রাশেদুল ইসলাম
সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচিঃ বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২৪ আগস্ট,বৃহস্পতিবার,২০২৩ | আপডেট: ০২:৪৯ পিএম, ২১ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৭ আগস্ট, ২০২৩ তারিখে দেশের চার শ্রেণির মানুষকে টেকসই ও সুসংঘটিত সামাজিক নিরাপত্তা কাঠামোর আওতায় আনতে দেশে প্রথমবারের মত সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি উদ্বোধন করেন । এই উদ্বোধনের পর থেকেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনীতির ঐতিহাসিক প্রেক্ষিত আমার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে । সেই তাগিদ থেকেই আমার আজকের এই লেখা । তবে গোটা ব্রিটিশ ভারত নয়, শুধু তৎকালীন পূর্ব বাংলার রাজনীতির প্রেক্ষাপট নিয়েই আমার এই পর্যালোচনা ।
ব্রিটিশ ভারতের তৎকালীন পূর্ববাংলায় প্রচণ্ডভাবে আধিপত্য বিস্তারকারী একটি পরিবার ঢাকার নবাব পরিবার । ঢাকার নবাব পরিবারের পূর্বপুরুষ কাশ্মীরের খাজা আব্দুল ওহাব এবং খাজা আবদুল্লাহ ১৮৩০ সালে বানিজ্য করতে ঢাকায় বসতি স্থাপন করেন । এই ধনাঢ্য ব্যবসায়ী খাজা পরিবার এক পর্যায়ে ব্যবসা বাদ দিয়ে ব্রিটিশ রাজের সূর্যাস্ত আইনের আওতায় নিলাম হওয়া পূর্ববাংলার জমিদারি স্বত্ব ক্রয় করতে শুরু করেন এবং ১৮৪৩ সালে নব্য জমিদার খাজা আহসানুল্লাহর পুত্র খাজা আলিমুল্লাহ ঢাকা নবাব পরিবারের প্রতিষ্ঠা করেন । ১৯৩৪ সালের এক হিসাব অনুযায়ী ঢাকা নবাব পরিবারের ঢাকাসহ পূর্ববাংলায় মোট ভূসম্পত্তির পরিমাণ ছিল ২ লক্ষ একর । ১৮৫৭ সালে সিপাহী বিদ্রোহের সময় যখন ভারতে ইংরেজ শাসনের অবস্থা টালটলায়মান, তখন পূর্ববাংলায় ইংরেজ শাসন সুসংহত রাখতে ঢাকার নবাব পরিবারের ভূমিকা ছিল মুখ্য । এ কারণে ঢাকার নবাব পরিবার দক্ষিন এশিয়ায় ইংল্যান্ডের রাণী ভিক্টোরিয়ার সরাসরি আশীর্বাদপুষ্ট একটি ক্ষমতাশালী মুসলিম পরিবার হিসেবে পরিচিতি পায় (সুত্রঃ উইকিপিডিয়া) ।
বলা যায়, পূর্ববাংলার পিছিয়ে পড়া মুসলমানদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের জন্যই ঢাকার নবাব স্যার সলিমুল্লাহ সরাসরি রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন। দুটি কারণে নবাব স্যার সলিমুল্লাহ পূর্ববাংলার ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। তার একটি ১৯০৬ সালে ঢাকায় অল ইনডিয়া মুসলিম লীগ গঠন । সকলেই জানেন, এই মুসলিম লীগ সফলভাবে ইংরেজ শাসন মুক্ত হয়ে ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট পাকিস্তান নামক একটি নতুন রাষ্ট্র গঠন করতে সক্ষম হয় । অন্যটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় স্যার সলিমুল্লাহর অবদান বাঙালি জাতি চিরকাল শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে । ঢাকার নবাব পরিবারের সমালোচনার একটাই দিক; তাহল, নবাব পরিবারের মাতৃভাষা । ঢাকার নবাব পরিবারের মাতৃভাষা ছিল ফার্সি ও উর্দু (সুত্রঃ উইকিপিডিয়া)। বাংলা নয়। এর অবশ্য ঐতিহাসিক ভিন্ন পটভূমি রয়েছে ।
