রাশেদুল ইসলাম
লক্ষ্যহীন জীবন (শেষাংশ )
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২৩ নভেম্বর,মঙ্গলবার,২০২১ | আপডেট: ০৯:৫৩ এএম, ১৯ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
মানুষের জীবনে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকলে সে জীবন নিয়মানুগ ও সুশৃঙ্খল হয় । যার জীবনের কোন লক্ষ্য নেই, সে অপ্রত্যাশিত ভুল পথে পরিচালিত হতে পারে । অনেক বছর আগের একটা উদাহরণ এখানে দেওয়া যেতে পারে । তখন সরকার একটি নতুন কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য দেশের প্রতিটি জেলায় একটি নতুন পদ সৃষ্টি করে । নতুন পদ পূরণের জন্য যাঁদের নিয়োগ প্রদান করা হয়, তাঁদের কোন ধরণের প্রশিক্ষন ছাড়াই জেলা পর্যায়ে পদায়ন করা হয় । নতুন পদে যোগদান করেই প্রত্যেক কর্মকর্তা প্রশিক্ষণ খাতের বাজেট পেয়ে যান । একজন মহিলা কর্মকর্তা প্রাপ্ত অর্থের অর্ধেক তাঁর মায়ের নামে পাঠিয়ে দেন । টাকা পাঠানোর কথা একটি চিঠি লিখে তিনি মাকে জানিয়ে দেন । মা খুশি হয়েই সেই চিঠি অনেককে পড়ে শোনান । চিঠির ভাষা এমন ছিল যে, তা সবার কাছে একটি মুখরোচক আলোচনায় পরিণত হয় । সেই কর্মকর্তা তাঁর মাকে যা লিখেন তার সারকথা এই যে, তিনি যে চাকরি পেয়েছেন তাতে প্রশিক্ষন বাজেটের অর্ধেক খরচ হবে এবং বাকিটা নিজের থেকে যাবে । এভাবে ভবিষ্যতে তিনি আরও টাকা পাঠাতে পারবেন । খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তাঁর একজন সহকর্মী তাঁকে এই পরামর্শ দিয়েছিলেন । একজন চাকুরীজীবীর কর্মজীবনের যদি কোন সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য না থাকে, তাহলে যে অফিসে তিনি যোগদান করেন, সেখানে সকলে যদি অসৎ হন, তাহলে তিনি ভাবতে পারেন অসৎ হওয়াটাই তাঁর চাকুরী ।
তবে সবকিছুর ভালো এবং মন্দ দুটি দিকই আছে । একটি পরাধীন দেশের শাসনকাজ পরিচালনায় লক্ষ্যহীন কর্মকর্তা অত্যাবশ্যক । বিষয়টি ইংরেজ জাতি ভালো জানতেন । তাই, তাঁরা ইষ্ট ইডিয়া কোম্পানির রাইটার বা প্রশাসক ছাত্র অবস্থায় নির্বাচন করে লন্ডনের ইষ্ট ইডিয়া কোম্পানি কলেজে ভর্তি করতেন । সেখান থেকে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নির্বাচন চূড়ান্ত করে ভারতে পাঠাতেন । নব নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষন দেওয়ার জন্য পরবর্তীতে কোলকাতায় ফোর্ট উইলিউয়াম কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয় । তাঁদের মূল লক্ষ্য ছিল ভারতে ইংরেজ শাসন ও শোষণ দীর্ঘস্থায়ী করা । লক্ষ্যহীন কর্মকর্তাদের মাথায় এ ধরণের লক্ষ্য ঢুকিয়ে দেওয়া সহজ । ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় ইংরেজ তাঁদের লক্ষ্য পূরণের ক্ষেত্রে সে সময় শতভাগ সফল ছিল ।
দুঃখজনক সত্যে এই যে, আমরা ইংরেজদের অনেক খারাপ অভ্যাস রপ্ত করেছি; কিন্তু তাঁদের উল্লেখযোগ্য ভালো কোন গুণ আয়ত্ত্ব করতে পারিনি । যেমন ইংরেজদের একটি বড় গুণ, তাঁরা আইন মান্যকারি জাতি । A law abiding nation. নীল চাষিদের প্রতি ইংরেজদের যে, নির্যাতনের কাহিনি আমাদের জানা, সেই নির্যাতনও করা হয়েছে একটা আইনের আওতায় । আইনটির নাম The Bengal Indigo Contracts Act, 1836. সে আইন বাতিল হয়েছে বহু আগে । ইংরেজ প্রবর্তিত যে সকল আইন এখনও অনুসরণ করা হয়, সেগুলো যথাযথ অনুসরণ করা হলেও যে কেউ ইচ্ছামত অসৎ হওয়ার সুযোগ পেতেন না । কিন্তু বাস্তবতা হল আমরা আইন মান্য করতে অভ্যস্থ নই । আমাদের যারা ক্ষমতাবান তাঁদের অনেকেই মনে করেন আইন মান্য করা অসম্মানের কাজ ।
আমি বলছিলাম জীবনের লক্ষ্যের কথা । প্রশ্ন হতে পারে, একজন মানুষ কিসের ভিত্তিতে তার জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ করবে ?
