রাশেদুল ইসলাম
চেয়ার
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২২ অক্টোবর,শুক্রবার,২০২১ | আপডেট: ০৯:৫২ এএম, ১৯ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
অফিসে নতুন চেয়ার । কাঠের চেয়ার । আমার জন্য কেনা হয়েছে । আমি আসলে আরামদায়ক চেয়ারে বসতে পারিনে । ছোটকালে কাঠের চেয়ারে বসা শুরু করি । সেই অভ্যাসটাই রয়ে গেছে । অনেকে চেয়ারে তোয়ালে ব্যবহার করেন । আমি নো তোয়ালে । শুধুই কাঠের চেয়ার ।
আমার শেষ কর্মস্থল ছিল এনজিও বিষয়ক ব্যুরো । খুব বিলাসবহুল অফিস । চেয়ারটাও ছিল সে রকম । সুখের কথা, তাঁদের গোডাউনে একটি কাঠের চেয়ার পাওয়া যায় । অনেকটা বেমানান হলেও, আমার সময়টা সে চেয়ারেই কাটে ।
নতুন চেয়ারের কাঠামো দেখে মনে হচ্ছে, আমার বাকীজীবন – যতদিন অর্পন – দর্পনের জন্য কাজ করব, এই একটা চেয়ার দিয়েই চলবে ।
প্রত্নতত্ত্ববিদগণ বলছেন খৃস্টপূর্ব ৩ হাজার ১০০ বছর আগেও প্রাচীন মিশরে চেয়ার ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া গেছে । আমার মনে হয় দাস যুগে যখন মানুষের মধ্যে প্রভু-ভৃত্যের সম্পর্ক তৈরি হয়, তখনই চেয়ারের আবিস্কার । এখনও আমাদের দেশের কাজের ছেলেমেয়েদের বাড়ির চেয়ারে বসার অনুমতি নেই । তারাও তা জানে । তাই বসার প্রয়োজন হলে, অবলীলায় তারা মেঝেতে বসে পড়ে । কারণ, চেয়ার ক্ষমতার প্রতীক । কাজের ছেলেমেয়েদের মত পৃথিবীর বেশীরভাগ মানুষ ক্ষমতাহীন । এই ক্ষমতাহীন মানুষের একটি বড় অংশ পাওয়া যাবে, যারা সারাজীবনে কোনদিন কোন চেয়ারে বসার সুযোগ পায়নি ।
সেদিন এক সচিব বন্ধুর সাথে কথা প্রসঙ্গে চেয়ারের কথা আসে । আমি আমার ধারণার কথা বলি । চেয়ারে থাকাকালে তাঁর ব্যবহার ভালো না খারাপ, কিছু যায় আসে না । সবাই তাঁকে সালাম দিবে । ভালো ব্যবহার করবে । কিন্তু চেয়ারের অপর পাশের চিত্র ভিন্ন । তিনি ভালো হলে সবাই ভালো ব্যবহার করবে; খারাপ হলে খারাপ ।
চেয়ারের একটা নিজস্ব উষ্ণতা আছে, তাপ আছে । সবাই এই তাপ বা উষ্ণতা সহ্য করতে পারে না । তাপ ও উষ্ণতার কারণে চেয়ারে থাকা মানুষের অনেক সময় স্বভাব ও ব্যবহার দুটোই খারাপ হয়ে যায় । আর চেয়ারের সাথে হাতে অস্ত্র থাকলে তো কথা নেই । গোটা দুনিয়াটাই নিজের আজ্ঞাবহ মনে হয় ।
তবে ধর্মীয় বিধানে বলা হয়েছে, সবাইকে সৃষ্টিকর্তা চেয়ারে বসার সম্মান দেন না । যাদেরকে এই সম্মান দেওয়া হয়, তা শধু নির্দিষ্ট সময়ের জন্য দেওয়া হয় । দেওয়া হয় তাঁদের পরীক্ষা করার জন্য । যিনি চেয়ারের ক্ষমতার অপব্যবহার করেন, তার প্রায়শ্চিত্ত তাঁকেই করতে হয় । মহান
আল্লাহ আমাদের হেদায়েত করুন ।
১৭ অক্টোবর, ২০২১ । ইস্কাটন, ঢাকা ।