রাশেদুল ইসলাম
পুরষ্কার বিতরণীঃ গাংনী পর্ব
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ১৪ অক্টোবর,বৃহস্পতিবার,২০২১ | আপডেট: ০৯:৫৪ এএম, ১৯ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
এটা আমাদের জন্য আনন্দের সংবাদ । ‘এগিয়ে যাওয়ার জন্য বইপড়ি’ প্রতিযোগিতার গাংনী পর্বের পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের তারিখ ঠিক হয়েছে । স্থান গাংনী সরকারি ডিগ্রী কলেজ মাঠ । সময় বিকাল ৩ টা । তারিখ ৩০ অক্টোবর, শনিবার ২০২১ । মেহেরপুর জেলার জেলা প্রশাসক ড মোহাম্মদ মুনসুর আলম খান প্রধান অতিথি এবং জেলা পুলিশ সুপার জনাব মোঃ রাফিউল আলম সম্মানিত অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে সম্মতি দিয়েছেন । মেহেরপুর জেলা শিক্ষা অফিসার জনাব মোঃ মাহফুজুল হোসেন এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসার, গাংনী জনাব মৌসুমি খানম বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন । অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন ‘এগিয়ে যাওয়ার জন্য বইপড়ি’ প্রতিযোগিতার গাংনী পর্বের আহ্বায়ক জনাব মোঃ সিরাজুল ইসলাম । তাঁদের সকলের প্রতি আমাদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা ।
সকলেই জানেন যে, আমাদের দেশে বইপড়া আন্দোলনের সার্থক রুপকার শ্রদ্ধেয় অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ । তিনি বইপড়ার মাধ্যমে আলোকিত মানুষ গড়তে চেয়েছেন । স্যার সত্যই একটা চমৎকার প্লাটফর্ম তৈরি করেছেন । কিন্তু অর্পন- দর্পন স্মৃতি ফাউনডেশনের আন্দোলন একটু ভিন্ন । আলোকিত মানুষের মধ্যে যদি দেশপ্রেম না থাকে, অন্য মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা ভালবাসা না থাকে, যদি তার মধ্যে নৈতিক ও ধর্মীয় চেতনাবোধ না থাকে, তাহলে সে মানুষ আলোকিত হয়ে লাভ কি ? এই ধারণা থেকেই আমাদের ‘এগিয়ে যাওয়ার জন্য বইপড়ি’ আন্দোলন শুরু।
বর্তমান বাংলাদেশ অর্থনৈতিক উন্নয়নের মডেল হিসেবে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে স্বীকৃত । তবে অর্থনৈতিক দিক থেকে উন্নত হলেও, সমাজে মানুষের মধ্যে মানবিক গুণাবলী বিকাশে লক্ষনীয় ঘাটতি রয়েছে । বলা যায়, সমাজে বেশীরভাগ মানুষের স্বার্থপরতা এবং আত্মকেন্দ্রিকতা মানব সভ্যতার সুষ্ঠু বিকাশের ক্ষেত্রে অন্তরায় হিসেবে কাজ করে । এ কারণে অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি মানুষের মধ্যে মনুষ্যত্ব বিকাশের সচেতন প্রয়াস নেওয়া অত্যাবশ্যক। তবে বাস্তবে মানুষের মনুষ্যত্ব বিকাশের জন্য সচেতনতাবৃদ্ধি ও প্রশিক্ষণের তেমন ব্যবস্থা নেই । আসলে মানুষের মধ্যে মানবিক গুণাবলি বিকাশের বিষয়টি প্রধানত পারিবারিক শিক্ষাজাত; দ্বিতীয়ত বিষয়টি একজন ব্যক্তির আত্মপোলব্ধিজাত - যা সময় সাপেক্ষ এবং অনুশীলন নির্ভর । গতানুগতিক কোন প্রশিক্ষন বা কর্মশালা আয়োজনের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে সৎচিন্তা ও সৎভাবের উদয় বা মানবিক চেতনাবোধের উন্মেষ ঘটানো সম্ভব নয় । প্রয়োজন উদ্ভাবনমূলক কার্যক্রম ।
‘অর্পণ- দর্পণ স্মৃতি ফাউনডেশন’ অন্যকে সৎকাজে উদ্বুদ্ধ করার জন্য ‘আমিই পারি’ কর্মসূচি গ্রহন করেছে । বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ এবং বিচক্ষণ ও জ্ঞানী ব্যক্তিবর্গের নিকট থেকে পাওয়া শিক্ষা থেকে এটা সুস্পষ্ট যে, যে কোন ব্যক্তি মানুষের জীবনের সফলতা ও ব্যর্থতা সম্পূর্ণ সেই ব্যক্তির উপর নির্ভর করে । ফলে, যে কোন ছেলেমেয়ে নিজের জীবনের লক্ষ্য ঠিক করে, যদি তার লক্ষ্যের দিকে দৃঢ় মনোবল নিয়ে এগিয়ে যায়, তাহলে যৌক্তিক বিচারে তার সেই লক্ষ্য অর্জনের সম্ভাবনা শতকরা একশ’ ভাগ । তবে এই সফলতার কোন মূল্য থাকে না , যদি তার মধ্যে মানবিক কোন গুণ কাজ না করে, যদি তার মধ্যে দেশপ্রেম না থাকে বা তার মধ্যে পরিশুদ্ধ ধর্মীয় ও নৈতিক চেতনাবোধ কাজ না করে । এসব বিবেচনায় ‘নিজে সৎকাজ করি এবং অন্যকে সৎকাজে উদ্বুদ্ধ করি’ শ্লোগান দিয়ে শুরু হওয়া ‘এগিয়ে যাওয়ার জন্য বইপড়ি’ প্রতিযোগিতা কাম্য সমাধান দিতে সক্ষম বলে আমরা মনে করি ।