এ প্রশ্নের সহজ উত্তর, এ বিষয়ে প্রচলিত ধর্ম বা নীতিবাক্য অনুসরণ করা যেতে পারে ।
আমাদের দেশের প্রায় সকলেই ধর্ম বিশ্বাসী । এ কারণে আমাদের দেশে জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে প্রত্যেকেই তার নিজ নিজ ধর্মের বিধান অনুসরণ করতে পারে ।
উদাহরণ হিসেবে আমি ইসলাম ধর্মের কথা বলি । পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে,
‘প্রত্যেকেরই একটি লক্ষ্য আছে; যা তার কর্মধারাকে পরিচালনা করে । অতএব তোমরা সৎকর্মে প্রতিযোগিতা করো’ ।
(সূরা বাকারা, আয়াত ১৪৮) ।
পবিত্র কোরআনের বিধান অনুযায়ী প্রত্যেক মানুষের একটা লক্ষ্য থাকতে হবে এবং তা হবে সৎকর্মমুখী । লক্ষ্য এমন হবে যেন একজন মানুষ তা অর্জনের জন্য আমৃত্যু কাজ করতে পারে । বিয়ের জন্য পাত্র নির্বাচন বা ভবিষ্যৎ কোন পেশা নির্বাচন করা কারো জীবনের লক্ষ্য হওয়া সমীচীন নয় ।
পবিত্র কোরআনের মর্ম অনুযায়ী মানুষের মূল লক্ষ্য হবে সৃষ্টির সেবা করা । এই সেবা একজন ডাক্তার হয়েও যেমন করতে পারেন; একজন বৈমানিক হয়েও তা করতে পারেন । একজন বৈমানিক সল্পতম সময়ে একজন মানুষকে তার গন্তব্যে পৌঁছে দিয়ে থাকেন । এটি অনেক বড় সেবার কাজ । বৈমানিক হওয়ার জন্য একজন মানুষকে তার মেধা ও শ্রম দিতে হয় । আল্লাহ্ প্রদত্ত গুণের সর্বাত্মক ব্যবহারও এক ধরণের ইবাদত ।
আমি বিনীতভাবে জানাই যে, ইসলাম ধর্ম বিষয়ে ব্যাখ্যা দেওয়া বা আলোচনা করার যোগ্য ব্যক্তি আমি নই । এ কাজ করবেন আমাদের মসজিদের ইমাম ও আলেমগণ । তবে একজন পাঠক হিসেবে আমি যতটা বুঝেছি, এখানে তার সহজ সরল ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করেছি মাত্র ।
আমার লেখার সারকথা এই যে, আমাদের ছেলেমেয়েদের জীবনের সুনির্দিষ্ট একটা লক্ষ্য থাকা দরকার , যে লক্ষ্য সামনে নিয়ে তারা এগিয়ে যাবে । সংশ্লিষ্ট সকলে এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিবেন, এটাই আমাদের প্রত্যাশা ।
শুভ কামনা সকলের জন্য ।
১ নভেম্বর, ২০২১ । ইস্কাটন, ঢাকা ।