avertisements 2
Text

রাশেদুল ইসলাম

শেরপুরের সকাল

প্রকাশ: ১১:৫১ পিএম, ৩ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২০ | আপডেট: ০৮:৪২ পিএম, ১০ মার্চ,রবিবার,২০২৪

Text

শেরপুরের সকাল

রাশেদুল ইসলাম

 

রাস্তার দুপাশে সোনালী ধানের ক্ষেত । এটা কোন গ্রামের রাস্তা নয় । শেরপুর সার্কিট হাউজ সংলগ্ন পৌরসভার একটি রাস্তা । গাছপালা ঘেরা পৌরসভার এদিকটা গ্রাম মনে হয় । ডানেবায়ে পুকুর;  মাঝখানে সরু রাস্তার উপর গরুছাগল বাঁধা ।  সবুজের সমারোহ দিয়ে ঘেরা ছোট ছোট ঘরগুলো আমাকে আচ্ছন্ন করে । এ ধরণের  বাড়ি আমার কাছে ‘শান্তির নীড়’ মনে হয় । ইংরেজ কবি আলেকজেনডার পোপের মত আমার মনে এক ধরণের আবেগ ভর করে । আমারও মনে হয় একখণ্ড জমি,  আর এ রকম  গাছপালা ঘেরা বিশুদ্ধ আলোবাতাসে ভরা ছোট্ট  একটা বাড়িতেই পৃথিবীর সকল সুখী মানুষের বাস  । হটাৎ কেন যেন আমার  এ রকম সুখী মানুষ হতে ইচ্ছে করে ।

 এখন  বাংলা ১৪২৭ সাল। আজ  অগ্রহায়ন মাসের ৬ তারিখ । হেমন্ত কাল । কার্ত্তিক মাস শেষ হয়েছে কয়েকদিন হোল। সোনালী এবং সোনালী-সবুজ রঙে ভরা সব ধানক্ষেত । আমার ছেলেবেলায় কার্ত্তিক মাসে যে ধানের ফলন হত, তার নাম ছিল কার্ত্তিক শাইল । তখন ধানের এমন উচ্চ ফলনশীল জাত ছিল না । দেশের মোট জনসংখ্যা ছিল সাড়ে সাত কোটি । তখন খাদ্য ঘাটতি ছিল ৩০ লক্ষ টন । এখন দেশের লোক সংখ্যা ১৭ কোটি প্রায় । জনগণের জীবন যাত্রার মানের উন্নতি  হয়েছে । শিল্প কলকারখানা এবং নগরায়নের কারণে আবাদী জমির পরিমাণ  কমে গেছে । তারপরও দেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ । এ কৃতিত্ব আমাদের দেশের  কৃষি বিজ্ঞানী এবং কৃষকদের ।  কৃষিবিজ্ঞানীরা একের পর এক উচ্চ ফলনশীল ফসলের জাত  উদ্ভাবন করেছেন;  আর আমাদের কৃষকেরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে সেই  নতুন জাতের ফসলের চাষ করেছেন ।এভাবেই  তাঁরা ফল, ফুল আর নানা রঙের  ফসলে ভরে তুলেছেন  আমাদের দেশকে । শেরপুর সার্কিট হাউজে খোদাই করা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটা স্মরণীয় উক্তি  মনে পড়ে আমার -

“আপনি চাকরি করেন,

আপনার মায়না দেয়

ওই গরীব কৃষক,

আপনার মায়না দেয়

ওই গরীব শ্রমিক,

আপনার সংসার চলে ওই টাকায়,

আমি গাড়ি চড়ি ওই টাকায়, 

ওদের সম্মান করে কথা বলেন,

ওদের ইজ্জত করে কথা বলুন ।“ 

আমি বিশাল হৃদয় বঙ্গবন্ধুর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করি । মহান আল্লাহ তাঁকে বেহেস্তের সুউচ্চ মর্যাদায় আসীন করুন ।

 আমি  মাথা নত করি  আমাদের দেশের কৃষক এবং কৃষির সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের  প্রতি । 

C:\Users\User\Desktop\126901121.jpg C:\Users\User\Desktop\127237100.jpg

 

C:\Users\User\Desktop\127153290_.jpg C:\Users\User\Desktop\127199463.jpg

 

১৯৭১ সাল ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের বছর। পাক হানাদার বাহিনী গ্রাম কে গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়েছে । কৃষকেরা প্রাণ ভয়ে গ্রাম থেকে পালিয়েছে । কোন আবাদ হয়নি সে বছর । সেই আবাদ না হওয়ার ধারাবাহিকতায় ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ হয়েছে । মানুষের ক্ষুধা এবং খাদ্য নিয়ে নোংরা রাজনীতি করার সুযোগ নিয়েছে স্বাধীনতা বিরোধী পরাজিত  শক্তি । বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মত আকাশচুম্বী জনপ্রিয় নেতার জনপ্রিয়তার পাহাড়ে ধাক্কা দেওয়ার সুযোগ নিয়েছে তারা। পরিণতিতে ১৯৭৫ সালের  কালো অধ্যায় । ১৯৪২ সালের ব্রিটিশ আমলেও জাপানী বোমা ভীতির কারণে বাংলার কৃষকেরা মাঠে আবাদ করতে পারেনি । এর সাথে ছিল প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং ইংরেজ শাসকের জনস্বার্থ বিরোধী নীতি । এ  সবকিছুর ফলে  দেখা দেয়   ১৯৪৩ সালের  মন্বন্তর । সেই দুর্ভিক্ষের   পরিণতিতে বাংলার ৩৭/৩৮  লক্ষ মানুষের করুণ মৃত্যু ঘটে ।  

গত কয়েকদিনে আমি সড়ক পথে কয়েকটি জেলা ঘুরেছি । তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে। এ যাত্রায় সাতক্ষীরা, মাগুরা, যশোর, গাজীপুর, টাংগাইল ও ময়মনসিংহ  জেলাগুলোর মাঠ দেখার সুযোগ হয়েছে আমার । সব জায়গায় একই চিত্র । শেরপুরেও আমার সামনে কাঁচা পাকা ধানের ক্ষেত । হালকা কুয়াশার শুভ্রসকালে ধানগাছের না শুকানো শিশির বিন্দু আমার মনে আশার সঞ্চার করে। করোনার এই মহাদুর্যোগে গোটা পৃথিবী থেমে গেছে । কিন্তু আল্লাহর অশেষ রহমতে  এই করোনা  আমাদের কৃষক ভাইদের থামাতে পারেনি । তারা আমাদের মত লকডাউন বোঝে না । তারা নিজেদের ঘরে আটকা থেকে রাজাউজির মারে না । তাইত সারা মাঠ জুড়ে  এই সোনালী ধানের  ক্ষেত । নানা রঙের বিভিন্ন ফসলে  ভরে আছে  মাঠ ।  এতে আমার মনে হয়েছে  করোনায় আর যায়  ঘটুক,  এদেশে আগের সেই দুর্ভিক্ষ আর হবে না;   ইনশাল্লাহ ! 

 আমি শেরপুর এসেছি একটা ছেলের গল্প শুনে ।  শাহিন মিয়ার গল্প । শেরপুরের গারো পাহাড়ের পাদদেশে একটা গ্রামে তাঁর  জন্ম । গরীবের ছেলে । পড়াশুনায় বড় আগ্রহ । কিন্তু দারিদ্রের কশাঘাতে এসএসসি  পাশ করেই তাঁকে  ঝরে পড়তে হয় । জীবিকার তাগিদে  সেনাবাহিনীতে চাকুরী নেন তিনি  । কিন্তু শিক্ষাজীবন থেকে নিজের ঝরে পড়াকে  মেনে নিতে পারেন  না কখনও  । তাঁর  গ্রামের আর কোন ছেলেমেয়ে যেন শিক্ষাজীবন থেকে  ঝরে পড়ার কষ্ট না পায়, সেই ব্রত নেন তিনি । প্রথমে  নিজের স্বল্প বেতন থেকে  তিনি কয়েকজন  ঝরেপড়া ছেলেমেয়ের দায়িত্ব নেন । ২০০৭ সালে তার এই  স্বপ্নের পথচলা শুরু হয় ।  শুভাকাঙ্ক্ষীদের পরামর্শে ২০০৮ সালে  দরিদ্র ও অসহায় শিক্ষার্থী উন্নয়ন সংস্থা (ডপস)  নামে একটা এনজিও প্রতিষ্ঠা করেন  তিনি । জাতিসংঘ শান্তিমিশনে যাবার  সুযোগ পেয়ে তার স্বপ্ন আরও ডানা মেলে । সবাই মিশনের টাকায় জমি কেনে;  বাড়ি বানায় । কিন্তু শাহিন মিয়ার চিন্তা ঝরেপড়া ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে ।    ঝরেপড়া ছাত্রছাত্রীরাই  তাঁর এনজিও প্রতিষ্ঠানের সুবিধাভোগী । বর্তমান সদস্য সংখ্যা ৩৫০ । তার মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ছাত্রছাত্রী সংখ্যা  ৬১, কলেজে  ৯৯, ডিপ্লোমা কোরসে   ৯  এবং স্কুলপড়ুয়া ছাত্রছাত্রী সংখ্যা ১৮১ । এই সমাজকল্যাণমূলক কাজ করার  জন্য সামরিক গোয়েন্দা পরিদপ্তর থেকে শাহিন মিয়াকে  দাপ্তরিক অনুমতি দেওয়া হয়েছে । ২০১৪-১৫ অর্থবছরে সেনাবাহিনী প্রধানের সুপারিশক্রমে মহামান্য রাষ্ট্রপতি শাহিন মিয়াকে   ‘বিশিষ্ট সেবা পদক’ (বিএসপি) প্রদান করেছেন । ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে শাহিন মিয়াকে ফরমেশন পর্যায়ে ‘জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল’  পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে । 

