নারীর ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট গ্রহণ করে সাড়ে ১২ কোটি টাকা খোয়ালেন বৃদ্ধ
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৯ আগস্ট,শনিবার,২০২৫ | আপডেট: ১১:৩২ পিএম, ৯ আগস্ট,শনিবার,২০২৫

৮০ বছর বয়সী এক বৃদ্ধ ফেসবুকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট গ্রহণ করে সাইবার জালিয়াতির শিকার হয়েছেন। এ ফাঁদে পড়ে তিনি প্রায় সাড়ে ১২ কোটি টাকা খোয়ান। সাইবার জালিয়াতির শিকার হয়েছেন বুঝতে পেরে অবশেষে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ধরা পড়ে ভয়াবহ এক রোগ।
প্রায় দুই বছর ধরে চলা ৭৩৪টি অনলাইন লেনদেনের মাধ্যমে ভারতের মুম্বাইয়ের সেই বৃদ্ধের কাছ থেকে চার নারী (যারা সম্ভবত একজনই হতে পারে) ভালোবাসা এবং সহানুভূতির নামে প্রায় ৯ কোটি রুপি হাতিয়ে নেন। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ১২ কোটি ৪৮ লাখ ৮৬ হাজার ৮৪৮ টাকা।
২০২৩ সালের এপ্রিলে ওই ব্যক্তি ফেসবুকে শর্ভি নামে এক নারীকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠান। দুজনে একে অপরকে চিনতেন না। সেই দফায় ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট গ্রহণ করেননি ওই নারী। কয়েক দিন পর বৃদ্ধ ব্যক্তি শর্ভি নামের এক অ্যাকাউন্ট থেকে পৃথক একটি ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পান, যা তিনি গ্রহণ করেন।
শিগগিরই দুজনে চ্যাট শুরু করেন এবং ফোন নম্বর আদান-প্রদান শুরু হয়। চ্যাট ফেসবুক থেকে হোয়াটসঅ্যাপে স্থানান্তরিত হয়। শর্ভি ৮০ বছর বয়সী বৃদ্ধাকে জানান, তিনি তার স্বামীর থেকে আলাদা এবং তার সন্তানদের সাথে থাকেন। তিনি ধীরে ধীরে টাকা চাইতে শুরু করেন। বৃদ্ধাকে বলেন, তার সন্তানরা অসুস্থ।
কয়েক দিন পরে কবিতা নামে এক নারীও হোয়াটসঅ্যাপে বৃদ্ধকে টেক্সট করতে শুরু করেন। তিনি নিজেকে শর্ভির পরিচিত একজন হিসেবে পরিচয় দেন এবং বলেন, তিনি তার সাথে বন্ধুত্ব করতে চান। এরপর ওই নারী বৃদ্ধকে অশ্লীল বার্তা পাঠাতে শুরু করেন। এতে গলে যান বৃদ্ধ। এরপর কবিতা টাকা চাইতে শুরু করেন।
সেই বছরের ডিসেম্বরে লোকটি আরেক নারী দিনাজের কাছ থেকে টেক্সট পেতে শুরু করেন। তিনি নিজেকে শার্ভির বোন বলে দাবি করেছিলেন। দিনাজ বৃদ্ধ ব্যক্তিকে বলেন, শর্ভি মারা গেছেন এবং তাকে হাসপাতালের বিল দিতে হবে। দিনাজ শর্ভি এবং লোকটির মধ্যে হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটের স্ক্রিনশট পাঠিয়ে টাকা আদায় করেন।
বৃদ্ধ যখন তার টাকা ফেরত চান তখন দিনাজ আত্মহত্যার হুমকি দেন।
ভুক্তভোগীর দুর্দশা এখানেই শেষ হয় না। এর কিছু দিনের মধ্যে জেসমিন নামে এক নারী তাকে টেক্সট করতে শুরু করেন। তিনি নিজেকে দিনাজের বন্ধু দাবি করেন এবং সাহায্যের জন্য আবেদন করেন। বৃদ্ধ তাকেও টাকা পাঠান।
২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত বৃদ্ধ ৭৩৪টি লেনদেনের মাধ্যমে ৮.৭ কোটি রুপি পরিশোধ করেছিলেন।
তার সব সঞ্চয় শেষ হয়ে যাওয়ার পর বৃদ্ধ তার পুত্রবধূর কাছ থেকে নারীদের টাকা দেওয়ার জন্য ২ লাখ টাকা ধার করেন। তবে দাবি থামেনি। এরপর তিনি তার ছেলের কাছে ৫ লাখ টাকা চান।
এতে ছেলের সন্দেহ হয়। তার বাবাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আসল ঘটনা বেরিয়ে আসে। হতবাক হয়ে ছেলে বাবাকে হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে তার ডিমেনশিয়া ধরা পড়ে।
অবশেষে এই বছরের ২২ জুলাই সাইবার অপরাধের অভিযোগে ভুক্তভোগীর পরিবার মামলা করে। পুলিশ এখন তদন্ত করছে এবং সন্দেহ করছে, চার নারী হয়তো একই ব্যক্তি ছিলেন। প্রতারক পরিকল্পিতভাবে বৃদ্ধকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ওই জালিয়াতি ঘটান।