জালাল উদ্দিন আহমেদ
পরাশ্রয়ী শিকল ছেঁড়ার শ্লোগান আর কত!
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২৮ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৫ | আপডেট: ০৮:৫৯ পিএম, ২৮ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৫
আর কতকাল এই পরাধীনতার শিকল ছেঁড়ার শ্লোগান দিতে হবে আমাদেরকে! নিজের স্বকীয়তার অস্মিতায় কবে আমরা শিরদাঁড়া উঁচু করে মুক্তকন্ঠে গেয়ে উঠবো জীবনের জয়গান। পরাশ্রয়ী হীনমন্যতায় আর কত জেনারেশন পাড়ি দিলে আমরা আপন মোহনায় মুক্ত নিঃশ্বাসে রচনা করতে পারবো আপনত্বের চারন কাব্য। জানিনা কোন্ কুক্ষনে জন্ম এই জাতিস্বত্ত্বার! সাতচল্লিশ পূর্ববর্তী কাহিনী কেচ্ছা - সে এক বড় নির্ঘন্ট। যখন থেকে বাঙালীয়ানার স্বাদ নিতে শুরু করলাম সেই সাতচল্লিশ সময়কাল হতে যে শ্লোগানে আমাদেরকে বার বার উচ্চকন্ঠ হতে হয়েছে তার পিছনেই তো এখনো আমাদেরকে মাথা কুটতে হচ্ছে। কেন এখনো পর্যন্ত নিজের অস্ত্বিত্বের আঁতুড় ঘরটির খোঁজে মাথা কুটতে হয় আমাদের। কোন্ অভিশাপে অভিশপ্ত এই জাতিস্বত্বা তার ডিএনএ চেষ্ট করা প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। কেন এই পরাশ্রয়ী যাঁতাকলের জৌলুশে পড়ে আমাদেরকে বার বার একই শ্লোগানের জোশ তুলে নিজেদের মুক্তি সনদের জোয়ার তুলতে হয়! আপন স্বকীয়তা বা নিজস্ব অস্মিতার জৌলুশ নিয়ে মাথা তুলে দাঁড়ানোর জন্য আর কত রক্ত ঝরাতে হবে এই জনপদে।
বৃটিশ বেনিয়া যুগের কথা। কলকাতার সুতোনুটিতে ঘাঁটি গেঁড়ে বাংলার মাটি থেকে ভারত জয়ের পর হতে ইংরেজ বণিকরা যেভাবে “ভারত ভাগ্য বিধাতা” হলেন তার পরবর্তীকাল হতেই তো বাঙালীর ভাগ্যাকাশে লাঞ্চনা বঞ্চনার যতশত কেচ্ছা কাহিনী। তাছাড়া ইংরেজ শাসনের সেই devide and rule এর যাঁতাকলে নতুন সংযোজন হোল ধর্ম। আর সনাতনী ব্রাহ্মন্য জাতপাতের সেই আদ্যিকালের বর্ণপ্রথা তো ছিলই। কলকাতা যেহেতু তখন ভারত ভাগ্য বিধাতাদের কেন্দ্রবিন্দু ছিল বিধায় ব্রাহ্মন্য রাজা জমিদার তো বটেই বরঞ্চ মুসলিম ভূস্বামী ও বনেদী গোষ্ঠীর জন্যও তা ছিল শেষ ঠিকানা। এমনকি রাজনীতির শাসক সম্প্রদায়ও গড়ে উঠেছিল কলকাতা কেন্দ্রিকতাকে প্রাধান্য দিয়ে। ফলে সময়ের টানাপোড়েনে আপন ঠিকানার খোঁজে রাজনীতির বিভাজনে যখন হিন্দু মুসলিমের লক্ষ্মনরেখা সৃষ্টি হোল তখন থেকেই এই অস্তিত্বের শ্লোগানের জয়গানে জনপদ মুখরিত হোল। এবং সেটাই বোধ হয় জনতুষ্টির আঞ্চলিক জাগরনের প্রথম পদক্ষেপ। মুসলিম বাঙালী আর হিন্দু বাঙালীর দূরত্ব সৃষ্টির এক অলিখিত অধ্যায়। যদিও তখনকার প্রেক্ষিতে হিন্দু বর্ণপ্রথার নিম্নবর্গীয় শ্রেনীভুক্তরা অতটা ফ্রন্টলাইনে ছিলেননা, তথাপিও বলা যায় ব্রাহ্মন্য প্রভাবে নিম্নবর্গীয় সনাতনীরা সবসময় একটা রাজা প্রজার বন্ধনে বড় বাবুদের অনুগত থেকেই তাদের শক্তিকে সুসংহত করেছে। ফলে একটা অসম লড়াইয়ে প্রলুব্ধ হয়ে নিম্নবর্গীয় সনাতনীরা গোলকধাঁধার বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে কোলকাতাকে প্রাধান্য দিয়েছে। ‘ঢাকা না ক্যালকাটা - ঢাকা ঢাকা’ শ্লোগানে মুসলিম প্রাধান্যের কাদামাটির পুর্ব বাংলায় বাঙালী জাগরনের জয়গান ধ্বনিত হোল। হিন্দু জমিদার ও ভূস্বামীরা প্রমাদ গুনে নিজস্ব অস্তিত্বকে “এই পেয়ারী ভারত মা তুঝে হাম শীশ ঝুকাতি হ্যায়” বলে গলায় ভারতীয় তকমা গলিয়ে নিল। এদিকে ঢাকা কেন্দ্রিক মুসলিম প্রাধান্যের বাঙালরা(হিন্দু মুসলিম মিলে) পাকিস্তানী তকমা গলায় ঝুলিয়ে নিল। যদিও বাঙালী অস্মিতার বীজটাকে হাতের মুঠোয় রেখেই তারা ‘লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান’ উচ্চারন করে নিজেদের অস্তিত্বের জয়গানে অতি সন্তর্পনে এগিয়ে গিয়েছিল।
পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকে শুরু হোল অর্থনৈতিক বৈষম্য কেন্দ্রিক রাজনীতির টানাপোড়েন। পুর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তান মিলে বৃহত্তর মুসলিম পাকিস্তান রাষ্ট্রের পত্তন ঘটলেও শাসন ক্ষমতা ও অন্যান্য প্রাধিকারের প্রাপ্যতায় পশ্চিম ভাগের পাকিস্তান অংশটি ছিল অগ্রগামী। ফলে তাদের মধ্যে একটা শাসক শ্রেণীয় মর্যাদা ভিত্তিক আচরন একসময় প্রকট আকার ধারন করে। তাছাড়া পাকিস্তানের পশ্চিম অংশটি ভিন্ন জাতিস্বত্বা ও ভাষাভিত্তিক হওয়ায় মুসলিম অখন্ডতার জোশে পাকিস্তান রাষ্ট্রের সৃষ্টি হলেও বাঙালী স্বত্বার পুর্ব পাকিস্তান নিজেদের বাঙালীয়ানার অস্মিতায় ঘুরে দাঁড়ায়। অর্থনৈতিক বৈষম্য আর শাসন ক্ষমতার ভারসাম্যহীনতায় বাঙালীরা স্বাধিকারের প্রশ্নে নিজেদের মত করে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চাইলো। জন্ম নিল নতুন শ্লোগান। ‘ঢাকা না পিন্ডি - ঢাকা ঢাকা’ শ্লোগানে পুর্ব বাংলার আকাশ বাতাস ভারি হয়ে উঠলো। অবশেষে ঢাকারই জয় হোল। নতুন স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম হোল। বাঙালী আপন উঠানে বুক ভরে শ্বাস নিল। আপন উঠানে বাঙালীয়ানার জয়গানে এই ছোট্ট ভূখন্ডের আকাশ বাতাস বাঙালীময় হয়ে উঠলো। রাখাল বালক গেয়ে উঠলো -
“এই পদ্মা, এই মেঘনা,
এই যমুনা সুরমা নদি তটে।
আমার রাখাল মন গান গেয়ে যায়
এই আমার দেশ, এই আমার প্রেম
আনন্দ বেদনা, মিলন বিরহ সংকটে”।
কিন্তু ‘ঘুটে পুড়ে গোবর হাসে’র সেই নাড়ির টান আবারো মাথা চাড়া দিয়ে তার পুরনো অভ্যেসে ফিরতে চাইলো। এবার কিন্তু অন্য আদলে। কোথায় যেন পড়েছিলাম, বাঙালী আপন স্বত্বায় কখনোই নিজ ভূখন্ডের শাসক ছিল না। পরাধীনতার গ্লানি নিয়েই তার দিনমান ভাল রাখতে চায় সে। এর ব্যাখ্যা হয়তো অনেক বড় হবে। তবে গোলাম হোসেন মীরজাফর কিংবা সেইসব সময়ের উমিচাঁদ রায় দুর্লভ রাজবল্লভদের সেই পরাশ্রয়ী আচরনের ছিটেফোঁটায় এখনকার বাঙালী সন্তানদের আচার আচরনের পরিসংখ্যানইবা কম কিসে!
