমাদের দেশ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ। মুসলমানদের ধর্ম বিশ্বাস অনুযায়ী মানুষকে সম্মানিত বা অসম্মানিত -দুটোই মহান আল্লাহ্ নিজে করে থাকেন এবং তা করে থাকেন মানুষকে পরীক্ষা করার জন্য । মহান আল্লাহ্ ভুবন বাদ্যকারকে সম্মানিত করেছেন; আর এই সম্মান তাঁকে বিনীত করেছে । নিশ্চয় মহান আল্লাহ্ তাঁর উপর খুশি থাকবেন এবং ভুবন বাদ্যকার তাঁর সম্মান ধরে রাখতে পারবেন ।
অথচ এর বিপরীত চিত্র ভিন্ন । আমরা দেখি অনেক উচ্চশিক্ষিত ও উচ্চবংশীয় মানুষও সম্মানিত হওয়ার পর অহংকারি হয়ে পড়েন । তাঁরা আশেপাশের অন্য মানুষকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেন । নিজের ক্ষমতার উত্তাপ সহ্য করতে না পেরে, বিভিন্ন ধরণের অস্বাভাবিক আচরণ করেন তাঁরা । এরুপ ক্ষেত্রে মহান আল্লাহর অশেষ নিয়ামতকে অস্বীকার করা হয় । সংগত কারণেই এর ভবিষ্যৎ পরিণাম তাঁদের জন্য শুখকর হয় না । পরিবর্তিত আচরণ দিয়ে প্রকারন্তরে তাঁরা নিজেরাই নিজেদের অসম্মানিত হওয়ার পথ বেছে নিয়ে থাকেন । সমাজে এর অনেক উদাহরণ রয়েছে ।
মহান আল্লাহ্ আমাদের নিরাপদ হেফাজতে রাখুন ।
শুভ কামনা সকলের জন্য ।
৭ ডিসেম্বর, ২০২১ । ইস্কাটন, ঢাকা ।