জালাল উদ্দিন আহমেদ
বাংলাদেশের রাজনীতি ও গণতন্ত্র
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ৬ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৫ | আপডেট: ০৬:২৩ পিএম, ৬ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৫
একটা মানুষের আয়ুষ্কাল কতই বা হবে। আমাদের বাপ দাদার সময়ে দেখেছি পঞ্চাশ ষাটেই অন্তিম যাত্রার এন্তেজাম। অবশ্য আমার সাইজের ঘরানার লোকজন আমার এই কথাগুলোর পাল্টা যুক্তি খাড়া করে নিজেদের চোদ্দ গুষ্টির ঠিকুজি খুলে বসবেন। কেউ বলবেন আমার দাদা একানব্বই বছর বেঁচে ছিলেন। কেউ আবার তার বাপের বিরাশি বছরের আয়ুষ্কাল নিয়ে ছবিসহ স্টাটাস দিয়ে ফেলবেন। আমার নানা বৃটিশ সরকারের পোষ্ট মাস্টারের হিসাবে চাকুরী করে দীর্ঘ তিরানব্বই বছর বেঁচে ছিলেন বলে কেউ হয়তোবা তার বংশ ঠিকুজির একটি লম্বা চওড়া ইতিহাস লিখে ফেলবেন। মোদ্দা কথা আমরা যারা মধ্য বা নিম্ন মধ্যবিত্ত ঘরানার প্রোডাক্ট তারা ইনিয়ে বিনিয়ে নিজেকে ফলানোর ব্যাপারে সদা সর্বদা জাগ্রত সৈনিক। যাহোক সাতচল্লিশ পরবর্তী সময়কালকে বাঙালী মুসলিম সমাজের জন্য প্রযোজ্য ধরেই এগোনো সমীচিন বলে মনে করি। কারন এর আগে আমরা পরাশ্রয়ী ঘরানার আদলেই আমাদের রোজনামচায় গতিক ছিলাম। সাতচল্লিশ পরবর্তীতে বাঙালী মুসলমান তার আপন অস্তিত্বের অস্মিতায় কিছুটা হলেও বুক ভরে শ্বাস নিতে পেরেছিল। সেতো ইতিহাস। তবে এই ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়েও হয়তো অনেকে তাদের বিদ্যার ঝাঁপি খুলে বসবেন। বলবেন মুসলিম শাসনামলে বাঙালী মুসলমানদের ঠাঁট বাটের কাহিনী কেচ্ছা। বলা বাহুল্য সেই ঠাঁট বাটের মুসলিম বাঙালী আদম কতজন ছিলেন সেটাও একটা গবেষনার বিষয় বৈকি! মোটকথা মুসলিম শাসন পরবর্তী দু'শ বছরের ইংরেজ গোলামীর যাঁতাকলে ধর্মীয় জাতপাতের যে মেরুকরন বাঙালী সমাজে দুর্গন্ধ ছড়িয়েছিল তার সূদুর প্রসারী ফল হিসাবে বাঙালীর সমগ্রতাকে ছিন্নভিন্ন করে সৃষ্টি হয়েছিল ধর্মীয় জাতিস্বত্ত্বার উত্থান। সুতরাং আপন ঐতিহ্যে মুসলমানদের বাঙালী হয়ে আত্মপ্রকাশ তো ওই সাতচল্লিশকে ধরেই এগোতে হবে।
‘লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান’ বলে আমরা বাঙালীরা পাক সরজমিনের সাচ্চা মুসলমান হলাম বটে কিন্তু আমাদের বাঙালীয়ানার কি হোল! হাঁ, হয়েছে। তবে নিজেদের স্বকীয়তার চাহিদা নিয়েই মুসলমান বাঙালী তাদের রাজনীতি শিক্ষা সংস্কৃতির বিকাশ ঘটাতে চেয়েছে এবং কামিয়াবও হয়েছে। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকেই বাঙালী তার রাজনীতির হাতে খড়ি নেয় বলেই ধরে নেয়া যায়। তাদের সেই বাঙালীয়ানা ছিল পুর্ব বাংলার মুসলিম অধ্যুষিত বাঙালী তথা বাঙালদের আপন অস্মিতা তৈরীর রাজনৈতিক সূচনা। তবে ইতহাস ব’লে কথা! যতই গণতন্ত্র সমাজতন্ত্র প্রেসিডেন্সিয়াল বা সংসদীয় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার কথা বলিনা কেন, দেশের সমাজ গঠনের কাঠামোগত সেই মধ্যযুগীয় হাল হকিকতের পরিবর্তন হয়েছে কি? সমাজ বিকাশের সাম্যতা নিয়ে কোন রাজনীতি কি সে পথে হাঁটার সাহস দেখিয়েছে! মোড়ল, মাত্ববর, চেয়ারময়ান, মেম্বারদের সেই আদি কাঠামোতেই আমাদের রাজনীতির পথ নির্দেশিকা বিদ্যমান রয়েছে বলে মনে হয়না কি! আর সেসব মোড়ল মাত্ববরীয় বংশ পরম্পরার অনাদিকালের কৃষ্টি কালচার নিয়েই তো মুসলমান বাঙালীর এইসব দিনরাত্রি। আজকের দিনে বাংলাদেশী জন্ম সনদ প্রাপ্তির চুয়ান্ন বছর কাল অব্দি আমরা বোধ হয় আরো পিছনের দিকে চলে গেছি। সেই মধ্যযুগীয় রাজা রাজড়াদের বংশ পরম্পরার আদলে এখন আমাদের গণতন্ত্রের রাজনীতি ও শাসক নির্বাচনের জোয়ার নেমেছে। গণতান্ত্রিক পদ্ধতির রাজনীতি আজ পারিবারিক বলয়ের সীমানা প্রাচীরের ভিতরেই সীমাবদ্ধ।
বাংলাদেশের অভ্যুদয় পরবর্তী এই চুয়ান্ন বছরে আমরা রাজনীতিতে কোমর সোজা করে দাঁড়াতে পারিনি। মুক্ত বাঙালী হয়ে আত্ম প্রকাশের মন্ত্রে হেমিলিয়নের বাঁশি বাজানো সেই জাদুকর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান এবং তারই অনুপ্রেরনায় উজ্জীবিত মহান সেনাপতি মেজর জিয়াউর রহমানের দুই পারিবারিক বলয় তৈরী করে আমরা সমগ্র বাঙালী আজ দ্বিধাবিভক্ত। তাদের এই দুই পারিবারিক উঠান তৈরী করে আজ বাংলাদেশের রাজনীতি ও গণতন্ত্র যেন দুটি পরিবারভুক্ত দুই মেরু। বিভিন্ন ফ্যাকড়া ফ্যাসাদের ইসলামী জোশের দল উপদল দেখি বটে তবে সেসবের মধ্যে জন সম্পৃক্ততার ইন্টিগ্রীটি খুব একটা বেশী দেখা যায় না। আবার লাল ঝান্ডার রাস্তা দখলের রাজনীতি কখনোই এদেশের মুসলিম বাঙালী হৃদয়ে বাসা বাঁধতে সক্ষম হয়নি। ফলে না ‘ঘরকা না ঘাটকা’র সেই রাম শ্যামের ছাই ফেলতে ভাঙ্গা কুলোর দুই মেরুতেই বাঙালীকে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকতে হয়েছে। এবং সৈয়দ মুজতবা আলির ‘সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলেছে’র রোজনামচায় আমাদের রাজনীতির মুদির দোকানটি যেন পুঁথি পঠের আদলেই চলমান। আজকের দিনে সাধারন কৃষকের ঘর থেকে উঠে আসা মান্না নুরুরা রাজনীতি ও গণতন্ত্রের বেসিক ফাউন্ডেশন নিয়ে চমক দেখাতে চান বটে, তবে ঐযে বলেছি অর্থ বিত্ত ও পারিবারিক পরম্পরার জোশে তারা বা তাদের আদর্শের ঝাঁপিটি একটি গন্ডিতেই ব্র্যাকেট বন্দি হয়ে খাবি খায়। ফলে রাজনীতি ও গণতন্ত্র এদেশীয় কালচারে যেন ভিনু হওয়া দুই ভাইয়ের হেঁসেলেই সীমাবদ্ধ রয়েছে।