হিন্দু ধর্মের মত ইসলাম ধর্মে শ্রেণিবৈষম্য নেই সত্য; কিন্তু বাস্তবে পূর্ববাংলার মুসলমানদের মধ্যে সুস্পষ্ট শ্রেণিবৈষম্য বিদ্যমান ছিল । নবাব পরিবারের মত যারা কাশ্মির, মধ্যপ্রাচ্য বা অন্য কোন অঞ্চল থেকে আগত মুসলমান, তাঁদের অনেকেই স্থানীয় বাসিন্দাদের নিম্নজাতের মনে করতেন এবং নিজেদের আশরাফ বা উচ্চবংশীয় দাবী করতেন। তাঁদের পারিবারিক ভাষা ছিল মূলত ফার্সি, আরবী বা উর্দু । স্থানীয় ভাষা বাংলাকে তাঁরা অস্পৃশ্যদের ভাষা বা চাকরবাকরদের ভাষা মনে করতেন । এই ভাষাগত বিভাজনের কারণেই ঢাকা নবাব পরিবারের মুসলিম লীগ নেতা খাজা নাজিমুদ্দিন কখনো আমজনতার নেতা হতে পারেননি । বলা যায়, এই ভাষাগত বিভাজনের কারণেই পটুয়াখালীর নির্বাচনে খাজা নাজিমুদ্দিন আমজনতার নেতা শেরেবাংলা একে ফজলুল হকের কাছে ১৯৩৭ সালের নির্বাচনে পরাজয় বরণ করেন । এই ভাষাগত বিভাজনের কারণেই মুসলিম লীগ কখনই বাংলাকে দাপ্তরিক ভাষা বা রাষ্ট্রভাষা করার যোগ্য মনে করেনি। আর মুসলিম লীগ বাংলাভাষাকে অস্বীকার করার কারণেই ১৯৪৮ সালে পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ গঠন করা হয়, যেখানে তৎকালীন ছাত্রনেতা শেখ মুজিবুর রহমান মুখ্য ভূমিকা পালন করেন ।
আগেই বলা হয়েছে, ঢাকার নবাব পরিবারের সন্তান খাজা নাজিমুদ্দিনের পূর্বপুরুষ এদেশীয় ছিলেন না । তাঁরা ভারতের কাশ্মীর থেকে আগত । বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পূর্বপুরুষও এদেশীয় নন । বঙ্গবন্ধু তাঁর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ গ্রন্থে উল্লেখ করেন, “বহুদিন পূর্বে শেখ বোরহানউদ্দিন নামে এক ধার্মিক পুরুষ টুঙ্গিপাড়ায় তাঁদের শেখ বংশের গোড়াপত্তন করেন । তবে, ‘শেখ বোরহানউদ্দিন কোথা থেকে কিভাবে এই মধুমতির তীরে এসে বসবাস করেছিলেন কেউই তা বলতে পারে না” (পৃষ্ঠা ৩, অসমাপ্ত আত্মজীবনী)। তবে, ইতিহাস পর্যালোচনায় জানা যায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পূর্বপুরুষ শেখ আউয়াল ইরাক হতে পঞ্চদশ শতকে বিশ্বখ্যাত আওলিয়া হযরত বায়েজিদ বোস্তামীর সফর সঙ্গী হয়ে বঙ্গদেশে আসেন । ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ গ্রন্থে বঙ্গবন্ধু শেখ বংশের গোড়াপত্তনকারি হিসেবে যার নাম উল্লেখ করেছেন, তিনিই দরবেশ শেখ আউয়ালের দৌহিত্র শেখ বোরহানউদ্দিন ।