আপন স্বত্বায় বাঙালী গর্বিত জাতি হয়ে সবসময় মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চেয়েছে। বার বার হোঁচট খেয়েও সে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। ওদিকে মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ের মিত্র শক্তি প্রতিবেশী রাষ্ট্র, বন্ধুত্বের আড়ানি জালে বাঙালীর চেতনাবাজ শাসকদের বরাবরই চেতনা নাশক মোহে আবদ্ধ করে তার স্বার্থ সিদ্ধির কাজগুলো আস্তেধীরে নিজের মত করে এগিয়ে নিয়েছে। এদিকে বাংলার জনগন তো সেই সাতচল্লিশের রক্ত প্রবাহের মূল স্রোতেরই ডিএনএ থেকে উদ্ভুত। ফলে ‘জন্ম থেকে জ্বলছি’র সেই অস্ফুট উচ্চারনের এই জনপদে আধিপত্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে সব সময় একটা সতর্কতামূলক উচ্চকন্ঠ রয়েই গেছে। আর এসবের জুজু স্বাধীন বাংলার শাসক শ্রেনীর একটি পক্ষকে সবসময় ক্ষমতা হারানোর হীনমন্যতায় ভুগিয়েছে। ফলস্বরূপ দেশের মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দানকারী চেতনার ফেরি করা রাজনীতির দলটি মুসলমানদের জাতশত্রু হিসাবে বিবেচিত প্রতিবেশী রাষ্ট্রের ধর্মান্ধ শক্তির সরকারের সাথে হাত মিলিয়ে নিজেদের পরাশ্রয়ী আচরনে আমজনতার কাছে ঘৃনার পাত্র হয়ে পড়েছে। প্রতিবেশী বৃহৎ শক্তির দেশটির চলমান মৌলবাদী ধর্মান্ধ সরকারের সাথে হাত মিলিয়ে নিজেদেরকে ২০৪১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতাশীল থাকার স্বপ্নে বুঁদ হয়ে থাকা শাসক দলটি ততদিনে জনবিচ্ছিন্ন এক স্বৈরতন্ত্রের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে জনতা জনার্দনের সেই উঠানটি তাদের সেই পুরনো শ্লোগানে শান দিয়ে সামান্য কিছু ছুতোর অপেক্ষায় প্রহর গুনতে থাকে। বন্ধুত্বের বেড়াজালে প্রতিবেশী রাষ্ট্রটি যেভাবে একটি স্বাধীন সার্বভৌম ক্ষুদ্র রাষ্ট্রে তার খবরদারির দৃশ্যমানতায় বেপরোয়া হয়েছিল তাতে করে বাঙালী হৃদয়ে জ্বলে থাকা তুষের আগুন হঠাৎ করে স্ফুলিঙ্গের আকার ধারন করে সেই একই শ্লোগান নিয়ে তাকে রাস্তায় নামতে হলো। এবার ‘ঢাকা না দিল্লি - ঢাকা ঢাকা’ শ্লোগানে বাংলার আকাশ বাতাস ভারি হয়ে উঠলো। এবং এরই তোড়ে দাসত্বের মানসিকতায় পরিচালিত তথাকথিত চেতনার ধ্বজ্বাধারী ক্ষমতালিপ্সু হাসিনা সরকার তার আত্মীয় পরিজন ও দলবল নিয়ে তার প্রভুর দেশে আশ্রয় নিল। মনে হোল দেশ-জনতা স্বয়ংক্রিয়ভাবেই যেন ভারত বিরোধিতায় সরব হোল। একাত্তর সাল হতে ভারতীয় দ্বৈত নীতির বিরুদ্ধে জমে থাকা সুপ্ত তুষের আগুন প্রকৃত অগ্নিস্ফুলিঙ্গে প্রকাশ্য ভারত বিরোধিতায় একাট্টা হোল।