স্বাধীনতা অর্জনের পর এই পারিবারিক পরম্পরার রাজনীতি আমাদের রাষ্ট্র কাঠামোয় এক অশুভ দৈত্য শক্তির অভ্যুদয় ঘটিয়েছে। কেউ মানুক আর না মানুক, বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও রাজনীতির গতিপথ এখন দুই পরিবারের এজমাইলি সম্পত্তির রূপ ধারন করে তার সমস্ত স্বত্ত্বা দুই পরিবারের হেঁসেল বন্দি হয়ে খাবি খাচ্ছে। ফলশ্রুতিতে রাজনীতি বুঝুক আর না বুঝুক কিংবা গণতন্ত্র মানুক আর না মানুক, পরাক্রমশালী দুই পরিবার থেকেই রাজনীতির ছত্রপতি বা মুখিয়া নির্বাচন আজ বাধ্য বাধকতার ব্র্যাকেট বন্দিতে আবদ্ধ হয়ে পড়েছে। সেক্ষেত্রে ‘অগত্যা নাতি ভাতারে’র সেই কাহাবতের অক্টোপাশে জড়িয়ে গোটা বাঙালী সমাজ আজ দুটি পরিবারের মোহজালে আচ্ছন্ন রয়েছে। আর তারই সুবিধাভোগে রাজনীতির মুখিয়া হয়ে সামনে আসা পারিবারিক অব্জেক্টগুলি প্রচন্ড ক্ষমতার সুবিধাবলে একসময় স্বৈর শাসক হতেও দ্বিধা করছেনা। আমরা গত চুয়ান্ন বছরে সেটাই তো দেখছি। তবে যখনই শাসক তার ক্ষমতা নিরঙ্কুশ করতে মাত্রাতিরিক্ত বল প্রয়োগ বা স্বেচ্ছাচারিতার দুঃসাহসে সাঁতার কাটতে চেয়েছে তখনই বাঙালী তার হার না মানা চরিত্রের ঐতিহ্যগত বা বলা যায় জেনেটিক স্রোতের তোড়ে সেই অপশক্তিকে বার বার কাবু করেছে। সেটা আমরা দেখেছি গত শতাব্দীর ৫২এর ভাষা আন্দোলন, ৫৪এর যুক্তফ্রন্ট সরকার, ৬৯এর গণ অভ্যুত্থান, ৭১এর মুক্তিযুদ্ধ, ৭৫এর পনের আগষ্ট স্বাধীন দেশে তৈরী হওয়া একনায়কের বিনাশ, ৭৫এর সাতই নভেম্বর বিদেশী ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সিপাহী জনতার সম্মিলিত প্রতিরোধ, ৯০এর ডিসেম্বরে মিলিটারী স্বৈরশাসকের পতন ঘটানো এবং সর্বশেষ ২০২৪এর জুলাই আন্দোলনে গণতন্ত্রের মুখোশে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মদতে সৃষ্ট স্বৈরাচারী মাফিয়া হাসিনা সরকারের পতন। অর্থাৎ ঊনিশ'শো একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী হতে দু'হাজার চব্বিশের জুলাই আন্দোলন বাঙালীর দীর্ঘ চুয়ান্ন বছরের স্বাধীন স্বত্ত্বার গণতান্ত্রিক মুক্তির সংগ্রাম বললেও ভুল বলা হবে না।
সংগ্রামের কি শেষ বলে কিছু আছে! একবিংশের চব্বিশে যে আশা ও আকাঙ্খায় ছাত্র জনতার (নাহ্, কোন রাজনৈতিক সংগ্রাম বা অন্দোলন ছিল না সেটা। অবশ্য রাজনীতির কাঠামোগত সহায়তায় তার পূর্ণতা এসেছে) গণ অভ্যুত্থানে স্বাধীনতার নেতৃত্বদানকারী একটি অহংকারী বিষাক্ত রাজনীতি এদেশ থেকে বিতাড়িত হয়েছে, তা সত্যিই ইতিহাসের সেরা ঘটনা বটে। বিশ্ব বরেন্য নোবেল লরিয়েট এবং বাংলাদেশের সেরা সন্তান প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনুসকে অন্তর্বর্তী কালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা করে এখন দেশে রাজনীতির ট্র্যাঞ্জিশন চলছে। জুলাই অভ্যুত্থানকে সামনে রেখে রাজনীতি ও রাষ্ট্র ব্যবস্থায় উন্নত চিন্তা ভাবনার বিষয়াদি সংযুক্ত করে তা সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতায় একটি গনমুখী রাজনীতির অনুশীলনের মাধ্যমে দেশে জনকল্যান মূলক রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে জুলাই সনদ ঘোষিত হয়েছে। চব্বিশের গণ অভ্যুত্থান