ইরাকে সাধারণ মানুষের ভাষা আরবী । তারমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পূর্বপুরুষের মাতৃভাষা ছিল আরবী, বাংলা নয় । কিন্তু টুঙ্গিপাড়ার শেখ পরিবার এদেশের মাটি মানুষের সাথে মিশে এবং সাধারণ মানুষের মাতৃভাষা বাংলাকে নিজেদের ভাষা হিসেবে গ্রহন করেছিলেন । কিন্তু ঢাকার নবাব পরিবার নিজেদের ‘আশরাফ’ মনে করেছেন এবং কখনো তাদের পূর্বপুরুষের ভাষা ফার্সি বা উর্দুকে ত্যাগ করেননি । অন্যদিকে টুঙ্গিপাড়ার শেখ পরিবার তথাকথিত ‘আশারাফ’ গোত্রীয় হলেও, কখনো তা মনে করেন নি । নিজেরা এদেশের মাটি মানুষের সাথে মিশে তৃণমূল পর্যায়ের ‘আতরাফ’ শ্রেনির মানুষের প্রতিনিধিত্ব করেছেন । এখানেই ঢাকার নবাব পরিবারের সাথে টুঙ্গিপাড়ার শেখ পরিবারের পার্থক্য ।
বঙ্গবন্ধু তাঁর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ গ্রন্থে বলেন, ‘মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠান পূর্বে ছিল খান সাহেব, খান বাহাদুর ও ব্রিটিশ খেতাবধারীদের হাতে, আর এদের সাথে ছিল জমিদার জোতদার শ্রেণীর লোকেরা । এদের দ্বারা কোনদিন পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা হত না । শহীদ সাহেব ও হাশিম সাহেব যদি বাংলার যুবক ও ছাত্রদের মধ্যে মুসলিম লীগকে জনপ্রিয় না করতে পারতেন, তাহলে কোনদিনও পাকিস্তান আন্দোলন বাংলার কৃষকদের মধ্যে জনপ্রিয়তা লাভ করতে পারত না’(পৃষ্ঠা ৩৫, অসমাপ্ত আত্মজীবনী) ।
এখানে খেতাবধারী এবং অন্যান্য যাঁদের কথা বলা হয়েছে, তাঁদের প্রায় সকলেই ‘আশরাফ’ গোত্রীয় মুসলমান এবং খাজা নাজিমুদ্দিনের মত এদেশের সাধারণ মানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলেন । বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষ্যমতে সাধারণ মানুষের কাছে মুসলিম লীগের জনপ্রিয়তা আনতে তাঁদের কোন ভূমিকা না থাকলেও ‘পাকিস্তান হওয়ার সাথে সাথেই এই খান বাহাদুর ও ব্রিটিশ খেতাবধারীরা তৎপর হয়ে উঠে ক্ষমতা দখল করে ফেলল’ (পৃষ্ঠা ৩৫, অসমাপ্ত আত্মজীবনী)। ফলে, এদেশীয় যারা খাটি ‘বাঙ্গাল’ তাদের সাথে পাকিস্তানের শাসকশ্রেণীর মধ্যে এক অলিখিত দেওয়াল তৈরি হয়, যার বাস্তব প্রতিফলন ঘটে পাকিস্তানের তৎকালীন বড়লাট কায়েদে আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার ঘোষণার মধ্য দিয়ে । এ ইতিহাস সকলের জানা । বঙ্গবন্ধুর রাজনীতির মূল লক্ষ্য ছিল শাসকশ্রেণীর মানুষের সাথে সাধারণ জনগণের তৈরি হওয়া অলিখিত সেই দেওয়াল ভেঙ্গে ফেলা ।
এখানে দুটি উদাহরণ উল্লেখ করা যেতে পারেঃ
১। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের নিম্নবেতনভোগী কর্মচারীদের ধর্মঘট সমর্থন করেন এবং সেই ধর্মঘটে নেতৃত্ব দেন । ফলস্বরূপ তাঁকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিস্কার করা হয় (পৃষ্ঠা ১১৪, অসমাপ্ত আত্মজীবনী)। এই নিম্ন বেতনভোগী কর্মচারীরা এদেশের অতি সাধারণ মানুষ; বাংলায় কথা বলা খাটি বাঙ্গাল ।
২। জননেতা শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তান সরকারের ‘কর্ডন প্রথা’ বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করেন । কর্ডন প্রথায় এক জেলা থেকে অন্য জেলায় খাদ্য পরিবহন নিষিদ্ধ করা হয় । এর ফলে বিভিন্ন জেলার ধানকাটা মৌসুমে ‘দাওয়াল’ হিসেবে কাজ করা দিনমজুর শ্রেণির মানুষ, যারা পারিশ্রমিক হিসেবে ধান পেতেন, তাঁরা তাঁদের প্রাপ্ত ধান পরিবহন করতে না পারায় সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েন । শেখ মুজিবুর রহমান তাঁদের পক্ষে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন । অথচ,’খাজা নাজিমুদ্দিন তখন বড়লাট । কারণ, জিন্নাহ মারা যাবার পরে তাঁকে গভর্নর জেনারেল করা হয়েছিল’ (পৃষ্ঠা ১০৫, অসমাপ্ত আত্মজীবনী)। খাজা নাজিমুদ্দিন এদেশের সন্তান হওয়া সত্ত্বেও এদেশের ঐ দিনমজুর শ্রেণির মানুষের দুঃখকষ্ট বুঝতে পারেন নি ।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথমে প্রধানমন্ত্রী ও পরে রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন । তিনি আমৃত্যু শাসক শ্রেণির সাথে এদেশের সাধারণ মানুষের অঘোষিত দূরত্ব কমাতে চেয়েছেন এবং তার প্রমাণ সর্বত্র । তাঁর সরাসরি তত্ত্বাবধানে প্রণীত সংবিধানের বেশ কয়েকটি অনুচ্ছেদে এদেশের শ্রমজীবী মেহনতি মানুষের সেই অধিকারের বিষয় সুদৃঢ়করণ করা হয় । বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালে আলজিয়ারসে অনুষ্ঠিত জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন বা ন্যাম সম্মেলনে সুস্পষ্ট উচ্চারণে বলেন,
‘বিশ্ব আজ দুইভাগে বিভক্ত,
একদিকে শোষক, আর একদিকে শোষিত ।
আমি শোষিতের পক্ষে’।
তিনি দেশের শাসন বিভাগে যারা কর্মরত তাঁদের উদ্দেশ্যে বলেন,
‘শ্রমিকদের সম্মান দিয়ে কথা বলুন, তাঁদের পরিশ্রমে আমার আপনার বেতন হয়’।
তিনি বলেন, ‘দুর্নীতি আমার বাংলার কৃষক করে না, দুর্নীতি আমার বাংলার শ্রমিক করে না,
দুর্নীতি করে আমাদের শিক্ষিত সমাজ’ ।
এসব কথা দিয়ে তিনি এদেশের শিক্ষিত শ্রেণি, যারা কোন না কোনভাবে ক্ষমতা পেয়ে নিজেদের সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ থেকে আলাদা ভাবতে শুরু করেন, তাঁদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেন । তাঁদেরকে প্রভাবিত করার মাধ্যমে ‘বাংলার দুখি মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর চেষ্টা করেন’ তিনি । কিন্তু সবই বৃথা । ১৯৫২ সালে নয়াচীন ভ্রমণের কারণে সেখানকার কৃষক শ্রমিক মানুষের দুঃখজয়ের কথা জানা ছিল তাঁর । প্রচলিত শাসন ব্যবস্থায় সুফল না পেয়ে শেষ পর্যন্ত ১৯৭৫ সালের ২৫ শে জানুয়ারি বাকশাল গঠন করেন তিনি - যা পশ্চিমা দুনিয়ার কাছে ছিল ভয়ংকর দুঃসংবাদ । যে সমাজতান্ত্রিক সমাজের বাস্তব রূপ পৃথিবীতে ঠান্ডা যুদ্ধের জন্ম দেয়, পৃথিবীকে দুটি বৃহৎ শক্তিবলয়ে ভাগ করে- সাম্রাজ্যবাদী শক্তির রাতের ঘুম হারাম করে দেয়- সেই সমাজ চিন্তার কথা বাকশালে আছে । তাই সাম্রাজ্যবাদি শক্তির রোষানালে পড়েন তিনি । একদিকে দেশিয় কুচক্রী মহল, অন্যদিকে সাম্রাজ্যবাদি শক্তি- তাদের সম্মিলিত প্রয়াসে জন্ম দেয় একটি জাতীয় শোক দিবস- ১৫ আগস্ট, ১৯৭৫ । ‘বাংলার দুখি মানুষের মুখে হাসি ফোটানো’র চেষ্টা থেমে যায় বঙ্গবন্ধুর ।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আশ্রায়ন প্রকল্প এবং বর্তমানের সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি নিঃসন্দেহে বঙ্গবন্ধুর সেই দুখি মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর উপযোগী উল্লেখযোগ্য কার্যকর পদক্ষেপ । সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচির আওতায় প্রবাস, প্রগতি, সুরক্ষা ও সমতা -এই চার নামে এদেশের চার শ্রেণির মানুষ ভবিষ্যতে পেনশন ভোগের সুযোগ পাবে। দেশে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের ক্ষেত্রে এই কর্মসূচি মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে-এটা সুনিশ্চিত । এই কর্মসূচির আওতায় কৃষক শ্রমিক ও অন্যান্য খেটে খাওয়া মানুষের জন্য ‘সুরক্ষা’ এবং দারিদ্র সীমার নীচে বসবাসকারি মানুষের জন্য ‘সমতা’ স্কিমভুক্ত মানুষ মূলত বঙ্গবন্ধুর সেই দুখি মানুষের দল । এই দুখি মানুষের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার জন্য সৃষ্ট এই সঞ্চয় সুবিধায় সাধারণ মানুষের সঞ্চয় প্রবণতা বাড়বে । সঞ্চয় প্রবণতাই এই অতি সাধারণ মানুষকে সঞ্চয়ী করবে । সঞ্চয়ের প্রবল ইচ্ছাই তাঁদের সামনে নতুন সম্ভাবনার দার উন্মুক্ত করবে আশা করি ।
আমাদের সমাজে সচ্ছল মানুষের অনেকেই দানের উপযুক্ত খাত খুঁজে পেতে চান । দেশে দারিদ্রসীমার নীচে বসবাসকারী মানুষের জন্য তৈরি উল্লিখিত ‘সমতা পেনশন স্কিম’ সেই অভাব পূরণ করতে পারে । অনেকে এই দরিদ্র শ্রেণির মানুষের পেনশন স্কিমের মাসিক চাঁদা পরিশোধে এগিয়ে আসবেন । আসলে প্লাটফর্মটাই আসল । ‘সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি’র আওতায় দেশের সর্বস্তরের মানুষের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার জন্য সঞ্চয় বা দানের নির্ভরযোগ্য একটি কাঠামো তৈরি হোল- এটাই অনেক বড় কথা । বিভিন্ন ভাবে এই কাঠামো ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে । ‘সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি’এদেশের সাধারণ মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভুমিকা রাখবে – এই প্রত্যাশা আমাদের সকলের ।
লেখকঃ সাবেক মহাপরিচালক (গ্রেড -১)
এনজিও বিষয়ক ব্যুরো, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।
১৮ আগস্ট, ২০২৩।