আমাদের বেঁচে থাকার শ্লোগান হোল, তোমার আমার ঠিকানা পদ্মা-মেঘনা-যমুনা। এই শ্লোগান নিয়েই বাংলার খেটে খাওয়া কাদামাটির মানুষ তার আপন অস্মিতায় বেঁচে থাকার স্বপ্ন দ্যাখে। আধিপত্যবাদী শক্তির বেড়াজালে আঁটকে পড়ে তাদেরকে বার বার শিকল ভাঙ্গার শ্লোগান দিয়ে বুক চিতিয়ে রাজপথে রক্ত ঢেলে মুক্তি ছিনিয়ে আনতে হয়েছে। কখনো কলকাতার ব্রাহ্মন্য জমিদার ভূস্বামীদের কবল থেকে, কখনো ধর্মস্বত্বের দাবি নিয়ে ভাই সেজে স্বৈরশাসক হয়ে উঠা ভিনজাতীয় শক্তির বিরুদ্ধে আবার কখনোবা আপন প্রজাতির মধ্যে লুকিয়ে থাকা দাসত্ব মনোভাবের চেতনা বিক্রির অপশক্তির বিরুদ্ধে। এই বিজাতীয় শক্তির বিরুদ্ধে শ্লোগান দেয়া নিয়ে আর যেন আমাদের ভাবতে না হয়। আমরা স্বাধীন স্বত্বায় নিজের মত করে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখে এগিয়ে যেতে চাই। কলকাতা দিল্লি পিন্ডির দিকে না তাকিয়ে আসুন আমরা নিজেরা নিজেদের মত করে বাঁচি। পরাশ্রয়ী মানসিকতাকে পরিহার করে আপন অস্মিতার আগুন জ্বালিয়ে বেঁচে থাকার রসদগুলোকে শক্তিশালী করে এগিয়ে যাই।
ঢাকা-১৭ আসন থেকে তারেক রহমানের পক্ষে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ
মায়ের জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চাইলেন তারেক রহমান
পরাশ্রয়ী শিকল ছেঁড়ার শ্লোগান আর কত!
জামায়াতের সঙ্গে জোটে যেতে আপত্তি জানিয়ে নাহিদকে ৩০ নেতার চিঠি
খুনিদের আমরা ধরবই: চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম
সহকারী কোচ জাকি মাঠে হার্ট অ্যাটাক করে মারা গেলেন
সেন্টমার্টিনগামী পর্যটকবাহী জাহাজে আগুন, নিহত ১
শনিবার হাদির কবর জিয়ারত করবেন তারেক রহমান
ঢাকা-৮ আসনে লড়তে চান ওসমান হাদির বোন মাসুমা
দেশে ফিরেই প্রধান উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানালেন তারেক রহমান
শুভ বড়দিন আজ
অস্ট্রেলিয়া বিএনপির উদ্যোগে সিডনীতে শহীদ ওসমান হাদীর গায়েবানা জানাজা
স্বাগত জানাতে গণমানুষের ঢল, হাসিমুখে হাত নাড়ছেন তারেক রহমান
আই হ্যাভ অ্যা প্ল্যান, ফর মাই কান্ট্রি : তারেক রহমান
শাজাহান খানের বাড়ি ও পেট্রোল পাম্প পাহারা দেয়া সেই যুবদল নেতার পদ স্থগিত
দুনিয়ার সবচেয়ে আজব সেতু বাংলাদেশে!
গাছের সঙ্গে বাঁধা সাত শিশু কাওছারের জীবন!
কারাগারে পরিকল্পনা, তিন মাসেই কোটিপতি ২ যুবক
সিডনিতে দুই বাংলাদেশীর আকস্মিক মৃত্যু
সিডনিতে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত তরুনী খুন
অক্সফোর্ডের করোনার ভ্যাকসিন বিরোধীতায় অস্ট্রেলিয়ার ইমাম ও আর্চবিশপ
অস্ট্রেলিয়ার কারাগারেই আরেক বন্দিকে কোপালেন সেই বাংলাদেশি ছাত্রী সোমা
কিশোরীর সাথে যৌন সম্পর্কের চেষ্টাঃ সিডনিতে বাংলাদেশী ছাত্র গ্রেপ্তার
মাস্টারশেফ অস্ট্রেলিয়ার সেরা ৪-এ বাংলাদেশি-অস্ট্রেলিয়ান কিশোয়ার
হুইপপুত্রের গোপন ব্যবসার বলি তরুণ ব্যাংকার
খোলা চুলে সিগারেট হাতে এবার নতুন বার্তা দিলেন পরীমণি
কুইন্সল্যান্ডে বারবিকিউ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককের আকস্মিক মৃত্যু
মাছ ধরতে গিয়ে পানিতে পড়ে সিডনির দুই বাংলাদেশীর মৃত্যু
হাটে কচুর লতি বিক্রি নিয়ে মুখ খুললেন বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক



