avertisements 2

সন্তানহারা আর্তনাদ

‘আমার মেয়ের কষ্ট সহ্য করতে পারছি না’

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:০০ এএম, ২২ জুলাই,মঙ্গলবার,২০২৫ | আপডেট: ০৫:৫৭ এএম, ২২ জুলাই,মঙ্গলবার,২০২৫

Text

ছবি: সংগৃহীত

‘আমার মেয়ের সব পুড়ে গেছে, তোমরা কেউ তার জ্বলা বন্ধ করো। আমি আমার মেয়ের কষ্ট সহ্য করতে পারছি না। আমার বুকটা খালি হয়ে যাচ্ছে।’  ‘মিস আমার বাচ্চা কই’।  ‘আর একটু পরেই ছুটি হইলে ছেলে বাসায় চলে যেত। আর এখন ছেলে আমার আইসিইউতে।’ এভাবেই সন্তানহারা অভিভাবক আর্তনাদ করছেন।

ঢাকার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভবনে বিমান বাহিনীর উড়োজাহাজ বিধ্বস্তের ঘটনায় জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটসহ বিভিন্ন হাসপাতালে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীকে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের বেশির ভাগই দগ্ধ বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকরা।

এখন পর্যন্ত ১৯ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। সোমবার বিকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে সাংবাদিকদের এ কথা জানান ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামাল। 

ইয়াসমিন আক্তার নামে এক অভিভাবক জানান, তার পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ে নুরে জান্নাত উষা বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় পুড়ে গেছে।  তিনি আরও জানান, তার দুই ছেলে-মেয়ে। মেয়ে মাইলস্টোনে পড়ে। 
 
বিকালে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের তৃতীয় তলায় কক্ষের বাহিরে ছেলেকে জড়িয়ে আর্তনাদ করতে করতে বলেন, ‘আমার মেয়ের সব পুড়ে গেছে, তোমরা কেউ তার জ্বলা বন্ধ কর। আমি আমার মেয়ের কষ্ট সহ্য করতে পারছি না। আমার বুকটা খালি হয়ে যাচ্ছে।’

হাসপাতালে মায়ের পাশে বসে ছিল ছেলে তাহমিন ইসলাম রোহান।  সে বলে, প্রতিদিনের মতো আজকেও বোনকে স্কুল থেকে আনতে যাই। গিয়ে দেখি স্কুলে বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। পরে ক্লাসরুমে গিয়ে খুঁজে দেখি বোনকে পাচ্ছি না। পরে ভেতর থেকে তাকে খুঁজে বের করে দেখি বোনের শরীর পুড়ে গেছে।  সঙ্গে সঙ্গে তাকে উত্তরার লুবনা হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখান থেকে পরে ঢাকা বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নিয়ে আসি।’

দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাজ্জাদ সাদী মা স্কুলের মূল ফটকে মোবাইল ফোনে কান্নার স্বরে কথা বলছিলেন।   কাঁদতে কাঁদতে বার বার জিজ্ঞেস করছেন, ‘মিস আমার বাচ্চা কই’।

তিনি আরও বলেন, ‘আমার ছেলের প্রিটেস্ট পরীক্ষা চলছে। ওর কাছে ফোন নেই, এতটা সময় হয়ে গেল কিন্তু ও কোনো খবরও দেয়নি। আমি কোনো রকমে এসেছি। ওর ক্লাস টিচারকে ফোন করেছি তিনি কিছু জানেন না। ওর মিসরাও কোনো খবর দিতে পারেননি।’

আরেক মা বিলাপ করে মেয়েকে খুঁজছেন আর বলছেন, ‘আমার মেয়ে কোথায়? আমার মেয়েকে ফিরিয়ে দিন।’

পারুল নামে এই অভিভাবক জানান, তার মেয়ে নুসরাত আক্তার উত্তরার দিয়াবাড়ী এলাকায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী।  মেয়ের ক্লাস শুরু হয় সকাল ৮টায়, শেষ হয় দুপুর ১টায়।
এরপর কোচিং চলে বিকাল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত। তাদের বাসাও দিয়াবাড়ীতে। স্কুলের পাশের মেট্রো রেল ডিপোতে তিনি সন্তানের জন্য অপেক্ষা করছিলেন।

ঘটনাস্থলে থাকা এক অভিভাবক গণমাধ্যমকে জানান, তিনি তার ছেলেকে খুঁজে পাচ্ছেন না। তার সন্তানের বয়স, কোন শ্রেণিতে পড়ে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পাবেন না ভাই, অনেক খুঁজছি। আপনারা পাবেন না।

সারা শরীর পুড়ে যাওয়া ১১ বছর বয়সী আরিয়ানের যখন জরুরি বিভাগের ভেতরে চিকিৎসা চলছিল, বাইরে বসে তার মা মনিকা আক্তার আঁখি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘আল্লাহ আমার সন্তানরে আমার কাছে ফিরাইয়া দেও।’

তিনি আরও বলেন, সকাল পৌনে আটটায় স্কুলে গেছে। দেড়টায় ছুটি হওয়ার কথা ছিল, এরপর দেড়টা থেকে সাড়ে তিনটা পর্যন্ত কোচিং। সকালে ছেলেরে খাবার দিয়া দিছি, এরমধ্যে এই ঘটনা ঘটল।’

স্কুলের কাছেই তাদের বাসা, দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ছেলের খোঁজে স্কুলে ছুটে যান বলে জানিয়েছেন আঁখি; এরপর গিয়ে ওই মা ছেলেকে দগ্ধ অবস্থায় পান।

সেখান থেকে তাকে প্রথমে বাংলাদেশ মেডিকেলে নেওয়া হয়। ওই হাসপাতাল থেকে আরিয়ানকে বার্ন ইনস্টিটিউটে পাঠিয়ে দেয় উন্নত চিকিৎসার জন্য।

সপ্তম শ্রেণির শায়ানের শরীরের বেশিরভাগ অংশ পুড়ে গিয়েছে বলে জানিয়েছেন তার ফুপু রুবিনা আক্তার।

উত্তরা ১০ নম্বর সেক্টরের এই বাসিন্দা বলেন, ‘সকাল বেলা সুস্থ ছেলেটা বাসা থেকে বের হইল, আর এখন হাসপাতালে।’

তৃতীয় শ্রেণি পড়ুয়া জুনায়েদ হাসানের মা ঝর্না আক্তারও জরুরি বিভাগের সামনে কাঁদছিলেন। নয়া নগরের এই বাসিন্দা জানিয়েছেন, তার ছেলেকে আইসিউতে নেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘আর একটু পরেই ছুটি হইলে ছেলে বাসায় চলে যেত। আর এখন ছেলে আমার আইসিইউতে।’
 

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2