‘‘আমি-ই পারি’ কর্মসূচির আওতায় ‘এগিয়ে যাওয়ার জন্য বইপড়ি’ প্রতিযোগিতা প্রথমে পরীক্ষামুলকভাবে শুরু করা হয়েছে । এ প্রতিযোগিতায় স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ছাত্রছাত্রীসহ সমাজের যে কোন শ্রেণী পেশার মানুষ চাইলেই অংশগ্রহন করতে পারেন। ‘এগিয়ে যাওয়ার জন্য বইপড়ি’ প্রতিযোগিতার প্রথম পর্ব যশোরের ঝিকরগাছায় জাগ্রত ঝিকরগাছার উদ্যোমি স্বেচ্ছাসেবীদের সহযোগিতায় সফলভাবে সমাপ্ত হয় ।
‘আমি-ই পারি’ শীর্ষক কর্মসূচির আওতায় পরিচালিত ‘এগিয়ে যাওয়ার জন্য বইপড়ি’ প্রতিযোগিতার প্রত্যাশিত প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ফলাফল নিম্নরূপঃ
প্রত্যক্ষ ফলাফল-
ক) প্রতি উপজেলার কমপক্ষে ১০০ জন প্রতিযোগী ছেলেমেয়েকে এই প্রতিযোগিতায় অন্তর্ভুক্ত করা।
খ) প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী ছেলেমেয়ে এবং সেচ্ছাসেবীদের একটি মানবিক গুণসম্পন্ন সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার একটি কার্যকর প্রয়াস ।
গ) প্রতিযোগী ছেলেমেয়েদের যে কোন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অংশগ্রহণের যোগ্য করে তোলা।
ঘ) ক্ষতিকর ভিডিও গেম ও মাদকাশক্তির মত খারাপ অভ্যাস থেকে ফিরিয়ে এনে ছেলেমেয়েদের বিভিন্ন সৃজনশীল কাজে উদ্বুদ্ধ করা।
পরোক্ষ ফলাফল-
ক) ‘এগিয়ে যাওয়ার জন্য বইপড়ি’ প্রতিযোগিতা আয়োজনের সাথে সংশ্লিষ্ট উপজেলা পর্যায়ের তরুণ তরুণীদের তথ্যপ্রযুক্তি এবং ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে বাস্তব দক্ষতা অর্জনে সহায়ক।
খ) সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার মধ্যে সুসম্পর্ক তৈরিতে সহায়ক ।
গ) ‘এগিয়ে যাওয়ার জন্য বইপড়ি’ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী এবং স্বেচ্ছাসেবী তরুণ তরুণী সরকারের ‘আমার গ্রাম, আমার শহর’ কর্মসূচি বাস্তবায়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।
ঘ) এ ধরণের প্রতিযোগিতা এসডিজি ৪ এ বর্ণিত শিক্ষা বিষয়ক লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক ভূমিকা পালন করে ।
মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলায় চলমান ‘এগিয়ে যাওয়ার জন্য বইপড়ি’ প্রতিযোগিতায় উপজেলার ৩৫ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১৫০ জন প্রতিযোগী অংশ নিচ্ছে । বিজয়ীদের পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠান করার মাধ্যমে আমরা বোধহয় এ প্রতিযোগিতার পাইলট কার্যক্রম শেষ করতে যাচ্ছি । তবে গাংনীতে আমরা একটা নতুন অভিজ্ঞতা পাব । এখানকার আয়োজক কমিটি একই দিনে পরীক্ষা নিয়ে পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠান করতে চান । সকাল ৯ টায় একটি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পরীক্ষা শুরু হবে । আয়োজক কমিটি বিকাল ২ টার মধ্যে ফল প্রকাশের ব্যবস্থা নিবেন । বিকাল ৩ টায় পুরষ্কার বিতরণী । পুরষ্কার বিতরণের সারাদিনই একটি উৎসব উৎসব পরিবেশ বজায় রাখতে চান তাঁরা ।
আসলে রাতারাতি কেউ সৎকাজ বা ভালো কাজে উদ্বুদ্ধ হতে পারে না । এজন্য একটা পরিবেশ দরকার । এক ধরণের আবহ সৃষ্টি করা দরকার । ‘অর্পণ- দর্পণ স্মৃতি ফাউনডেশন’ থেকে বই হাতে পাওয়ার পর প্রতিযোগী ছেলেমেয়েরা এক/ দেড় মাস সময় পায় । ঝিকরগাছার অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে ‘লকডাউনে আমার মা’ বইটি পাঠকের মধ্যে এক ধরণের ইতিবাচক পরিবর্তন আনে । নিজে সৎকাজ করি এবং অন্যকে সৎকাজে উদ্বুদ্ধ করার এক ধরণের তাগিদ তাদের মধ্যে তৈরি হয় । পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের দিনে আমন্ত্রিত অতিথিদের এ বিষয়ে দিক নির্দেশনা ছেলেমেয়েদের মধ্যে টনিকের মত কাজ করে । এসব ছেলেমেয়েরা এখনও আমাদের বড়দের মত আত্মকেন্দ্রিক ও স্বার্থপর হয়ে ওঠেনি । এ ধরণের প্রতিযোগিতা এখনই শুরু না করলে আমাদের কোমলমোতি ছেলেমেয়েরাও এক সময় আমাদের মত হয়ে যাবে ।
শুভ কামনা সকলের জন্য ।
১১ অক্টোবর, ২০২১ । ইস্কাটন, ঢাকা ।