আমি শাহিন মিয়ার কথা শুনি ডঃ রাব্বির কাছে । ডঃ রাব্বি আমার বন্ধু । তিনি  নিঃশব্দ  নিরবে সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করেন । শাহিন মিয়ার প্রতিষ্ঠানকে তিনি ব্যক্তিগত পর্যায়ে ৪ টি কমপিউটার দিয়েছেন । করোনার এই মহাদুর্যোগে ডপস এর মাধ্যমে তিনি ২০০ দরিদ্র পরিবারের খাবারের ব্যবস্থা করেছেন । অবশ্য এসব কথা তিনি আমাকে বলেননি । আমি শাহিন মিয়া থেকে জেনেছি । ডঃ রাব্বির মত যারা নিরবে নিঃশব্দে দেশের সুবিধাবঞ্চিত  মানুষের জন্য কাজ করেন,  তাঁদের  সকলের প্রতি আমার বিনম্র  শ্রদ্ধা ।

(চলবে, , ) 

ইস্কাটন, ঢাকা । ২৬ নভেম্বর, ২০২০ । 

বিষয়:
avertisements 2
হিট অ্যালার্ট বাড়ল আরও ৩ দিন
হিট অ্যালার্ট বাড়ল আরও ৩ দিন
উপজেলা ভোটে ব্যর্থ হলে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা ক্ষুণ্ন হতে পারে : সিইসি
উপজেলা ভোটে ব্যর্থ হলে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা ক্ষুণ্ন হতে পারে : সিইসি
গরমে চোখের যত্ন নেবেন যেভাবে
গরমে চোখের যত্ন নেবেন যেভাবে
স্মৃতিদীপ - ৪
স্মৃতিদীপ - ৪
আদালতের রায়ে ‘মা’ হিসেবে ইতিহাস গড়লেন অভিনেত্রী বাঁধন
আদালতের রায়ে ‘মা’ হিসেবে ইতিহাস গড়লেন অভিনেত্রী বাঁধন
খেটে ওঠা চেটে ওঠা
খেটে ওঠা চেটে ওঠা
কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ভোটারের সংখ্যা কত, তালিকা চান হাইকোর্ট
কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ভোটারের সংখ্যা কত, তালিকা চান হাইকোর্ট
হিট স্ট্রোক প্রতিরোধে করণীয়
হিট স্ট্রোক প্রতিরোধে করণীয়
প্রতারণার  ফাঁদ হোয়াটসঅ্যাপে, এড়াবেন যেভাবে
প্রতারণার ফাঁদ হোয়াটসঅ্যাপে, এড়াবেন যেভাবে
চাঁদ দেখা গেছে, মঙ্গলবার রোজা শুরু
চাঁদ দেখা গেছে, মঙ্গলবার রোজা শুরু
মাদরাসায় ছাত্রকে বলৎকারের অভিযোগে শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা
মাদরাসায় ছাত্রকে বলৎকারের অভিযোগে শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা
বিমান থেকে ফেলা ত্রাণ মাথায় পড়ে নিহত ৫
বিমান থেকে ফেলা ত্রাণ মাথায় পড়ে নিহত ৫
পরিত্যক্ত যাত্রী ছাউনিকে পর্যটনকেন্দ্রে রূপান্তরিত করলেন ব্যারিস্টার
পরিত্যক্ত যাত্রী ছাউনিকে পর্যটনকেন্দ্রে রূপান্তরিত করলেন ব্যারিস্টার
অবশেষে সাংবাদিক বৃষ্টির লাশ বুঝে পেল পরিবার
অবশেষে সাংবাদিক বৃষ্টির লাশ বুঝে পেল পরিবার
অস্ট্রেলিয়া ও মালয়েশিয়াসহ ৪ দেশে রমজানের তারিখ ঘোষণা
অস্ট্রেলিয়া ও মালয়েশিয়াসহ ৪ দেশে রমজানের তারিখ ঘোষণা
দুনিয়ার সবচেয়ে আজব সেতু বাংলাদেশে!
দুনিয়ার সবচেয়ে আজব সেতু বাংলাদেশে!
গাছের সঙ্গে বাঁধা সাত শিশু কাওছারের জীবন!
গাছের সঙ্গে বাঁধা সাত শিশু কাওছারের জীবন!
কারাগারে পরিকল্পনা, তিন মাসেই কোটিপতি ২ যুবক
কারাগারে পরিকল্পনা, তিন মাসেই কোটিপতি ২ যুবক
সিডনিতে দুই বাংলাদেশীর  আকস্মিক মৃত্যু
সিডনিতে দুই বাংলাদেশীর আকস্মিক মৃত্যু
সিডনিতে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত তরুনী খুন
সিডনিতে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত তরুনী খুন
অস্ট্রেলিয়ার কারাগারেই আরেক বন্দিকে কোপালেন সেই বাংলাদেশি ছাত্রী সোমা
অস্ট্রেলিয়ার কারাগারেই আরেক বন্দিকে কোপালেন সেই বাংলাদেশি ছাত্রী সোমা
কিশোরীর সাথে যৌন সম্পর্কের চেষ্টাঃ সিডনিতে বাংলাদেশী ছাত্র গ্রেপ্তার
কিশোরীর সাথে যৌন সম্পর্কের চেষ্টাঃ সিডনিতে বাংলাদেশী ছাত্র গ্রেপ্তার
অক্সফোর্ডের করোনার ভ্যাকসিন বিরোধীতায় অস্ট্রেলিয়ার ইমাম ও আর্চবিশপ
অক্সফোর্ডের করোনার ভ্যাকসিন বিরোধীতায় অস্ট্রেলিয়ার ইমাম ও আর্চবিশপ
মাস্টারশেফ অস্ট্রেলিয়ার সেরা ৪-এ বাংলাদেশি-অস্ট্রেলিয়ান কিশোয়ার
মাস্টারশেফ অস্ট্রেলিয়ার সেরা ৪-এ বাংলাদেশি-অস্ট্রেলিয়ান কিশোয়ার
হুইপপুত্রের গোপন ব্যবসার বলি তরুণ ব্যাংকার
হুইপপুত্রের গোপন ব্যবসার বলি তরুণ ব্যাংকার
খোলা চুলে সিগারেট হাতে এবার নতুন বার্তা দিলেন পরীমণি
খোলা চুলে সিগারেট হাতে এবার নতুন বার্তা দিলেন পরীমণি
মাছ ধরতে গিয়ে পানিতে পড়ে সিডনির  দুই বাংলাদেশীর  মৃত্যু
মাছ ধরতে গিয়ে পানিতে পড়ে সিডনির  দুই বাংলাদেশীর  মৃত্যু
কুইন্সল্যান্ডে বারবিকিউ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককের আকস্মিক মৃত্যু
কুইন্সল্যান্ডে বারবিকিউ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককের আকস্মিক মৃত্যু
হাটে কচুর লতি বিক্রি নিয়ে মুখ খুললেন বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক
হাটে কচুর লতি বিক্রি নিয়ে মুখ খুললেন বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক
‘পারসন অব দ্য ইয়ারে’ ভূ‌ষিত হলেন বসুন্ধরা এম‌ডি
‘পারসন অব দ্য ইয়ারে’ ভূ‌ষিত হলেন বসুন্ধরা এম‌ডি
avertisements 2
avertisements 2