রাশেদুল ইসলাম
ডায়িং পাড়া
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২৭ এপ্রিল,মঙ্গলবার,২০২১ | আপডেট: ০৯:৫৩ এএম, ১৯ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
ডায়িং পাড়া নিয়ে আমি আগেই লিখেছি । সাঁওতাল পল্লী নামে । গতবার রাজশাহী সফরকালে ডাসকো ফাউনডেশণ আমাকে এই গ্রামে নিয়ে যায় । আমি আমার লেখায় উল্লেখ করেছি যে, ডায়িং পাড়ায় সাঁওতাল ও পাহাড়ি নামের দুই ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী মিলে ৫৮ টি পরিবার বাস করে । মোট জনসংখ্যা ৩১৮ । তাঁরা পেশায় দিনমজুর । তৃণমূল পর্যায়ের অতিদরিদ্র জনগোষ্ঠী ।
আমি আমার লেখায় উল্লেখ করেছি যে, ডায়িং পাড়া গ্রামের সকলেই রোমান ক্যাথোলিক ধর্মের অনুসারী । তবে তাঁদের একদল পাহাড়ি । আর একদল সাঁওতাল । তাঁদের ভাষা ভিন্ন; সংস্কৃতিও ভিন্ন । কিন্তু তাঁরা মিলেমিশে থাকেন । নিজেদের মধ্যে তাঁদের কোন দ্বন্দ্ব নেই । ডাসকো ফাউনডেশণ এই নৃগোষ্ঠী দুটির পানি সমস্যা নিরসনের কারণে ডাসকো এবং স্থানীয় প্রশাসনের প্রতি তাঁরা কৃতজ্ঞ । আমাদের আগমনে তাঁরা তাঁদের সেই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে । তাঁদের পাহাড়ি মেয়েরা পাহাড়ি ভাষায় গান গেয়ে নৃত্যের তালে তালে আমাদের বরণ করে নেয় । আর সাঁওতাল মেয়েরা সাঁওতালি গানের তালে তালে আমাদের গলায় ফুলের মালা পরিয়ে দেয় ।
এসব কথা আমি আগে লিখেছি । আজকের লেখার বিষয় এটি নয় । আমার আজকের লেখার বিষয় আমার একটি সীমাবদ্ধতার কথা । আমার সমস্যা হোল, আমার তাৎক্ষনিক কোন কিছু মনে আসে না । ‘চোর পালালে বুদ্ধি আসে’র মত অবস্থা হয় আমার । আগে এসব নিয়ে আমার মনে অনেক দুঃখ ছিল । এখন এ নিয়ে মনে কোন অনুতাপ নেই । জীবনের এত বছর যেহেতু এভাবেই গেছে, বাকী সময়টাও নিশ্চয় একভাবে যাবে । যাহোক ডায়িং পাড়া থেকে ঢাকায় ফিরে আসার পর আমার মনটা কেমন যেন খচ খচ শুরু করে । এইযে ছোটছোট মেয়েগুলো নেচেগেয়ে আমাদের বরণ করে নিল; আমার কি উচিত ছিল না তাদের কিছু একটা বকশিশ দেওয়া ? এ কথা মনে হতেই আমি ডাসকোর নির্বাহী পরিচালকের সাথে কথা বলি এবং সেই মেয়েদের হাতে দেওয়ার জন্য ২ হাজার টাকা বিকাশ করে পাঠিয়ে দিই ।
কয়েকদিন পর ডাসকো থেকে আমাকে জানান হয় যে, ডায়িং পাড়া গ্রামের ৭০ জন বৃদ্ধ ও শিশুদের তাঁরা একবেলা খাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন । আমি শুনে বেশ লজ্জা পাই । মনে হয় আরও কিছু বেশী টাকা দিলে বোধহয় ভালো হতো ।
কেউ যদি মনে করেন আমার পদমর্যাদার কারণে ডাসকো ডায়িং পাড়ার ৭০ জনকে খাইয়ে আমার প্রতি এ সম্মান দেখিয়েছেন; তাহলেও আমি ডাসকোর প্রতি কৃতজ্ঞ । আমি মনে করি পৃথিবীর সর্বোত্তম দাণ হচ্ছে ক্ষুধার্ত মানুষকে খাওয়ানো । তাঁরা আমার কাছে বাচ্চাদের খাবার খাওয়ার ছবি পাঠিয়েছেন । সত্যিই আমার মনটা ভরে গেছে । এখন যদি কোন এনজিও ডায়িং পাড়ার দরিদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য তাঁদের উপার্জনমুখী প্রকল্পের ব্যবস্থা নেন তাহলে আমি কৃতজ্ঞ থাকব ।
এখন করোনা সংকটকালে আমাদের আশেপাশে অনেক পরিবার দুর্বিসহ খাদ্য সংকটে পড়েছে । হাদিসে আছে একজন মহিলা একটি তৃষ্ণার্ত কুকুরকে পানি খাইয়ে বেহেশত যাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছেন । আর মানুষ তো কুকুর নয় । মানুষ আশরাফুল মকলুকাত; সৃষ্টির সেরাজীব । ফলে একজন ক্ষুধার্ত মানুষকে খাবার দিলে বেহেশত পাওয়া কত সহজ – এই হাদিস তার বড় প্রমাণ ।
আসুন আমরা এই করোনাকালে নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী ক্ষুধার্ত মানুষের পাশে দাঁড়াই ।
মহান আল্লাহ্ আমাদের করোনার অভিশাপ থেকে রক্ষা করুন ।
ইস্কাটন, ঢাকা । ২৪ এপ্রিল, ২০২১ ।