পরবর্তী দায়িত্ব নেয়া অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ঘোষিত সাধারন নির্বাচন নিয়ে এখন দেশে রাজনীতির ফুরফুরে হাওয়া বইছে। আশা করা যায় রাজনৈতিক সহমতের ভিত্তিতে ঘোষিত জুলাই সনদ, পরবর্তী নির্বাচিত সরকার কর্তৃক সংসদে গৃহীত হয়ে দেশের রাজনীতির স্বচ্ছতা ও জনকল্যানমূলক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় বাংলাদেশ ভবিষ্যতের একটি সুখী সমৃদ্ধ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসাবে নিজের শিরদাঁড়া সোজা করে দাঁড়াতে সক্ষম হবে।
লিবিয়া থেকে দেশে ফিরলেন আরও ৩১০ বাংলাদেশি
বাংলাদেশের রাজনীতি ও গণতন্ত্র
খালেদা জিয়ার জন্য জার্মানি থেকে এয়ার অ্যাম্বুল্যান্স পাঠাচ্ছে কাতার
খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স পাঠাতে প্রস্তুত কাতার
অন্তর্বর্তী সরকার নিয়ে প্রশ্ন তোলার আর সুযোগ নেই: অ্যাটর্নি জেনারেল
১৯ দেশের নাগরিকদের গ্রিনকার্ড-নাগরিকত্ব স্থগিত করল যুক্তরাষ্ট্র
খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের খবর নিতে হাসপাতালে প্রধান উপদেষ্টা
সর্বকালের সর্বনিম্নে এখন ভারতীয় রুপির মান
কারাবন্দি ইমরান খান পুরোপুরি সুস্থ আছেন : উজমা খান
খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় যুক্তরাজ্যের মেডিকেল টিম এভারকেয়ারে
আট কুকুরছানা হত্যা মামলায়, সেই সরকারি কর্মকর্তার স্ত্রী গ্রেফতার
খালেদা জিয়াকে ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’ ঘোষণা, পাবেন স্পেশাল ফোর্স
নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতের মধ্যে ভোটের ব্যবধান ৪ শতাংশ
এবার ৫২৭ থানার ওসি লটারির মাধ্যমে পদায়ন
ভারতে আজীবন সম্মাননা পেলেন এইউবি উপাচার্য ড. শাহজাহান খান
দুনিয়ার সবচেয়ে আজব সেতু বাংলাদেশে!
গাছের সঙ্গে বাঁধা সাত শিশু কাওছারের জীবন!
কারাগারে পরিকল্পনা, তিন মাসেই কোটিপতি ২ যুবক
সিডনিতে দুই বাংলাদেশীর আকস্মিক মৃত্যু
সিডনিতে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত তরুনী খুন
অক্সফোর্ডের করোনার ভ্যাকসিন বিরোধীতায় অস্ট্রেলিয়ার ইমাম ও আর্চবিশপ
অস্ট্রেলিয়ার কারাগারেই আরেক বন্দিকে কোপালেন সেই বাংলাদেশি ছাত্রী সোমা
কিশোরীর সাথে যৌন সম্পর্কের চেষ্টাঃ সিডনিতে বাংলাদেশী ছাত্র গ্রেপ্তার
মাস্টারশেফ অস্ট্রেলিয়ার সেরা ৪-এ বাংলাদেশি-অস্ট্রেলিয়ান কিশোয়ার
হুইপপুত্রের গোপন ব্যবসার বলি তরুণ ব্যাংকার
খোলা চুলে সিগারেট হাতে এবার নতুন বার্তা দিলেন পরীমণি
কুইন্সল্যান্ডে বারবিকিউ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককের আকস্মিক মৃত্যু
মাছ ধরতে গিয়ে পানিতে পড়ে সিডনির দুই বাংলাদেশীর মৃত্যু
হাটে কচুর লতি বিক্রি নিয়ে মুখ খুললেন বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক



