রাশেদুল ইসলাম
আমার কর্মপরিকল্পনা
প্রকাশ: ০৪:৪৫ পিএম, ২২ এপ্রিল,বৃহস্পতিবার,২০২১ | আপডেট: ০৯:৫১ এএম, ১৯ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
এখন বড় দুঃসময় । করোনার প্রথম ধাক্কা দেশবাসী মোটামুটি সামলে নিয়েছিল । কিন্তু এই দ্বিতীয় ধাক্কাটা বেশ হতবুদ্ধি হওয়ার মত । তবে আমি মনে করি, এই ‘হতবুদ্ধি’ ভাবটা সাময়িক । সরকারের সর্বাত্মক চেষ্টা এবং সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতায় করোনার এই দ্বিতীয় ধাক্কাও আমরা কাটিয়ে উঠবো ইনশাল্লাহ । মহান আল্লাহ্ আমাদের সহায় হউন ।
কথায় বলে, ‘সময় এবং স্রোত’ কারো জন্য অপেক্ষা করে না । গত ৫ জুন ২০১৭ সালে আমার ৫৫ তম জন্মদিন ছিল । সেই জন্মদিনে আমি আমার জীবনের কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরি । লেখাটি আমার ‘চাঁদের পাহাড়’ বইটিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে । সেখানে বাংলাদেশের মানুষের বর্তমান গড়আয়ু অনুযায়ী আমার সম্ভাব্য আয়ু ধরা হয় ৭০ বছর । এই করোনাকালে অবশ্য কোন হিসাব মিলছে না । ইতোমধ্যে আমি নিজেসহ আমার পরিবারের সকলে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন । এখন টিকে থাকলেও ভবিষ্যৎ কি হবে আল্লাহ্ ভালো জানেন । তারপরও জীবনের একটা লক্ষ্য থাকা এবং সেই লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাওয়া জীবনের ধর্ম হওয়া উচিত । ফলাফল আমার হাতে নয় এবং সেই চিন্তার ভারও আমার নয় ।
পারস্য কবি শেখ সাদী নিজের জীবনের আয়ুষ্কাল ৯০ বছর ধরে কর্মপরিকল্পনা ঠিক করেন । যতটুকু জানা যায় তিনি ঠিক ৯০ বছরই বেঁচেছিলেন এবং তাঁর কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পেরেছেন । শুধু শেখ সাদী নয়, বিজ্ঞানী টমাস আল্ভা এডিশনের মত মানুষও নিজের জীবনের কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ শেষ করে অনেকটা ‘ইচ্ছামৃত্যু’ বরণ করেন । ফলে এটা অস্বাভাবিক কিছু নয় । যে কোন মানুষই নিজের জীবনের একটা কর্মপরিকল্পনা ঠিক করে সে অনুযায়ী কাজ করতে পারেন এবং মহান আল্লাহ্ সহায় হলে, তিনি তা সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করতে পারেন ।
আগামী ৪ জুন ২০২১ তারিখে আমার দাপ্তরিক বয়স ৫৯ বছর পূর্ণ হবে এবং চাকুরী থেকে প্রাক অবসর জীবন শুরু হবে । অর্থাৎ এই করোনাকালেই আমাকে চাকুরী থেকে বিদায় নিতে হবে । পূর্ণ অবসর ঠিক এক বছর পরে । আমার কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী পরবর্তী এক বছর আমি আমার স্ত্রী এবং মেয়েকে সংসারের সবকিছু হিসেব বুঝিয়ে দেব । ঠিক ৬০ বছর বয়সে আমি সংসার থেকে মুক্তি চাই । জন্মের পর থেকেই আমি, আমার ভাইবোন, আমার স্ত্রী সন্তান- এসব করে করেই জীবন কাটছে । আমি আমার এই ‘আমি’ থেকে মুক্তি চাই । ৬০ বছর বয়স থেকে আমি মূলত মানুষের জন্য কল্যাণমূলক কাজ করতে চাই । যদি বাস্তবতার কারণে এ সময়কালে আমাকে অন্য কোন চাকুরী নিতে হয়- তাহলে সেই উপার্জিত অর্থ নিজের সংসারে নয়; আমি জনকল্যাণে ব্যয় করতে চাই ।
৬০ বছর পরবর্তী ১০ বছর আমি কি করতে চাই, তা আমার ২০১৭ সালের কর্মপরিকল্পনায় বলা হয়েছে । সেই কর্মপরিকল্পনার বাস্তবায়ন অগ্রগতি এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে । সেই কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী ‘অর্পণ- দর্পণ স্মৃতি ফাউনডেশন’ এর আওতায় দু’ ধরণের কাজ সম্পাদনের কথা বলা হয়েছে –
১। নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী জনকল্যাণমূলক কাজ করাঃ
ইতোমধ্যে আমার নিজ মুক্তারপুর গ্রামে ‘অর্পণ- দর্পণ স্মৃতি পাঠাগার’ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে । এটি সাধারণ পাঠাগার নয় । এই পাঠাগারের একটি নিবেদিত প্রাণ কমিটি আছে এবং কয়েকটি গ্রামের তরুণতরুণীদের সমন্বয়ে একটি সেচ্ছাসেবক দল রয়েছে । নিজেদের সীমিত পরিসরে জনকল্যাণমূলক কাজের পাশাপাশি এলাকার সরকারি বেসরকারী যে কোন জনকল্যাণমূলক কাজে পাঠাগার সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে । বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির একতলা ভবনে সীমিত আকারে কাজ চলছে । আশাকরি আগামী এক বছরে দোতালায় একটি কনফারেন্স রুম চালু করা হলে স্থানীয় ছেলেমেয়েদের বিভিন্ন উপার্জনমুখী প্রশিক্ষন দেওয়ার কাজটি বেগবান হবে ।
২। মানুষকে সৎকাজে উদ্বুদ্ধ করাঃ
‘অর্পণ- দর্পণ স্মৃতি ফাউনডেশন’ এর আওতায় মানুষকে সৎকাজে উদ্বুদ্ধ করার জন্য ২০১৬ সাল থেকে আমি লেখালেখি শুরু করি । ২০১৭ সালে যখন আমার কর্মপরিকল্পনা প্রকাশ করা হয়, তখন কেবল ‘মারাক্কেশের বাতাস’ বইটি বাজারে ছিল । এর মধ্যে ‘চাঁদের পাহাড়’, ‘পাগলামামা, ‘রোজকার টুকিটাকি’, ‘সাকুরা মৌসুমে’, ‘নিজেকে অভিজাত মনে হয়’ এবং ‘লকডাউনে আমার মা’ –এই ৬ টি বই যোগ হয়েছে । আগামী এক বছরে আরও তিনটি বই এর সাথে যোগ হবে আশা করা যায় ।
আমাদের দেশের মানুষ সাধারণত হুজুগে মাতাল হয় । নিজের সহজাত বিচারবুদ্ধি দিয়ে কোন ঘটনা বা বিষয়ের বিচার বিশ্লেষণ করে না তারা । আমাদের ধর্মীয় বিশ্বাসটাও অন্ধবিশ্বাস নির্ভর । যুক্তিনির্ভর নয় । এদেশের যত সামাজিক ও ধর্মীয় সমস্যা তার একটা বড় অংশ মূলত একারণেই । আমার লেখায় এসব থেকে বেরিয়ে আসার দিক নির্দেশনা রয়েছে । কোমলমোতি ছাত্রছাত্রীদের বইগুলো পড়ার সুযোগ করা গেলে তাদের মানবিক গুণাবলী বিকাশে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে আশা করি ।
‘অর্পণ- দর্পণ স্মৃতি ফাউনডেশন’ এর পক্ষ থেকে দেশব্যাপী বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আমার বইগুলোর উপর পাঠচক্র পরিচালনা করা হবে । লেখালেখির কারণে আমার একটা পাঠক শ্রেণি তৈরি হয়েছে । প্রাথমিক ভাবে তাঁদের সাহায্যেই এই পাঠচক্রের আয়োজন করা হবে । পাঠচক্রে অংশগ্রহনকারী শিক্ষার্থীদের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে । বিজয়ীদের মধ্যে পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে স্থানীয় গণ্যমান্য অতিথিদের সাথে আমি নিজে উপস্থিত থাকতে চাই । হয়ত ৫০ জন শিক্ষার্থী একটি বই পড়বে; কিন্তু এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উপস্থিত ২/৩শ’ জন অংশগ্রহণকারী আলোচ্য বিষয় জানতে পারবে ।
পাঠচক্রের প্রথম অনুষ্ঠানটি আগামী ২/৩ মাসের মধ্যে ঝিকরগাছায় অনুষ্ঠিত হবে আশা করি । সেখানকার কয়েকজন তরুণ এ বিষয়ে কাজ শুরু করেছেন বলে জানিয়েছেন । আশা করি কয়েকটি অনুষ্ঠানের পর পাঠচক্রের একটি গ্রহণযোগ্য কাঠামো দাঁড়িয়ে যাবে ।
মহান আল্লাহ্ আমার কর্মপরিকল্পনা কবুল করুন ।
শুভ কামনা সকলের জন্য ।
ইস্কাটন, ঢাকা । ২১ এপ্রিল, ২০২১ ।